08/08/2025
থিসিস কী?
চলুন ছোট্ট একটি গল্প শুনি,
একটা সময়ের কথা। রিফাত নামের এক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়ছিল। স্যার তাকে বললেন,তুমি তোমার পছন্দের একটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো, তথ্য সংগ্রহ করো, অন্যরা কী বলেছে তা জানো, তারপর নিজের মতামতসহ একটা বড় রিপোর্ট লিখো!
Most Accepted Definition of Thesis,
"A thesis is a document submitted in support of candidature for an academic degree or professional qualification presenting the author's research and findings."
— Widely used by universities including Oxford, Harvard, and referenced in academic manuals like APA, MLA, and OECD frameworks.
থিসিস হলো একটি লিখিত গবেষণামূলক প্রতিবেদন, যা একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাগত ডিগ্রি বা পেশাগত যোগ্যতা অর্জনের অংশ হিসেবে জমা দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর তার নিজস্ব গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
অর্থাৎ, থিসিস হলো এমন একটি ডকুমেন্ট যেখানে গবেষক তার নিজস্ব চিন্তা, গবেষণাপদ্ধতি, বিশ্লেষণ এবং প্রাপ্ত ফলাফল একত্রিত করে প্রমাণ করে যে, তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর জ্ঞান ও গবেষণার উপযুক্ততা অর্জন করেছেন।
রিফাত ভাবল আমি যদি গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করি, কেমন হয়?
সে তথ্য নিল, গ্রামে গিয়ে কথা বলল, পুরনো বই ঘাটল, পরিসংখ্যান করল। শেষে সব কিছু মিলিয়ে একটা বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরি করল।এই যে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর চিন্তা, গবেষণা, বিশ্লেষণ ও লিখিত উপস্থাপন এটাই থিসিস।
থিসিস কত প্রকার?
মূলত থিসিস দুই প্রকার
1. ব্যাচেলর/মাস্টার্স থিসিস (Academic Thesis),
শিক্ষা জীবনের শেষ ধাপে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখা হয়।
2. পিএইচডি থিসিস (Doctoral Dissertation),
উচ্চতর গবেষণার সময় মৌলিক নতুন কিছু আবিষ্কার বা যুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়।আবার উদ্দেশ্য অনুযায়ী আরও ভাগ করা যায়,
★বিশ্লেষণধর্মী থিসিস (Analytical)
★তুলনামূলক থিসিস (Comparative)
★বিতর্কমূলক থিসিস (Argumentative)
★সমাধানভিত্তিক থিসিস (Solution-based)
থিসিস করার জন্য কি কি সফটওয়্যার বা টুলস এর কাজ শিখে রাখা উচিত?
1.লেখালেখি MS Word, LaTeX, Google Docs.
2.রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট Zotero, Mendeley, EndNote.
3.ডেটা বিশ্লেষণ SPSS, R, Python, Excel.
4.গ্রাফ ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন Tableau, Origin, Canva.
5.প্লেজারিজম চেক Turnitin, Grammarly.
6.অনলাইন রিসার্চ Google Scholar, JSTOR, ResearchGate.
থিসিস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
1. গভীর জ্ঞান অর্জন, নিজের পছন্দের বিষয়ে গভীরভাবে জানার সুযোগ।
2. গবেষণার হাতেখড়ি,রিসার্চ স্কিল তৈরি হয়।
3. সমালোচনামূলক চিন্তা,নিজের মত প্রকাশ ও যুক্তি তৈরির চর্চা হয়।
4. ভবিষ্যৎ একাডেমিক বা ক্যারিয়ার কাজে লাগে, চাকরি বা পিএইচডিতে প্লাস পয়েন্ট।
5. প্রকাশযোগ্য লেখা তৈরি হয়,জার্নালে প্রকাশ বা সম্মেলনে উপস্থাপন সম্ভব হয়।
থিসিস পেপারের স্ট্রাকচার কেমন হতে পারে?
