16/09/2025
১৩ বছরের মেয়ের 'পিরিয়ড' ইরেগুলার। বহুদিন ধরে পেট ব্যথার যন্ত্রনায় কান্নাকাটি। মা আমাকে বাঁচাও বলে আর্তনাদ। মা কী করলেন?
তার বাবার বাড়ির এক কবিরাজকে ব্যাপারটা জানালো। কবিরাজ সম্পর্কে মহিলার ভাই হয়।
এই কবিরাজ জানালো, 'মেয়েটার উপর জ্বীনের আছড়। তার চিকিৎসা করতে হবে।' শুরু হলো চিকিৎসা। কিন্তু মেয়ে সুস্থ হয় না।
এবার কবিরাজ জানালো, 'জ্বীনকে চিরতরে দূর করার সর্বশেষ একটাই উপায়। বড় কোন নদী পার হয়ে যেতে হবে। বড় কোন নদী পেরিয়ে গেলে সব সময় সাথে থাকা জ্বীন আর পিছু নিতে পারে না। ভয় পায়। এরপর সেই নদীর পানি দিয়ে গোসল করালে জ্বীন আর মেয়ের উপর ভর করতে পারবে না।'
মেয়ের মাকে বললো, আশেপাশে বড় নদী বলতে, যমুনা নদীই আছে।যমুনার পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
মেয়ের মা পড়লো বিপাকে। মেয়ের বাবা প্রবাসে থাকে। কবিরাজি চিকিৎসার কথা কেউ জানে না। সন্দেহ না করে তাই, মেয়েকে নানীর বাসায় কিছুদিন বেড়ানোর কথা বলে, মেয়েকে কবিরাজের সাথে যমুনা পেরোতে পাঠিয়ে দিলেন।
নিজে গেলেন না। সংসার ও অন্যান্য সন্তানের দেখাশোনা করতে হবে তাই। শ্বশুর শাশুড়ি যদি সন্দেহ করে? এই ভয়ে।
Guess what?
কবিরাজ মেয়েকে নিয়ে সেদিন ফেরার কথা বললেও আর ফিরেনি। ঢাকায় নিয়ে পালিয়ে এসেছে। সপ্তাহ খানেক ধরে মিসিং। পরে ঢাকা থেকে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। মেয়েটির সাথে কী বাজে ঘটনা ঘটেছে তা আর নাইবা বলি।
শাস্তি না দিয়ে ব্যাপারটা পুরোপুরিভাবে হজম করেছে মেয়ের মা এলাকায় জানাজানি ও মান সম্মানের ভয়ে। তারপরেও কী ঘটনা গোপন রাখা যায়?
এতক্ষণ যেই ঘটনাটা বললাম, সেটি প্রায় বিশ বছর আগের কথা। পরিচিত এক পরিবারের সাথে ঘটা।
(২)
ছবিতে যেই মা-মেয়েকে দেখছেন। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ডান পাশের ছবিতে থাকা কবিরাজ মোবারক।
ঝাড়ফুঁক করার সুবাদে মোবারকের অবাধ যাতায়াত ছিলো সুমাইয়াদের বাসায়। ঠিক কী কারণে ঝাড়ফুঁক করতো। তা কোথাও পাইনি। কেউ জানলে বলবেন।
তো, গত ৮ সেপ্টেম্বর ঝাড়ফুঁকের সুবাদে ঐ বাসায় একবার ঢুকে মুবারক। এরপর পানি পড়া ছিটিয়ে চলে যায়। আবার এগারোটায় আসেন।
এবার সুমাইয়াকে রুমে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে মুবারক। তার মা টের পেয়ে বাঁধা দিলে, সুমাইয়াকে এক ঘরে আটকে রেখে, ওর মা তাহমিনা বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।
এরপর আবার সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সুমাইয়া বাঁধা দেয়। এতে রেগে গিয়ে সুমাইয়াকেও গলাটিপে হত্যা করে মুবারক।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর মা-মেয়ের মৃত্যুর জন্য প্রথমেই দায়ী তার মা। তাদের অন্ধবিশ্বাস। যেই অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে মোবারকের মত লোকেরা এই ঘটনা ঘটাতে পারে।
অবাক করা বিষয়, গত দুই বছর ধরে মোবারক পলাতক। তার নামে মাদ্রাসার দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার নাকি মামলাও ছিলো। এই মোবারককে নিয়ে ৩ অগাস্ট একটি পেজ থেকে পোস্ট করেছিলো দেখলাম। আফসোস, এই পোস্টটি যদি সুমাইয়ার চোখে পড়তো। তাহলে হয়তো ওর পরিবার বেঁচে যেত।
অথচ দেখুন দুই বছর আগে পালিয়ে যাওয়া মোবারক ঠিকই পালিয়ে অন্য স্থানে বসতি গড়েছে এই দেশের ভঙ্গুর আইন ব্যবস্থার কারণে।
দেখুন আমি -
আমার কাছে ইসলাম বলতে, পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের বাইরে আর কিছু নেই। আমি এর বাইরে আর কিছুই বিশ্বাস করতে ইচ্ছুক নই।
অনলাইন অফলাইনে আমি পীর, কবিরাজ, জ্বীন ভূতের আঁছড় ছাড়ানো , বান মারা, কাগজ পুড়াইয়া রুকাইয়া করা, কবর থেকে পুতুল উঠায়, কলাগাছে বান মারে। কত কী ধরণের ভিডিও দেখি। এসব কিছুই আমি বিশ্বাস করি না।
অন্তত যারা এই কাজগুলোকে জনকল্যানমূলক কাজ বলে বেড়ায় এবং এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে ফেলেছে। আয় উপার্জনের জন্য। তারা ১০০% বাটপার।
আমি বা আমার পরিবার অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাবো।
ইসলামের কোন কিছু না বুঝলে -
আমি শিক্ষিত হলে কুরআন হাদিসের কিতাব বের করে তা থেকে সমাধান দেখবো। তারপরেও না বুঝলে কিংবা পড়াশুনা না জানলে মসজিদের ইমাম সাহেবের/আলেমের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করবো। উনি এটার সুন্দর জবাব দিবেন।
আমি কেন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিবো? আমি কেন পীরের মুরিদ হবো? মাথায় ঢুকে না।
২০২৫ সালে এসেও যদি আমরা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত থাকি। তাহলে আমাদের এই অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মভীরুতার উপর ভর করেই ভন্ডরা ফুলেফেপে উঠবে।
আর আপনারাও এভাবে আর্থিক ও শারীরিকভাবে হবেন ক্ষতিগ্রস্থ। হারাবেন প্রাণ।