02/10/2025
কুয়েত টাওয়ারসের সবুজ আলো
সন্ধ্যা নেমে আসতেই কুয়েত টাওয়ারস তার রাতের রূপ ধারণ করল। প্রধান টাওয়ারটি যেন একটি দৈত্যাকার সবুজ স্ফটিক, আর তার পাশে ছোটটি জ্বলছে লালের আভায়—ঠিক যেন মরুর বুকে ফুটে ওঠা এক জোড়া আধুনিক মিনারেট।
এই টাওয়ারগুলির মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গল্প। কুয়েতের মানুষ মনে করে, তারা কেবল পানি সংরক্ষণের জলাধার বা পর্যটকদের আকর্ষণ করার কেন্দ্র নয়; তারা যেন দেশের আত্মা ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক।
আজ থেকে বহু বছর আগে যখন এই টাওয়ারগুলো তৈরি হয়, তখন এটি ছিল আধুনিকতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক। কিন্তু ১৯৯০ সালের যুদ্ধের সময়, এই টাওয়ারগুলো ইরাকি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। দিনের পর দিন তারা অন্ধকারে ডুবে ছিল, তাদের কাঁচের গায়ে লেগেছিল আঘাতের চিহ্ন।
মুক্তিযুদ্ধের পর, যখন কুয়েতের পুনর্গঠন শুরু হলো, তখন সবার আগে এই টাওয়ারগুলোকেই মেরামত করা হলো। প্রতিটা ভাঙা নীল ও সবুজ এনামেলড টাইলস যখন আবার জোড়া লাগলো, তখন তা কেবল একটি ভবনকে মেরামত করল না, বরং একটি জাতির দৃঢ় সংকল্প আবার প্রতিষ্ঠা করল।
এখন রাতের বেলা যখন প্রধান টাওয়ারটি তার সবুজ আলোয় ঝলমল করে, তখন কুয়েতের মানুষ ভাবে, এই আলো শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি তাদের স্বাধীনতার আলো। এটি অতীতের কষ্ট, বর্তমানের শান্তি এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের প্রতীক।
ঠিক টাওয়ারের নিচে, T.G.I. Friday's নামের রেস্তোরাঁর উজ্জ্বল লাল আলোয় কিছু তরুণ-তরুণী আড্ডা দিচ্ছে। তাদের হাসি-খুশির শব্দ ভেসে আসছে রাতের বাতাসের সাথে। একপাশে বালির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক বাবা আর তার ছোট্ট ছেলে। ছেলেটা টাওয়ারের দিকে আঙুল তুলে জিজ্ঞেস করে, "বাবা, এত উঁচু কেন?"
বাবা হাসেন। তার মনে পড়ে যায় যুদ্ধের পরের সেই কঠিন দিনগুলোর কথা। তিনি ছেলেকে বলেন, "ওরা শুধু উঁচু নয়, বাবা। ওরা আমাদের দেশের গল্প, আমাদের সাহস আর আমরা কতটা এগিয়ে এসেছি তার ইতিহাস। রাতের বেলা যখন এই আলো দেখি, তখন মনে হয়, সব অন্ধকার পেরিয়ে আমরা সবসময়েই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকব।"
সেই রাতে, কুয়েত টাওয়ারসের সবুজ আলো আরব উপসাগরের জলের ওপর তার প্রতিচ্ছবি ফেলে, আর শহরের প্রতিটি কোণে যেন সেই একই বার্তা পৌঁছে দেয়—আশা কখনো মরে না, সে নতুন রূপে ফিরে আসে।
কুয়েত টাওয়ারস (Kuwait Towers) কুয়েতের আধুনিকতা, স্থাপত্যের সৌন্দর্য এবং জাতীয় গর্বের এক অসাধারণ প্রতীক। আপনি কি এর ওপরের ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ বা অবজার্ভেশন ডেক থেকে কুয়েত শহর দেখতে আগ্রহী?