Mahmudul Hasan Jahid

Mahmudul Hasan Jahid ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি ও ভ্রমন বিষয়ক কনটেন্ট পেতে Follow দিয়ে পেইজের সাথে থাকুন 😊
(4)

বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্ব নেয়া কোনো মহৎ কাজ নয়।বরং বৃদ্ধাশ্রমে যাতে কেউ না যায় অথবা না পাঠায় সে বিষয়ে মানুষকে বুঝানো বা সাহায...
23/07/2025

বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্ব নেয়া কোনো মহৎ কাজ নয়।বরং বৃদ্ধাশ্রমে যাতে কেউ না যায় অথবা না পাঠায় সে বিষয়ে মানুষকে বুঝানো বা সাহায্য করতে পারলে সেটা হবে মহান কাজ।

মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাছোটবেলায় বিটিভির সাদাকালো পর্দা থেকেই যার সঙ্গে আমার পরিচয়—তিনি ছিলেন কেবল এক শিল্পী নন,...
23/07/2025

মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

ছোটবেলায় বিটিভির সাদাকালো পর্দা থেকেই যার সঙ্গে আমার পরিচয়—তিনি ছিলেন কেবল এক শিল্পী নন, ছিলেন এক সুরের যোদ্ধা। বাংলা লোক ও পপ সংগীতের কিংবদন্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর—এক নামেই যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের প্রতিবাদী সংস্কৃতির একটি গর্বিত অধ্যায়।

গানের সুরে সমাজ বদলের ডাক

ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা গ্রামে। ছাত্রজীবনেই সংগীতের প্রতি তার গভীর টান জন্ম নেয়। ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী হয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি গানকে করে তোলেন প্রতিবাদের ভাষা।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার গাওয়া “এই না সোনার বাংলাদেশ” গানটি যেন হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের শ্লোগান। সুরে, কথায়, কণ্ঠে ফুটে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস।

মুক্তিযুদ্ধে কণ্ঠে ও অস্ত্রে লড়াই

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফকির আলমগীর ছিলেন এক সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। শুধু অস্ত্রই নয়, গান দিয়েও তিনি সাহস জুগিয়েছেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা মানুষদের। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তার গান, যুদ্ধরত বীরদের প্রেরণার অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছিল।

🎶 লোক ও পপ সঙ্গীতের মিলনস্থলে এক স্বর

স্বাধীনতার পর তিনি গানের ভুবনে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন। লোকগানের মাটিঘেঁষা আবহের সঙ্গে পপ সঙ্গীতের ছন্দ মিশিয়ে তিনি গড়ে তোলেন এক নিজস্ব সংগীতধারা। “ও সখিনা”, “মায়ের এক ধার দুধের দাম”, “মন আমার দেহ ঘরি”, “আজো আছে একতারা”, “রিক্সা চালাই”—প্রতিটি গানে উঠে এসেছে সমাজ, শ্রেণী, মানুষ আর মানবতার কথা।

সংস্কৃতির মঞ্চেও সক্রিয় বিপ্লবী

তিনি শুধু কণ্ঠশিল্পী ছিলেন না। সমাজ ও সংস্কৃতির নানা আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। গণমানুষের পক্ষে নির্ভীক উচ্চারণ, প্রতিবাদের স্পষ্ট ভাষা ও জাগরণের মন্ত্র—এসবই তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন গান ও কর্মে।

সম্মান ও স্বীকৃতি

তার অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, কিন্তু শ্রোতাদের ভালোবাসা ছিল তার সবচেয়ে বড় অর্জন।

🕯️ বিদায়, সুরের সৈনিক

২০২১ সালের ২৩ জুলাই, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফকির আলমগীর। তার চলে যাওয়ায় দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তৈরি হয় এক অপূরণীয় শূন্যতা। কিন্তু তার সৃষ্ট গানগুলো আজো মানুষের হৃদয়ে বাজে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হয়ে।

চিরজীবী ফকির আলমগীর

ফকির আলমগীর ছিলেন সেই শিল্পী, যিনি গানের সুরে গেঁথেছিলেন মানুষের মুক্তির স্বপ্ন। তিনি ছিলেন সময়ের এক সত্যিকারের বিপ্লবী কণ্ঠ—যিনি নিঃসন্দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।



