26/07/2025
#গল্পঃতোমার_ছোঁয়ায়_বাচি,
#পঞ্চম_ও_শেষপর্ব,
#রিপন_আহমদ
রুমার চোখে এক দাগ চেপে বসেছিল—নির্বিকার একটা বিষাদ। শহরের বুকে একটা ছোট্ট ক্যাফেতে বসে, কফির গ্লাস হাতে নিয়ে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। রিপনের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিলো দু’দিন আগেই, কিন্তু আজ যেন তার কথা আর আসছিল না।
“রিপন কি সত্যিই আমার জীবনের সেই মানুষ?” রুমা ভাবছিলো, “নাকি শুধু আমার একাকীত্ব ভাঙানোর একটা আশা মাত্র?” তার মনটা এলোমেলো।
আরও মিশে যাচ্ছিল সেই স্মৃতি, যখন প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের। কেমন এক অদ্ভুত সম্পর্ক, যেখানে ছিলো অহংকার, ছিলো মিষ্টি মিথ্যে, আর ছিলো গভীর ভালোবাসার অশ্রু।
তাদের মাঝে এখন যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল গড়ে গেছে—বুঝতে পারছিলো না কারা সেই দেয়াল ভাঙবে, আর কিভাবে ভাঙবে!
রিপনও একদম আলাদা ভাবনায় নিমজ্জিত। অফিসের কাজের ব্যস্ততা মাঝে মাঝে তাকে ক্লান্ত করে ফেলত। কিন্তু রুমার কথা বারবার তার মনকে কাঁপাতো। সে বুঝতে পারতো, এই সম্পর্ক শুধু সময়ের দাবি নয়, এটা ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
“কিন্তু কি করবে?” নিজেকে প্রশ্ন করতো সে।
আসলে জীবনে ভালোবাসা আর বিশ্বাসের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম রেখা থাকে, যা অতিক্রম করা সবচেয়ে কঠিন। আর রিপন ও রুমার সেই লড়াই এখন তীব্র হয়ে উঠছে।
ঠিক আছে, চালিয়ে যাই
রিপনের মন আজ অতটা অস্থির ছিলো, যেন কোনো অদৃশ্য হাত বারবার তার হৃদয় চেপে ধরে। অফিস থেকে বের হয়ে সে হাঁটছিলো শহরের সেই পুরোনো বইয়ের দোকানের পাশে, যেখানে রুমার পছন্দের কিছু বই ছিলো। হঠাৎ করেই মনে হলো, রুমাকে কিছু বলতে হবে, নিজের সব মন খুলে।
তাকে ভুল বোঝাবুঝির ফাঁদ থেকে উদ্ধার করতে হবে, যেই ফাঁদ তাদের দূরে ঠেলে দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত।
কিন্তু কীভাবে?
রুমা আজও কফির গ্লাস হাতে বসে ছিলো তারই প্রিয় ক্যাফেতে, তার চোখে ছিলো আগের মতোই এক মিশ্র অনুভূতির ঝিলিক। রিপন এসে তার পাশে বসলো, নীরব হয়ে এক মিনিট শুধু তাকিয়ে রইলো।
“রুমা, আমরা যদি বুঝতাম একে অপরের কথাগুলো ঠিক মতো, তাহলে হয়তো এত দুরত্ব আসতো না,” রিপনের কণ্ঠে কম্পন।
রুমা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি বুঝতেই পারো না, আমার ভেতরে কতটা ভয়, কতটা দ্বিধা।”
“আমারও ভয় আছে,” রিপন হাত দিয়ে রুমার হাত ধরল, “ভয় যে তোমাকে হারাবো, ভয় যে আমাদের মধুর স্মৃতিগুলো ঝরে যাবে। আমি চাই এই ভয়কে পার হয়ে, আমরা নতুন করে শুরু করি।”
রুমার চোখে অশ্রু জমলো, ধীরে ধীরে সে হাত তুলে রিপনের হাত ধরে রাখল।
“তাহলে চল, আজ থেকে সব ভুলে যাই। শুধু এই মুহূর্তটা আমাদের।”
বিপরীতের দুই হৃদয় এক হয়ে গিয়েছিলো, দূরত্ব কমে এসেছিলো, আর সেই সন্ধ্যার আকাশ যেন গায়ে জড়িয়ে ধরেছিলো তাদের নতুন আশা।
