17/07/2025
“নাপা” — বাঙালির জাতীয় ঔষধ!
বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের ওষুধের বাক্সে যদি একটি ওষুধ সবসময় জায়গা করে নেয়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে “নাপা”। জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি, ঠান্ডা এমনকি অজানা অস্বস্তিতেও অনেকের প্রথম হাত বাড়ানো হয় এই নাপার দিকেই। তাই অনেকেই মজা করে বলেন — “নাপা যেন বাঙালির জাতীয় ঔষধ!”
নাপা কী?
নাপা একটি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, যার প্রধান উপাদান Paracetamol বা Acetaminophen। এটি সাধারণত ব্যথা কমানো ও জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এটি “নাপা” নামে বাজারজাত করে এবং এই নাম এতটাই জনপ্রিয় যে অনেকেই প্যারাসিটামল বলতে সরাসরি “নাপা” বুঝেন।
জনপ্রিয়তার কারণ:
১. সহজলভ্যতা: দেশের প্রতিটি ফার্মেসিতে নাপা পাওয়া যায়।
২. মূল্য সাশ্রয়ী: দাম কম হওয়ায় সব শ্রেণির মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. বহুমুখী ব্যবহার: মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, দাঁতের ব্যথা, ঠান্ডাজনিত জ্বর – সব কিছুরই এক সহজ সমাধান যেন নাপা।
৪. সামাজিক প্রভাব: কেউ জ্বরাক্রান্ত হলে আশপাশের মানুষ আগে নাপা খাওয়ার পরামর্শই দিয়ে থাকেন।
নাপা নিয়ে বাঙালির আবেগ:
নাপা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিম, ট্রল, হিউমার ছড়িয়ে পড়েছে। কারও মাথাব্যথা হলে বন্ধু বলে — “দোস্ত, একটা নাপা খেয়ে নে”। আবার কেউ যদি খুব বেশি উদ্বিগ্ন বা দুশ্চিন্তায় থাকে, তখনও মজা করে বলা হয় — “নাপা খাও, সব ঠিক হয়ে যাবে”।
সতর্কতা ও বাস্তবতা:
☞যদিও নাপা একটি নিরাপদ ওষুধ হিসেবে পরিচিত, তবুও অতিরিক্ত গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে।
☞দিনে ৪ গ্রাম বা তার বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
☞বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ওজন অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ জরুরি।
☞দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নাপা গ্রহণ করা উচিত নয়।
নাপা শুধু একটি ওষুধ নয়, বরং বাঙালির জীবনে এটি একটি "কমন সেন্স মেডিসিন"। যেমন পানি, চা কিংবা ভাত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ — তেমনি নাপাও হয়ে উঠেছে “পারিবারিক ডাক্তার”। তবে এই ভালোবাসার মাঝেও সচেতনতার চর্চা জরুরি। কারণ, ওষুধ কখনওই আবেগের বিষয় নয় — বরং এটি বিজ্ঞানের বিষয়।
নাপা আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ হয়ে থাকুক, তবে হোক সচেতনতার সঙ্গে।
✍️ মো. রুহুল আলম রনি