📜 কপিরাইট নোটিশ:
এই পেইজের সমস্ত কনটেন্ট কপিরাইট সংরক্ষিত
© Mahmudul Hasan Jahid।
এই লেখা কপি করতে হলে পেইজের নামসহ উল্লেখ করুন।
অন্যথায় শেয়ার করুন — তাতে সম্মান বজায় থাকে এবং কপিরাইট সমস্যা এড়ানো যায়।

২১ জুলাই ২০২৫ দুপুরের আকাশে বাংলাদেশের এক সাহসী পাইলট উড়াল দিলেন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে। কিন্তু সেই আকাশযাত্রাই হয়ে উঠল তাঁর ...
23/07/2025

২১ জুলাই ২০২৫ দুপুরের আকাশে বাংলাদেশের এক সাহসী পাইলট উড়াল দিলেন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে। কিন্তু সেই আকাশযাত্রাই হয়ে উঠল তাঁর জীবনের শেষ উড্ডয়ন। যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়—একজন পাইলটের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্ত। অথচ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোঃ তৌকির ইসলাম (সাগর) শেষ মুহূর্তে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন বিমানটিকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে নিয়ে যেতে।

তিনি হয়তো চেয়েছিলেন এমন একটি খোলা জায়গায় নামাতে, যেখানে ক্ষয়ক্ষতি হবে কম, মানুষ বাঁচবে বেশি। কিন্তু ভাগ্য ছিল নির্মম। তার আগেই ঘটে গেল ভয়াবহ বিপর্যয়—বিমানটি রাজধানী ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ-এর উপর ভেঙে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন, ধোঁয়া আর কান্নার এক বিভীষিকাময় দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বহু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং স্থানীয় মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন শতাধিক ব্যক্তি, যাঁদের অনেকে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তৌকির নিজেও ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।

বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে কিছু মানুষ তাদের অভিনয় আর গানের সুরে এমনভাবে মিশে আছেন যে তাদের ছাড়া যেন বিনোদন জগতটাই অসম্পূর্...
23/07/2025

বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে কিছু মানুষ তাদের অভিনয় আর গানের সুরে এমনভাবে মিশে আছেন যে তাদের ছাড়া যেন বিনোদন জগতটাই অসম্পূর্ণ। এমনই একজন বিরল প্রতিভা ফজলুর রহমান বাবু, যিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেতা বা গায়ক নন, তিনি যেন আমাদের চেনাজানা জীবনেরই এক প্রতিচ্ছবি। তাঁর কাজ আমাদের হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়—যেন প্রতিটি চরিত্রে তিনি মিশে যান আমাদেরই আত্মার গভীরে।

এক সাদামাটা শুরু, এক অসাধারণ যাত্রা

ফজলুর রহমান বাবু, ১৯৬০ সালের ২২ আগস্ট ফরিদপুরের এক সাধারণ পরিবারে তাঁর আগমন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের নানা প্রান্তের মাটিকে তিনি ছুঁয়ে দেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর রক্তে ছিল শিল্পের স্পন্দন। ফরিদপুরের 'বৈশাখী নাট্য গোষ্ঠী'তে যখন তিনি প্রথম মঞ্চে দাঁড়ালেন, কে জানতো এই সাদামাটা ছেলেটিই একদিন পুরো বাংলাদেশের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে!

১৯৮৩ সালে ব্যাংকের চাকরিতে যখন তিনি ঢাকায় এলেন, তখনো তাঁর ভেতরে পুষে রাখা নাটকের নেশা একটুও কমেনি। আরণ্যক নাট্যদল-এ যোগ দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন, কিছু মানুষের জন্য শিল্প শুধু শখ নয়, এ এক অমোঘ টান।

ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা: জাদুর এক পরশ

১৯৯১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের 'মৃত্যু ক্ষুধা' নাটকে তাঁর অভিষেক। আর 'ইতিকথা' নাটকের ‘পরান মাঝি’ চরিত্রটি? সে তো যেন আমাদেরই পাশের বাড়ির মানুষ হয়ে ধরা দিল! এরপর 'সুন্দরী', 'দানব'—প্রতিটি নাটকে তাঁর অভিনয় ছিল এক জাদুর পরশ। তিনি পর্দায় এলেই মনে হতো, এ তো আমারই চেনা কেউ!

