23/04/2025
লোভ-লালসার ফাঁদে যেন না পড়ি
ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে যাতে লোভ, লালসা ও খ্যাতি যেন আমাদেরকে মোহাবিষ্ট না করে। রাসূল সা.-এর সীরাতে, সাহাবিদের এবং পরবর্তী সালাফদের জীবনে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, এই উত্তম মানুষগুলো সচেতনভাবে চেষ্টা করতেন, যাতে তারা সম্পদের মোহে না পড়েন।
খ্যাতিমান হওয়ার সাধ যেন তাদেরকে দুর্বল করে না দেয়। অথচ, আমরা আখেরি জমানার যুগে জন্ম নেওয়া মানুষগুলো প্রতিনিয়ত নিজেদের মার্কেটিং করি। বড় করে প্রচার করি। প্রচারমুখিতা আমাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ প্রচারের সাথেই জড়িত নিজের যশ, খ্যাতি, সামাজিক সম্মান ও উপার্জন।
কিন্তু বৈষয়িক এই খ্যাতি পাওয়ার খায়েশ যে ক্রমান্বয়ে আমাদের নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সমাজের ভেতর এমনকি আন্দোলনের কাঠামোর ভেতরও ফিতনা-ফ্যাসাদ বাড়াচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা যেন উদাসীন রয়ে যাচ্ছি। ভাবতে অবাক লাগে, আমরা বিতর্ক নিরসন নয়; বরং বিতর্ক তৈরি করছি শুধু আলোচনায় থাকার জন্য।
কা'ব ইবনে মালিক আল-আনসারী রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়েকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়ার পর তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, ধর্মের ক্ষেত্রে কারো সম্পদ ও খ্যাতিমান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিসাধন করে। (তিরমিজি : ২৭৩৬)
নেকড়ে হলো এমন একটি প্রাণী যা যতটুকু না খায় তার চেয়ে বরং বেশি ধ্বংস করে। ইবনে রজব রহ. বলেছেন, “যদি কেউ দুনিয়াবি জীবনে হালাল আয় করে এবং হালাল পথেই ব্যয় করে। তারপরও যদি সে তার সময়ের অধিকাংশই আরো আরো বেশি হালাল উপার্জনের জন্য ব্যয় করে, তাহলে প্রকারান্তরে সে দুটো লোভই করল। কারণ, সে আয় বাড়াতে ব্যস্ত হয়েছিল আর তেমনটা হয়েছিল সম্পদ বাড়ানোর মোহ থেকেই ।”
আমরা দুনিয়াতে লোভ-লালসার পেছনে যে সময়টুকু ব্যয় করি, তা সামান্য মনে হলেও পরকালে এ অপব্যয়টাই আমাদের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে যাবে। আমরা দুনিয়াতে যাই উপার্জন করি না কেন, তা আমাদের খাবারের মতন।
যত দামি খাবারই খাই না কেন, তা যেমন বেশিক্ষণ পেটে থাকে না। দুনিয়ার কাজকর্মও তাই। আমাদের এমন কিছুর দিকে বরং মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, যার প্রতিদান আখেরাতে আমরা পাব ।
বই- ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য
লেখক- আলী আহমাদ মাবরুর