1. Title Page (শিরোনাম পৃষ্ঠা)
★থিসিসের নাম
★আপনার নাম
★বিশ্ববিদ্যালয়/ইনস্টিটিউটের নাম
★ডিগ্রির নাম ও বিভাগ
★সুপারভাইজারের নাম
★জমাদানের তারিখ
2. Declaration / Certification (ঘোষণা/প্রত্যয়নপত্র)
এটি আপনি বা সুপারভাইজার স্বাক্ষর করে বলেন, এই কাজ আমার মৌলিক!
3. Acknowledgement (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ)
যেসব ব্যক্তি, শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় থিসিস সম্পন্ন হয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
4. Abstract (সারসংক্ষেপ),পুরো থিসিসের ছোট্ট (২০০–৩০০ শব্দ) সারাংশ।
বিষয়, গবেষণার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, ফলাফল ও উপসংহার সংক্ষেপে।
5. Table of Contents (সূচিপত্র),থিসিসের প্রতিটি অধ্যায়ের নাম ও পৃষ্ঠাসংখ্যা।
6. List of Figures and Tables (চিত্র ও সারণির তালিকা,যদি থাকে!
7. Abbreviations (সংক্ষিপ্ত রূপ)
যেসব টার্ম বারবার ব্যবহৃত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত রূপের তালিকা।
মূল থিসিস অংশে সাধারণত কি কি থাকে?
8. Chapter 1: Introduction (ভূমিকা)
★বিষয় নির্বাচনের পটভূমি
★সমস্যার বর্ণনা
★উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
★গবেষণা প্রশ্ন
★থিসিসের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা
9. Chapter 2: Literature Review (সাহিত্য পর্যালোচনা)
★পূর্ববর্তী গবেষণা কী বলেছে?
★কে কী করেছেন?
★কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে?
★আপনি কী নতুন আনতে যাচ্ছেন?
10. Chapter 3: Methodology (গবেষণাপদ্ধতি):
★আপনি কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছেন?
★কোন পদ্ধতি/ডেটা ব্যবহার করেছেন (Quantitative/Qualitative)?
★অংশগ্রহণকারী কারা ছিল?
★যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার বা বিশ্লেষণ কৌশল কী?
11. Chapter 4: Results (ফলাফল উপস্থাপন):
★তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল।
★চার্ট, টেবিল, গ্রাফ ইত্যাদি।
12. Chapter 5: Discussion (আলোচনা):
★ফলাফলের ব্যাখ্যা।
★তা পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে মিলেছে কি?
★ব্যতিক্রম থাকলে কেন?
13. Chapter 6: Conclusion and Recommendations (উপসংহার ও সুপারিশ):
★গবেষণার সারমর্ম।
★আপনি কী শিখলেন?
★ভবিষ্যৎ গবেষণার পরামর্শ।
14. References / Bibliography (তথ্যসূত্র):
আপনি যেসব বই, আর্টিকেল, ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছেন তার তালিকা (APA/MLA ইত্যাদি ফরম্যাটে)
15. Appendices: যদি কাঁচা তথ্য, প্রশ্নপত্র, সাক্ষাৎকার স্ক্রিপ্ট ইত্যা অধ্যায় আলাদা আলাদা পৃষ্ঠা থেকে শুরু করুন।অধ্যায়গুলোর নম্বর দিন (1, 1.1, 2.1 ইত্যাদি)।স্পষ্ট, প্রাঞ্জল ও একাডেমিক ভাষা ব্যবহার করুন।প্রয়োজন হলে চিত্র ও চার্ট যুক্ত করুন।
থিসিস বনাম রিসার্চ?
রিসার্চ হলো একটি প্রক্রিয়া বা কার্যকলাপ,যেখানে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করা হয়।
থিসিস হলো সেই গবেষণার নির্দিষ্ট, একাডেমিক প্রয়োগ,যা সাধারণত ডিগ্রি অর্জনের জন্য লেখা হয়।
তথ্য সংগ্রহ : Aayan Rahman
Follow : ResearchOrbit