২০০০ সালে 'বিহঙ্গ' দিয়ে চলচ্চিত্রে তাঁর পথচলা শুরু। কিন্তু 'মনপুরা' যখন মুক্তি পেল, তখন শুধু তাঁর অভিনয় নয়, তাঁর গানেও মুগ্ধ হলো সারা দেশ। "ইন্দুবালা গো, তুমি কোন আকাশে থাকো" গানটি যেন প্রতিটি প্রেমিকের বুকের ব্যথা হয়ে বেজে উঠল। ২০০৯ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম 'ইন্দুবালা' প্রকাশের পর তিনি আর কেবল অভিনেতা রইলেন না, হয়ে উঠলেন এক প্রাণের গায়ক।

সম্মাননার মালা, ভালোবাসা আর পাঁচবার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট

ফজলুর রহমান বাবুর প্রাপ্ত পুরস্কারের তালিকাটা দেখলে বোঝা যায়, তিনি কতটা নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী। পার্শ্বচরিত্রে তাঁর অভিনয় এতটাই শক্তিশালী যে, তা অনেক সময় মূল চরিত্রকেও ছাপিয়ে যায়। তিনি পাঁচবার **জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা** হিসেবে ভূষিত হয়েছেন—এ এক বিরল রেকর্ড! আর তাঁর হাসির জাদুতে তো আমরা মুগ্ধ। 'গহীন বালুচর'-এর জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার তারই প্রমাণ। প্রতিটি পুরস্কারই যেন তাঁর প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার নিদর্শন।

বছর চলচ্চিত্র পুরস্কার

| ২০০৪ | শঙ্খনাদ | শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা
(জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার) |
| ২০১৭ | মেয়েটি এখন কোথায় যাবে |
শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা|
| ২০১৭ | গহীন বালুচর | শ্রেষ্ঠ হাস্যরস
| ২০১৯ | ফাগুন হাওয়ায় | শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা
| ২০২০ | বিশ্বসুন্দরী | শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা

ব্যক্তিজীবনের সরলতা আর শিল্পের প্রতি অঙ্গীকার

১৯৯২ সাল থেকে কাজী রোকসানা আক্তারকে নিয়ে তাঁর সংসার। পর্দার বাইরে তিনি একজন সাধারণ মানুষ, যিনি নিরিবিলি জীবন যাপন করতে ভালোবাসেন। তাঁর এই সাদামাটা জীবনই হয়তো তাঁর শিল্পকে আরও বেশি মানবিক করে তোলে। টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ বা নতুন চলচ্চিত্রে, তিনি সবসময়ই নিজেকে নতুন করে মেলে ধরতে চান। তাঁর অভিনয় আর গানগুলো যেন এক একটি স্মারক, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

ফজলুর রহমান বাবু শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি আমাদের বিনোদন জগতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর হাসি, কান্না আর সুরের মূর্ছনায় আমরা যেন নিজেদেরই খুঁজে পাই। এই গুণী মানুষটি যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রেরণা জুগিয়ে যাবেন, ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে রাখবেন প্রতিটি দর্শক-শ্রোতাকে। তাঁর মতো শিল্পীরাই আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখেন, নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করেন স্বপ্ন দেখতে।

আপনারা তাঁর কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, বা তাঁর কোন গানটি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে?

© Mahmudul Hasan Jahid

23/07/2025

১৮৫৪ সাল থেকে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা মালিনীছড়া, চা শিল্পের সূতিকাগার #1854

শহীদুল্লাহ কায়সার : এক বিপ্লবী কলম সৈনিকশহীদুল্লাহ কায়সার (জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ – অন্তর্ধান: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিল...
22/07/2025

শহীদুল্লাহ কায়সার : এক বিপ্লবী কলম সৈনিক
শহীদুল্লাহ কায়সার (জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ – অন্তর্ধান: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন কিংবদন্তী বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মী। তার জীবন ছিল সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, আর তার কলম ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক শাণিত তরবারি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। তার লেখা শুধু পাঠককে বিনোদনই দিত না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি এক গভীর দায়বদ্ধতার বার্তাও বহন করত।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

