
02/08/2025
'চালাক মা বনাম তালাক কন্যা'
নোয়াখালীর এক মফস্বল শহরে বসবাস করতেন এক প্রভাবশালী নারী— আতরজান বেগম। কথায় ধুন্ধুমার, চাতুর্যে অদ্বিতীয়া, আর আত্মগর্বে ভরপুর এই নারী নিজেকে সমাজের "চালাক মহিলাদের আদর্শ" বলে ভাবতেন।
তাঁর একমাত্র মেয়ে ছবিরুন নাহার— দেখতে যেমন মিষ্টি, তেমনি শিক্ষায় এগিয়ে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই মা'র মুখের বুলি শুনে শুনে মেয়েটির মনের ভিতরে গড়ে ওঠে এক অদৃশ্য অহংকার আর বেপরোয়া আত্মবিশ্বাস।
আতরজান সবসময় মেয়েকে বুঝিয়ে দিতেন:
> "দেখ মা, শ্বশুরবাড়িতে কেউ যদি তোকে একটুও কষ্ট দেয়, সাথে সাথে দাঁতভাঙা জবাব দিবি। মাথা নিচু করবি না। আমরা কি কারো চেয়ে কম নাকি?"
ছবিরুনের বিয়ে হলো পাশের গ্রামের সরল স্বভাবের স্কুলশিক্ষক আব্দুর রউফ-এর সঙ্গে। রউফ ছিলেন কম কথা বলা, ভদ্র, পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার মা-বাবাও শান্ত ও ধর্মপরায়ণ।
কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ছবি শুরু করল কথায় কথায় ঠান্ডা আগুন ছড়ানো। একদিন ডাল পাতলা হওয়ায় রান্নাঘরে গিয়ে পুরো হাঁড়ি উলটে দিলো। আবার একদিন স্বামী অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি করায় দরজা আটকে রেখে রউফকে দাঁড় করিয়ে রাখল একঘণ্টা।
রউফ অনেক সহ্য করেও শান্তির মুখ দেখলো না। কথায় ঝগড়া, চুপ থাকলে বিদ্রুপ। শেষমেশ, মাত্র ছয় মাসেই তালাকের খাতায় নাম উঠল ছবিরুনের।
আতরজান আবার বললেন,
> "ওরা তোকে বুঝতে পারেনি মা, তুই ঠিকই ছিলি। এই যুগে মেয়েরা মাথা নিচু করবে কেন?"
এভাবে ছবি আবার বিয়ে করল— দ্বিতীয়বার এক মুদি দোকানদার মাসুদ মিয়াকে, তৃতীয়বার এক প্রবাসী রবিউল আলমকে।
কিন্তু একই আচরণ, একই মতাদর্শ আর সেই পুরনো 'মা-শিক্ষিত' অহংকার। ফলাফল একটাই— তালাক, তালাক, আর তালাক।
তৃতীয় তালাকের পর একদিন সন্ধ্যাবেলায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছবিরুন। চোখে তখন আর মায়ের শেখানো চালাকির দীপ্তি নেই, আছে শুধু কষ্ট আর অনুতাপ।
সে নিজেকেই জিজ্ঞেস করল,
> "সব দোষ কি সত্যিই ওদেরই ছিল?
যদি একটু সহনশীলতা, একটু নম্রতা, একটু ভালোবাসা শিখতাম, তাহলে কি এমন পরিণতি হতো?"
উপসংহার: শিক্ষা যেখানে অহংকার নয়, মানবিকতা শেখায়
এই গল্পের শিক্ষা একটাই—
> চালাকিতে নয়, সম্পর্ক টিকে ভালোবাসায়। টিকে ধৈর্যে, নম্রতায় আর বোঝাপড়ায়।
যদি মা-বাবারা মেয়েদের চাতুর্য নয়, মানুষের মতো মানুষ হতে শেখান, তবে বিয়ে হয় ভালোবাসার বন্ধন— তালাকের নোটিশ নয়।
আপনার সন্তানকে আত্মরক্ষা শেখান ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে শিখান সহনশীলতা, আত্মসম্মান আর সম্পর্কের মর্যাদা।
জীবন যুদ্ধ নয়, জীবন ভালোবাসা।
CP