
02/08/2024
🇧🇩🇧🇩🔴🔴
লটারি জিতেছেন কখনো?
মানুষ লটারি কেনে কেনো জানেন!
জানবেন তো অবশ্যই।
ছোটবেলায় লটারি কিনতাম ১০টাকায়। তারপর রেজাল্টের দিনের পত্রিকা কিনতাম,টিভির পর্দায় চোখ রাখতাম, কত নিখুতভাবে যে মিলাতাম নিজের টিকেটের নাম্বার আর সেই পত্রিকার নাম্বার!
প্রতিবারই আমার এত চেষ্টা,এত পরিশ্রম ব্যার্থ হতো।
এমনকি সেই ১০টা টাকাও!
ইশ! পেলে হয়তো লাখোপতি হয়ে যেতাম এক ধাক্কায়। কিন্তু কি আর করার! আমার ভুল ধারনা ছিলো যে, শর্টকাটে লাখোপতি বনে গেলে বসে বসে খাবো,পড়াশোনা করা লাগবেনা আর। 😅😅
লটারি না জিতে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হলো।
ধীরে ধীরে ইন্টার পর্যন্ত আসলাম। পড়াশোনায় ভাগ্য হয়তো লটারির মতো লস প্রজেক্ট ছিলোনা দেখেই দেশের সনামধন্য এক মেডিকেলে চান্স পেলাম পরবর্তীতে।
মেডিকেলে এসে দেখা মিললো ভিন্ন এক লটারির।আলাদিনের চেরাগ বললেও ভুল হবেনা। 🙂
প্রথমে সেটা গ্রহন করতে চাইনি। কিন্তু, সবাই অনেক সিনিয়র বললো- গ্রহন করো এই চেরাগ, তাতেই হতে পারে তোমার জীবনের সফলতা.....
লটারি লোভী বলে কথা! নিয়ে নিলাম।
তবে আশ্চর্য এক বিষয় দেখলাম, এতে তিনবার ঘষা নয় বরং চাটুকারিতাই একমাত্র কার্যকরী।
মুখে নাকি আমাকে ছোটবেলায় মধু দেয়া হয়েছিলো জন্মের পর! সেকারনে আমি আবার এই চাটাচাটি তে বেশ দক্ষ! এবং যাদের উপর প্রয়োগ করি তারা খুব মিষ্টিভাবেই গ্রহণ করে।
তবে, যখন আলাদিন বের হলো, তখন দেখলাম এই আলাদিন স্মার্ট অনেক,মেডিকেলের আলাদিন বলে কথা। আমার অর্ডার না, উলটা ওর অর্ডারই আমাকে শোনা লাগে।
একে একে তার তিনটা আদেশ মেনে গেলাম ক্যাম্পাস লাইফ জুরে।
--- জুনিয়রদের ন্যায়-অন্যায় এর যেকোনো কাজেই অর্ডার দেয়া,জোরপূর্বক তা করানো, আলাদিনের অপছন্দনীয় কিছু করলেই আমি জুনিয়রদের দিতাম আচ্ছা ক ঘা! কতবার রুমে ডেকে র্যাগ দিয়েছি,টিভি রুমে পরীক্ষার আগে মেন্টাল টর্চার করেছি। জুনিয়র রা ভয়ে তটস্থ থাকতো সবসময়।
--- বন্ধুদের উপর প্রচুর বল প্রয়োগ করতাম, কাওকে গুনতাম না,আমার চেয়ে বেশি বুঝে কেও বুঝতেই চাইতাম না, সবসময় বলতাম আমার সাথে লাগতে আসিস না,আলাদিন আছে আমার সাথে।
--- সিনিয়র এর সাথে মারামারি,টিচারকে থ্রেট,আবার কিছু স্পেশাল টিচারের প্রটোকল কত কিছুই না করতাম আলাদিনকে খুশি করার জন্য।
এসবের বিনিময়ে আলাদিন খুশি হয়ে আমাকে একটা উপহার দেয়। সেটা হলো,
--- সম্মানের সহিত কিনা জানিনা, সময়মতো সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে পাশ করা, আর এর মাঝে কিছু তহাকথিত গুরুত্বপূর্ণ দাপুটে পদে আসীন হওয়া!