তারা জানতো, সহজ হবে না—তবু তারা বিশ্বাস করেছিলো, ভালোবাসা সব বাধা পার হয়ে নতুন আলো নিয়ে আসবে।
রিপন আর রুমার জীবনের সেই সন্ধ্যা যেন এক নতুন সূচনা। ক্যাফের গরম আলোয় তাদের হাতের স্পর্শে যেন নতুন শক্তি জন্ম নিচ্ছিলো। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাদের ঘিরে আছে।
“রুমা, তোমার সঙ্গে আমি সব কিছু শেয়ার করতে চাই, ভালো-খারাপ, আনন্দ-বেদনা—সবকিছু,” রিপন ভেবেছিলো, এবার কথা হবে স্পষ্ট।
রুমা মৃদু হাসল, “আমি ও চেয়েছিলাম তোর কথা জানতে, রিপন। কিন্তু ভয়, লজ্জা সব মিশে এক অদ্ভুত দেয়াল গড়ে দিয়েছিল আমাদের মাঝে।”
“সেই দেয়াল ভেঙে ফেলব,” রিপন বলল দৃঢ় কণ্ঠে, “আমার পরিবার, আমার কাজ, আমার জীবন—সব তোমার জন্য খুলে দেব।”
তারপর তারা দু’জনে সেই রাতে দীর্ঘ সময় কাটালো। রিপন বলল তার বাবার কঠিন শাসনের কথা, যেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছিল নিজের স্বপ্নের পেছনে। রুমাও শেয়ার করল তার মায়ের অসুস্থতার খবর, যা প্রায়ই তার মন খারাপ করতো।
“তোর পাশে থাকলে সব কঠিন মুহূর্ত অতিক্রম করা সহজ হবে,” রিপন প্রতিজ্ঞা করলো।
তাদের কথাবার্তা থেমে গেলে, রিপন হঠাৎ বলল, “আগামীকাল থেকে আমাদের একসঙ্গে সময় কাটানো শুরু করব, পার্কে যাব, সিনেমা দেখব, বই পড়ব, সব কিছু। আমি চাই তোর জীবনে আমি শুধুই আনন্দের স্রোত নিয়ে আসি।”
রুমার চোখে ঝিলিক এসে গেল, “তুই জানিস, আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একটা শান্ত জীবন যাপনের, যেখানে কারো চোখে বিচ্ছিন্নতা থাকবে না।”
“আমারও,” রিপন বলল, “তাই তো আমরা একসাথে।”
কিন্তু সেই রাতের কথা যেন ছিলো স্বপ্নের মতো, কারণ পরের দিন সকালে রুমার ফোনে একটি মেসেজ আসে।
“তোর বাবা অসুস্থ। তোর কাছে ফিরে আসতে হবে।”
রুমার মুখে অজানা কষ্টের ছাপ। রিপনের চোখে চিন্তার রেখা।
“আমি যেতে বাধ্য,” রুমা বলল, “কিন্তু আমি চাই তুই আমার পাশে থাকবি।”
“আমি যাবো। একা তুই কখনো না।”
সেই দিন থেকে শুরু হলো নতুন যুদ্ধ, পরিবার আর ভালোবাসার মধ্যে।
কিন্তু কীভাবে সামলাবে তারা সব কিছু?
কিন্তু তাদের ভালবাসার বাঁধন আরও শক্তিশালী হবে।
ঠিক আছে, আমি আরও বড়, গভীর এবং আবেগঘন করে পরের পর্ব লিখছি, যেখানে রুমা আর রিপনের মিল ও সম্পর্কের দিকটা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
রুমার বাবা অসুস্থ হওয়ায় হঠাৎ তার বাড়ি ফিরে যাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। রিপন বুঝতে পারছিল এই মুহূর্তে রুমার কাছে তার পাশে থাকা মানে কত বড় সাহারা।
রুমার ছোট ছোট হাতে যখন রিপনের হাত আটকে, তখন তার মনে হল যেন জীবনটা একেবারেই অন্য রূপ নিয়েছে।
“রিপন, আমি জানি, আমার এই দায়িত্ব তোর স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে,” রুমা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “কিন্তু তুই আমার জন্য থাকবি তো?”
