08/08/2025
এডভোকেট শিশির মনির কে খোলা চিঠি দিলেন জমিয়ত নেতা জমিয়ত নেতা
নাজমুল ইসলাম জাহিদ
আসসালামু আলাইকুম
এড. শিশির মনির ভাই আশাবাদী ভালো আছেন।
কাম্য ও তা।
১.
শ্রদ্ধেয় অ্যাডভোকেট শিশির মনির ভাই!
আপনার যোগ্যতায় দক্ষতায় এবং রাজনীতিতে আপনি শাল্লা দিরাই সম্ভাবনাময় এক নাম। আপনার উদ্যমী রাজনীতি, সামাজিক উন্নয়নমূলক অনেক কার্যক্রম, জনসম্পৃক্ততা অবশ্যই আশা জাগানিয়া। এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে অবশ্যই দিরাই শাল্লাবাসী ভালো কিছু দেখতে পারবে আশাবাদী।
২.
শ্রদ্ধেয় দ্বীনি ভাই!
আপনাকে ভুলে গেলে চলবে না আপনি একজন ইসলামিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মানুষ আপনার কাছে ভিড়ে ইসলামের স্বার্থে ইসলামের পক্ষে থাকার স্বার্থে।
আপনার থেকে যখন অনৈসলামিক নাজায়েজ,হারাম কাজ প্রকাশ পায় এবং তা প্রকাশ্যে সমাজে বিস্তার করে। আপনি সেটার উদ্যোক্তা হয়ে সমাজের নরমালাইজ করেন। তখন হাজারো মুসলিম হৃদয়ে আঘাত হানে আমার মতো সাধারণ মুসলমান ব্যতীত হয়। আপনি একজন ইসলামিক ব্যক্তি হিসেবে কোরআনের পক্ষের লোক হিসেবে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।
৩.
আজ ৮/৮/২৫ ইং পবিত্র জুমআ( শুক্র) বার।
নিঃসন্দেহে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন।
এই শ্রেষ্ঠ দিনে আপনি একটি অনৈসলামিক নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা খেলা সুনামগঞ্জ ২ আসনে জাময়াতের এম পি পদপ্রার্থী কর্তৃক আয়োজন করা হয়েছে দেখে সত্যিই ব্যথিত হয়েছি।
৪.
শ্রদ্ধেয় ভাই!
ইতিপূর্বে বিগত কয়েকমাস পূর্বে আপনার পক্ষ থেকে শাল্লা দিরাই এর বিভিন্ন ইউনিয়নে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা ও সম্পন্ন হয়েছে।
আজ আপনি নৌকা প্রতিযোগিতা উদ্ভোদনী বক্তব্যে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে লাঠি ও হাডুডু ইত্যাদি খেলার প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করবেন বলে এড. শিশির মনির মিডিয়া সেল এর লাইভ বক্তব্যে ব্যক্ত করেছেন।
৫.
প্রিয় দ্বীনি ভাই!
আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে জানতে চাই,
উপরে বর্ণিত খেলাগুলো প্রচলিত নীতি অনুসারে শরীয়তে সম্পূর্ণ অবৈধ হওয়া সত্বেও আপনি জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল ও প্রার্থী হিসেবে এসমস্ত আয়োজন প্রকাশ্যে গোনাহের সাথে তাওহিদী জনতাকে জড়ায়ে কোন স্বার্থে বা কাদের স্বার্থে করে যাচ্ছেন?
আশাকরি জবাব দিবেন।
আমি আপনার জবাবের অপেক্ষায় রইলাম।
৬.
জনাব, শিশির মনির ভাই!
আপনি ও আপনার দলের দায়িত্বশীলবৃন্দ বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন।
আপনাদের এই স্বপ্নকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধুবাদ জানাই।
কিন্তু প্রশ্ন হলো বর্ণিত অবৈধ খেলাগুলো আপনার / আপনাদের ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোনো সহায়ক কি?
এগুলোই কি আপনার/ আপনাদের ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার নমুনা?
যদি তাই হয়, তাহলে আপনার বা আপনাদের জন্য করুণা হয় ভাই!
৭.
শ্রদ্ধেয় ভাই!
আপনি বা আপনার সমর্থক যে কেহ বলতে পারেন মিডিয়া এগুলো না লিখে উনার সাথে সাক্ষাতে বা তার দলের দায়িত্বশীল কাহারো সাথে বিষয়টি আপনি নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন।
সে হিসেবে বলছি শুনুন ইতি পূর্বে ফুটবল খেলার প্রতিযোগীতার সময় এবং আজ থেকে ৪- ৫ দিন পূর্বে উনার কর্মী এবং নির্বাচনী মাঠের একাধিক দায়িত্বশীলের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে বলেছি, যে এড. শিশির মনির ভাইকে আমার সালাম জানিয়ে নিম্নোক্ত ফতওয়াটি পাঠিয়ে বলবেন তিনি যেনো ঘোষিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগাটি মুলতবি ঘোষণা করেন এমর্মে আমি বিনীত অনুরোধ করছি।
আমার বিশ্বাস তাঁরা এই সংবাদ এড. শিশির মনির ভাই পর্যন্ত আমার অনুরোধ বার্তা পৌঁছিয়েছে।
এতদসত্বেও তিনি ঘোষিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা মুলতবি না করে উদ্ভোদনি বক্তব্যে আরও এরকম অনৈসলামিক খেলার আয়োজন করবেন বলে তাঁর বক্তব্যে ব্যক্ত করেছেন। যা শুনো রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি।
৮.
প্রিয় দ্বীনি ভাই!