শহীদুল্লাহ কায়সারের প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ আবু নসর ইমদাদ আলী। তিনি ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন সুফি সদরুল আমিন এবং মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি মেধাবী ছিলেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন, যদিও পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই তিনি সক্রিয় রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন।

রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা জীবন

শহীদুল্লাহ কায়সার ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তিনি তৎকালীন 'দৈনিক সংবাদ' পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার ক্ষুরধার লেখনী সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। বহুবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, কিন্তু অন্যায়ের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাকে দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়।

সাহিত্যকর্ম

শহীদুল্লাহ কায়সার তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবন, সংগ্রাম এবং স্বপ্নকে তুলে ধরেছেন। তার উপন্যাস, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তার রচনায় সমাজের অসঙ্গতি, শোষকের অত্যাচার এবং শোষিতের আত্মত্যাগ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
তার উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম:

উপন্যাস:
সংশপ্তক (১৯৬৫): এটি তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গ্রামীণ সমাজের চালচিত্র তুলে ধরে। এটি পরবর্তীতে টেলিভিশন ধারাবাহিক হিসেবেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সারেং বউ (১৯৬২): এটি সমুদ্রগামী মানুষের জীবন, প্রেম, বিরহ এবং সংগ্রাম নিয়ে রচিত এক অসাধারণ উপন্যাস।

স্মৃতিকথা:
রাজবন্দীর রোজনামচা: কারাগারে থাকাকালীন তার অভিজ্ঞতা ও ভাবনা নিয়ে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান ও শাহাদাত

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদুল্লাহ কায়সার প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে না পারলেও তার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তার বাসভবন ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল এবং তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নের অন্যতম কেন্দ্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে, স্বাধীনতা বিরোধীদের নীলনকশা অনুযায়ী আল-বদর বাহিনী তাকে ঢাকার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হয়, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের এক জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি।

শহীদুল্লাহ কায়সারের কিছু বিখ্যাত উক্তি

শহীদুল্লাহ কায়সার তার রচনায় এবং বক্তৃতায় যে উক্তিগুলো ব্যবহার করেছেন, সেগুলো আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়:

"মানুষের জীবনে দুঃখের চেয়ে বড় শিক্ষক আর নেই।"

"আলোর পিছনে অন্ধকার আছে, আঁধারের পিছনেও আলো আছে।"

"স্বাধীনতার মূল্য শৃঙ্খলের চেয়ে অনেক বেশি।"
"মানুষকে বিশ্বাস করাই জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি।"
"সত্যের পথ কঠিন, কিন্তু চূড়ান্ত জয় সত্যেরই হয়।"
শহীদুল্লাহ কায়সার শুধুমাত্র একজন লেখক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা, যিনি তার কলম এবং কর্মের মাধ্যমে সারাজীবন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। তার সাহিত্যকর্ম এবং তার আত্মত্যাগ আমাদের প্রজন্মের জন্য এক অনন্ত অনুপ্রেরণা।

-------------------------
📜 Copyright Notice:
This page's entire content is copyright protected © Mahmudul Hasan Jahid.
If you want to copy this text, please include the page's name.
Otherwise, please share it — this maintains respect and avoids copyright issues.

কিশোর কুমার: সুরের জাদুকর ও মানবিকতার প্রতীককিশোর কুমার, ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁর কণ্ঠ আর ব্যক্তিত্...
22/07/2025

কিশোর কুমার: সুরের জাদুকর ও মানবিকতার প্রতীক

কিশোর কুমার, ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁর কণ্ঠ আর ব্যক্তিত্ব আজও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে অমলিন। তিনি শুধু একজন গায়কই ছিলেন না, ছিলেন এক অসাধারণ মানুষ, যাঁর জীবন ছিল বহুমুখী প্রতিভা, রসবোধ আর অকৃত্রিম মানবিকতায় ভরা।