এটাই ছিলো অর্জন।
-------------------------------
আজ কয়েক বছর হয়ে গেছে৷ ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলো মনে পড়ছে।
ইশশ!................... 😔
কি ভাবছেন?
নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি!
না ভাই। আফসোসের শুরে "ইশশ" উচ্চারন করছি।
কেন জানেন?
সেই ক্যাম্পাসের প্রথম দিন যদি আলাদিনের চেরাগ টা হাতে না নিতাম!
ক্যাম্পাসের ৬টি বছর যদি সাব্জেক্ট গুলো ভালো ভাবে পড়তাম। নিজের "কোয়ালিটি ডেভেলপ" করতাম। নিজের যোগ্যতা বাড়াতাম!
তাহলে আজকের এই দিনে এসে হাসপাতালে আসা "মা"," বাবা","ভাই","বোন" কে চিকিৎসা দেয়ার সময় ভাবতে হতোনা আদও সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছি তো! সুস্থ হবে তো, নাকি মারা যাবে!
এত সংশয় আজ থাকতোনা।
এই ৬বছরে কিছুই শিখতে পারিনি।
"সব অর্জন করলাম, কিন্তু নিজের মূল জিনিসটাই অর্জন করিনি যার জন্য মেডিকেলে গিয়েছিলাম"
আসলে ছোট থেকেই লটারিপ্রেমি তো! জীবনে শর্টকাটে বড় হতে চেয়েছিলাম।
ছোটবেলায় লটারিতে হেরে যাওয়াটা কে ১০টা টাকা লসই ভেবেছিলাম শুধু।
কিন্তু না!!!!
আজকে বুঝি, সেদিন শুধু ১০টাকা হারায়নি। হারিয়েছিলো আমার খবরের কাগজে বৃথা পরিশ্রম, হারিয়েছিলো আমার ভুল আবেগ, হারিয়েছিলো আমার জীবনের মূল্যবান বিষয় সময়!!
সিনিয়রদের তাচ্ছিল্যের স্বীকার হই, যাদের আলাদিন ভাবতাম তাদের কাছে আমার আমি টা ছিলাম একদম টিস্যুর মতো সেটা বুঝতে আর অসুবিধা হয়না।
ব্যাচমেট রা ফোন রিসিভ করেনা, গেট টুগেদারে ডাকেনা।
ক্যাম্পাসে গেলে নতুন জুনিয়রগুলো এই কিছুদিন আগেও ক্যাম্পাসের দাপুটে "আমি" নেতা ভাইটাকে চেনেনা, যারা চেনে সেসব জুনিয়ররা খোজ নেয়না, ভাইয়া কেমন আছি জিজ্ঞেস করেনা! করবে ই বা কি করে,যেসব আচরণ করেছি সেটার জন্য কি আদও জিজ্ঞেস করার যোগ্য আমি!
নিজ থেকে গিয়েই পরিচিত কয়েকজনের খোজ নেই। কথা হয়! কিন্তু, চোখে দেখা যায়না সামান্য সম্মানটুকু ও!
আজ কোনো বন্ধু পাশে নেই,জুনিয়র পাশে নেই। জীবনে ব্যর্থতা ব্যাতিত কোথাও নেই কোনো সফলতা, কেও ভালো বেতনের চাকরি দিতে চায়না- প্রমোশন তো দূরের কথা, এমবিবিএস টা থাকায় চাকরি পেলেও সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারার সংশয় আমাকে তাড়া করে, ইচ্ছেমতো পোস্টিং নিবো কি, আলাদিনের কাছে গিয়ে বললে তাদের উত্তর একটাই-বিসিএস টাই তো হয়নি রে তোর!! 🙂
এফসিপিএস ও দিয়েছি কয়েকবার, বিসিএস দিলাম ৩বার। আর বেশি দিতে পারবোনা হয়তো,বয়স ফুরিয়ে যাচ্ছে। একটাবার ও কোথাও কোনো সুবিধা করতে পারলাম না এই লটারিপ্রেমি টা।
কারন একটাই-- যোগ্যতার বড্ড ঘাটতি,, মানুষের দোয়ার বড্ড অভাব!!! 🥺🥺