উক্ত খেলাগুলো যেহেতু ইসলামি বিধি মোতাবেক নাজায়েজ, অবৈধ সেহেতু এমন খেলার আয়োজন করাকে
শরীয়তের সাথে তামাশা করা নামান্তর নয়কি?
যেহেতু আপনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন স্বপ্নদ্রষ্টা।
৯.
এড. শিশির মনির ভাই!
আমি এখনো আশাবাদী আপনি এমন প্রকাশ্যে অবৈধ কাজের প্রতিযোগিতা থেকে বেড়িয়ে আসবেন।
১০.
জনাব আব্দুল জলিল সাহেব!
সাবেক ইমাম শ্যামারচর মসজিদ
আপনার সভাপতিত্বে এমন একটি অবৈধ কাজ হয়েছে জেনে খুবই মর্মাহত হলাম।
১১.
প্রিয় ভাই!
আপনার বা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে
প্রচলিত নৌকা বাইচ শরীয়তে অবৈধতার নিম্নে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি লেখা নিম্নে দেয়া হলো।
#উত্তর :
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা খেলা খেলতে ও দেখতে বিবিধ সমস্যা রয়েছে। যেমন
(১) অধিকাংশ ম্যাচ জুয়া এবং হারাম চুক্তির সাথে সম্পৃক্ত। (২) এর মধ্যে পর্দাহীনতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার রয়েছে।
(৩) এর মধ্যে মহামূল্যবান সময়ের অনর্থক অপচয় রয়েছে। নিজের মস্তিষ্ককে এমন অনর্থক কাজে ব্যস্ত না রেখে, এমন কাজে ব্যস্ত রাখা উচিত যা উভয় জগতের জন্যই অধিক কল্যাণকর হবে। তাই কোন মুসলিম নারী-পুরুষের জন্যই নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখা জায়েয নয়। বরং নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখা অপরিহার্য যা উভয় জগতের জন্যই কল্যাণকর হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৬৮৪৪)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, এমন ম্যাচ যেগুলো অর্থ অথবা পুরস্কারের জন্য খেলা হয়ে থাকে সেগুলো হারাম। কেননা এগুলো হারাম জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। শরী‘আত অনুমোদিত খেলা ছাড়া অন্য যে কোন খেলার জন্য বিনিময় বা পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েয নয়। আর ইসলাম অনুমোদিত খেলাগুলো হল: ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা, উটের দৌড় প্রতিযোগিতা এবং তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা। সুতরাং জেনেশুনে এই ধরনের পুরস্কার গ্রহণের খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এবং দর্শন করা উভয়ই হারাম। কারণ এই ধরনের খেলায় উপস্থিত হওয়াটা তাকে সমর্থন করার শামিল’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৫/২৩৮ পৃ., ফৎওয়া নং-১৮৯৫১)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এগুলো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সংকীর্ণ পোশাক পরিধান করে অথবা উরু উন্মুক্ত করে খেলাধুলা করা জায়েয নয়। অতএব তা দর্শন করাও নাজায়েয’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৪/৪৩১ পৃ.)।
দ্বীন ইসলাম শরীর চর্চা ও সাময়িক বৈধ বিনোদনের জন্য শর্তসাপেক্ষে কিছু খেলাকে জায়েয করেছে৷ যেমন ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, وسائر اللعب، إذا لم يتضمن ضررا، ولا شغلا عن فرض، فالأصل إباحته ‘এমন প্রত্যেক খেলা, যা শারীরিকভাবে কোন ক্ষতিসাধন করে না এবং ধর্মীয় কাজেও কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, তা বৈধ’ (আল-মুগনী, ১৪/১৫৭ পৃ,)।
এই অনুমতি শুধু সাময়িক বৈধ বিনোদনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি কেউ খেলা-ধুলাকেই জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানিয়ে নেয়, তখন তা হালাল বা বৈধ থেকে হারাম বা মাকরুহের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। নবী (ﷺ) বলেন,
وَكُلُّ شَيْءٍ يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ، إِلَّا رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ، وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ، وَمُلَاعَبَتَهُ امْرَأَتَهُ...
এমন প্রত্যেক জিনিষ যা মানুষকে উদাসীন ও ধর্ম বিমুখ করে তোলে, তা পরিত্যাজ্য৷ শুধু তীরন্দাজী করা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেম বিনিময় করা ব্যতীত’ (আদ-দারিমী, হা/২৪৪৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৩০০, ১৭৩৩৭, সনদ হাসান)।
ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এমন খেলা-ধুলা যা নিষিদ্ধের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিষিদ্ধকরণের কোন কারণও সংঘঠিত হয়নি, তা মুবাহ্ বা অনুমোদনযোগ্য।
কিন্তুু এটি নিন্দিত কাজ, আলেগণ এর উপর সন্তুষ্ট নন, বরং তাঁরা এটা অপসন্দ করেন যে, কোন ব্যক্তি সামাজিক, মানবিক ও সংস্কারমূলক কাজে নিয়োজিত না হয়ে তার মূল্যবান সময় এমন একটি কাজে ব্যয় করে যার মধ্যে ইহকাল ও পরকালের জন্য কোন কল্যাণ নেই’ (আল-মুওয়াফাক্বাত, ১/২০৪-২০৫ পৃ.)
কমেন্টে এড. শিশুর মনির ভাই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উদ্ভোদনী বক্তব্য দেওয়া হলো যা শিশির মনির মিডিয়া সেল থেকে সংগৃহীত।
#উম্মাহ_টেলিভিশন #সংবাদ #জমিয়ত #নেতা #শিশিরমনির