17/10/2025
প্রসঙ্গ একাধিক বিয়েঃ একটুখানি পর্যালোচনা
এক,
একাধিক বিয়ের ব্যাপারে কুরআনের আয়াত ও অর্থঃ
وَ اِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِی الْیَتٰمٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ١ۚ فَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ١ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤى اَلَّا تَعُوْلُوْاؕ
আর যদি তোমরা এতিমদের (মেয়েদের) সাথে বে-ইনসাফি করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে সেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বে-ইনসাফির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক পদ্ধতি।(সুরা নিসা:৩)
উল্লিখিত আয়াত নাজিলের কারণ ও প্রেক্ষাপটঃ
১। আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত(ﷺ) নবিজি বলেন,
أَنَّ رَجُلًا كَانَتْ لَهُ يَتِيْمَةٌ فَنَكَحَهَا وَكَانَ لَهَا عَذْقٌ وَكَانَ يُمْسِكُهَا عَلَيْهِ وَلَمْ يَكُنْ لَهَا مِنْ نَفْسِهِ شَيْءٌ فَنَزَلَتْ فِيْهِ : (وَإِنْ خِفْتُمْ أَنْ لَّا تُقْسِطُوْا فِي الْيَتَامٰى
এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একজন এতিম বালিকা ছিল। অতঃপর সে তাকে বিয়ে করল। সে বালিকার একটি বাগান ছিল। তার অন্তরে ঐ বালিকার প্রতি কোন আকর্ষণ না থাকা সত্ত্বেও বাগানের কারণে সে ঐ বালিকাটিকে বিবাহ করে রেখে দিতে চায়। এ সম্পর্কে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (বুখারীঃ৪৫৭৩)
২। কোনো কোনো তাফসিরে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,জাহেলি যুগে বিয়ের নির্ধারিত সীমা ছিল না। একেকজন নয়টি-দশটি বিয়ে করতো। (তায়েফের লিডার গাইলান যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখনো তার নয়জন স্ত্রী ছিল,নওফল বিন মুআবিয়ার পাঁচ জন ছিল)। তখন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে নিজেদের এতিম ও অসহায় আত্মীয়দের দিকে নজর দিতো। আল্লাহ তাআলা এই অবস্থায় সুবিচারের শর্তে সর্বোচ্চ চার বিয়ের অনুমতি প্রদান করে এই আয়াতটি নাজিল করেন।
কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বা কী কারণে আয়াতটি নাজিল হয়েছে আশা করি বোধগম্য হয়েছে। তবুও বিনা শর্তে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সুস্পষ্টভাবে আয়াতে মহান আল্লাহ শর্তটি উল্লেখ করে দিয়েছেন।তারপরও কী বলা যাবে আল্লাহ তাআলা একাধিক বিয়েকে উৎসাহিত করেছেন?
দুই,
একাধিক বিয়ের ব্যাপারে নবিজি ( ﷺ) এর দুটি উক্তিঃ
১। আবু দাউদের বর্ণনা:
مَنْ كانتْ له امرأتان فمال إلى إحداهما جاء يومَ القيامةِ وشِقُّه مائلٌ
যে ব্যক্তির দুই জন স্ত্রী আছে, কিন্তু তার মধ্যে এক জনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন অর্ধদেহ ধসা অবস্থায় উপস্থিত হবে।(আবু দাউদঃ২১৩৩)
২। তিরমিজির বর্ণনা:
إنَّ عليًّا ذَكرَ بنتَ أبي جَهلٍ فبلغَ ذلِك النَّبيَّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فقالَ إنَّما فَاطِمةُ بَضعَةٌ منِّي يؤذيني ما آذَاها وينصِبني ما أنصبَها
আলি (রা.) দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা পোষণ করেছেন মর্মে নবিজির (ﷺ) কাছে সংবাদ পৌঁছলে তিঁনি বলেন 'ফাতিমা আমার শরীরের অংশ। তাকে যে বিষয় কষ্ট দেয়, সেটি আমাকেও কষ্ট দেয়। অর্থাৎ ফাতেমা কষ্ট পেলে আমি নিজেও কষ্ট পাই....।(তিরমিজিঃ৩৮৬৯)
কী বুঝলেন? নবিজির (ﷺ) এই অবস্থান জানার পর এমন দাবি কী করা যাবে যে, একাধিক বিয়েকে নবিজি ( ﷺ) উৎসাহিত করেছেন?
তিন,
বাস্তবতা ও ফিতরাত:
বাবার দ্বিতীয় বিয়ে সন্তান মেনে নিতে চায় না। স্ত্রী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে চায় না। মেয়ের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে শশুর তথা প্রথম স্ত্রীর পিতা মেনে নিতে পারে না। বোনের স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মানতে পারেনা বোনের ভাই-বেরাদর।
মন থেকে এই মানতে না পারাটি বাস্তবতা ও ফিতরাত।হযরত ফাতেমা (রা.) এই ফিতরাতের কারণেই হযরত আলি (রা) এর দ্বিতীয় বিয়ে মানতে পারেননি। কষ্ট ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে নবিজিও (ﷺٍ) হযরত আলী (রা.)কে নিষেধ,অপছন্দ এবং নিরুৎসাহিত করেছেন।
পরিশেষে বলিঃ
নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইসলাম প্রয়োজনে শর্তের আলোকে একাধিক বিয়েকে জায়েজ করেছে। কিন্তু একাধিক বিয়েকে কখনো উৎসাহিত করেনি।