রিপনের চোখে মায়ার ঝলক। “রুমা, আমি কখনো ভাবিনি যে তুই আমার জীবনের থেকে দূরে যাবে। এই পথ চলা একসঙ্গে, ভালো লাগুক বা কঠিন, আমি কখনো ছেড়ে যাব না।”
তারা দুজনেই বুঝতে পারল, একে অপরের ভালোবাসা শুধু কথায় নয়, বরং সেই ভালবাসাকে তারা করণীয়তায়, ছোট ছোট যত্নে ও পাশে থাকার প্রমাণে তুলে ধরবে।
রুমার মা অসুস্থ, তাই রুমা বাড়ির দায়িত্ব নিলেও রিপন সময়ের ফাঁকে ফাঁকে এসে তাকে সাহায্য করত। রাতের অন্ধকারেও তারা একসঙ্গে বসে গল্প করত, তাদের চোখের ভাষা ছিলো বুঝে নেয়ার সবচেয়ে মধুর মাধ্যম।
একদিন সন্ধ্যায়, বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে জানালায়, রিপন বলল, “রুমা, তুই আমার জীবনের অর্ধেক। তোর হাত ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
রুমা হেসে বলল, “আর তুই আমার প্রাণের অংশ। আমরা একসাথে থাকলে সব কিছু সম্ভব।”
তাদের মিল সেই ছোট ছোট মুহূর্তে গড়ে উঠছিলো,
উঠছিলো, যখন তারা একে অপরের মুখ থেকে বোঝত আনন্দ, দুঃখ, আশঙ্কা ও স্বপ্ন।
রিপন যখন ক্লান্ত হয়, রুমা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, “তুই যা করিস, ভালোবাসার জন্য করিস। আমি তোর পাশে আছি।”
এভাবেই দুই হৃদয় ধীরে ধীরে এক হওয়া শুরু করল। তারা বুঝতে পারল—যে ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা নয়, সেটা জীবনের প্রতিটি কষ্ট আর সুখের সাথী।
কিন্তু তাদের সামনে আরও অনেক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে, কারণ জীবন কখনো শুধু ভালোবাসা দিয়ে লেখা হয় না।
রুমার চোখে অশ্রু, আর রিপনের কাঁধে হাত রাখা—বিষাদের সেই ঘর কেবল তাদের ভালোবাসার আলোয় আলোকিত ছিল।
“রিপন, আমরা একসাথে অনেক কিছু পার করেছি। এই পথে যত বাধা এসেছে, আমরা লড়ে এসেছি। কিন্তু এখন আমার মনে ভয় লাগে, যদি কোনও দিন তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাও,” রুমা কণ্ঠ ভেজা করল।
রিপনের স্পর্শ গরম, চোখে দৃঢ়তার ঝিলিক। “রুমা, আমি কখনো তোর থেকে দূরে যাব না। এই জীবন যতই ঝড় তুলুক, আমি তোমার হাত ছাড়া টিকতে পারব না।”
তাদের জীবনের গল্প যেন এক নাটকের মতো, যেখানে সুখ আর দুঃখ হাত ধরাধরি করে এগিয়ে আসে।
এই দিনগুলোতে, তাদের ভালোবাসা আরও পোক্ত হলো, আরো গভীর হলো। তারা বুঝতে পারল, সত্যিকারের ভালোবাসা মানে একে অপরের জন্য আত্মত্যাগ, একে অপরকে বাঁচানো, আর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় একসাথে লেখা।
এক রাতে, তারা চুপচাপ বসে ছিল সেই গ্রামের ছাদের ওপর, যেখানে তারা প্রথম দেখা হয়েছিল। তারা জানত, তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় এখনো আসেনি।
রিপন আর রুমা একে অপরের চোখের মধ্যে হারিয়ে গেল।
“রুমা, তুই আমার জীবনের সব কিছু। তোর ছাড়া আমি কিছুই নই,” রিপন বলল, “আমরা যতই দূরত্বের মুখোমুখি হই, এই ভালোবাসা আমাদের বেঁচে রাখবে।”
রুমা তার হাতে রিপনের হাত জড়িয়ে ধরল, “আমার প্রতিজ্ঞা, আমরা একসাথে বাঁচব, একসাথে মরব। আমাদের ভালোবাসা চিরদিন অটুট থাকবে।”
গ্রামের সকলে তাদের গল্প শুনত, তাদের ভালোবাসার কথা স্মরণ করত, কারণ তারা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নয়, তারা একে অপরের জীবনের আলো।
তাদের ভালোবাসা ছিল নিখুঁত—তীব্র, গভীর, এবং নির্ভেজাল। জীবন যতই কঠিন হোক, তারা একসাথে থাকলেই সবকিছু সামলাতে পারবে।
শেষ মুহূর্তে, রুমা বলল, “রিপন, তুই আমার ছায়া, আমার জীবন। আমি তোমার ছোঁয়ায় বাঁচি।”
রিপন হেসে বলল, “আর আমি তোমার ভালবাসায় বেঁচে থাকব, রুমা।”
সেই সন্ধ্যায়, তারা দুজনেই জানত—যে ভালবাসা তাদের একত্রে বেঁধেছে, সেটি কখনো ভাঙ্গবে না। তারা ছিল এক, তারা ছিল পরম ভালোবাসার এক অমলিন গল্প।
---
সমাপ্ত,,,