মহান হৃদয়ের পরিচয়: বিনা পারিশ্রমিকে গান

কিশোর কুমারের মহানুভবতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এক গরিব প্রযোজক ফণী মজুমদারকে বিনা পারিশ্রমিকে গান গেয়ে দেওয়া। ফণী মজুমদার যখন তাঁর সিনেমা 'দূর গগন কি ছাঁও মে'-এর জন্য কিশোর কুমারের কাছে গান গাওয়ার অনুরোধ নিয়ে যান, তখন তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে তাঁর কাছে কিশোরদাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো অর্থ নেই। কিশোর কুমার এই কথা শুনে হেসে বলেছিলেন, "তোমার সিনেমার গল্পটা ভালো লেগেছে। গান গেয়ে দিচ্ছি, কিন্তু একটাই শর্ত—যখন সিনেমা হিট হবে, তখন একটা ছোট্ট মিষ্টি কিনে আমাকে খাওয়াবে!"
তিনি কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই "আ চলকে তুঝে ম্যাঁয় লেকে চলুঁ" গানটি গেয়েছিলেন, যা সেই সিনেমার সবচেয়ে বড় হিট হয়েছিল। সিনেমা হিট হওয়ার পর, ফণী মজুমদার সত্যিই একটি মিষ্টির বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কিশোরদার কাছে। কিশোরদা সেই মিষ্টি খুশি মনে খেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, "এই হাসিটুকুই আমার পারিশ্রমিক।" এই ঘটনাটি তাঁর শিল্পীসত্তা এবং মানবিকতার এক অবিস্মরণীয় উদাহরণ।

বহুমুখী প্রতিভা ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর

কিশোর কুমার শুধু গায়ক হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। তিনি একাধারে সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর নিজের পরিচালিত চলচ্চিত্র "দূর গগন কি ছাঁও মে" (১৯৬৪) এবং "হালচাল" (১৯৯২) তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার প্রমাণ। তিনি এই সিনেমাগুলোতে শুধু অভিনয়ই করেননি, চিত্রনাট্য লেখা, গান রচনা এবং সঙ্গীত পরিচালনার কাজও করেছেন। এমন বহুমুখী প্রতিভা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে বিরল।

রসবোধ ও খামখেয়ালী ব্যক্তিত্ব

কিশোর কুমারের রসবোধ ছিল কিংবদন্তীতুল্য। তাঁর জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা তাঁর মজার এবং কিছুটা খামখেয়ালী ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে:

সায়ানাইড কাণ্ড: একবার তিনি তাঁর বাড়িতে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে লেখা ছিল: "সায়ানাইড থেকে সাবধান!" এটি ছিল তাঁর নিজস্ব ঢঙে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকদের থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি উপায়, যা তাঁর রসিকতা এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।

পারিশ্রমিক নিয়ে অদ্ভুত শর্ত: পারিশ্রমিক নিয়েও তাঁর ছিল নিজস্ব ধরন। একবার এক প্রযোজক তাঁকে অর্ধেক টাকা দিয়েছিলেন, যার প্রতিবাদে কিশোর কুমার মেকআপ রুম থেকে অর্ধেক গোঁফ কেটে সেট-এ আসেন এবং বলেন, "যখন পুরো টাকা দেবেন, তখন পুরো গোঁফ নিয়ে আসব!" এটি তাঁর পেশাদারিত্ব এবং নীতির প্রতি অগাধ সম্মানের পরিচায়ক।

গান গাওয়ার আগে অদ্ভুত অভ্যাস: শোনা যায়, তিনি স্টুডিওতে গান গাওয়ার আগে প্রায়শই তাঁর কলারের শার্ট ছিঁড়ে ফেলতেন। অনেকেই এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলতেন, "আর্টিস্টের রক্ত গরম হয়, তাই এমনটা করি!" এই আবেগপ্রবণতা তাঁর প্রতিটি গানে ফুটে উঠত, যা শ্রোতাদের মুগ্ধ করত।

কিশোর কুমার ছিলেন এমন একজন শিল্পী যিনি শুধু সুরের মাধ্যমে নয়, তাঁর জীবনযাপন এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমেও মানুষের মনে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। এমন সুরের জাদুকর এবং মহান হৃদয়ের অধিকারী শিল্পী শতাব্দীতে একবারই জন্ম নেন।
------------------
📜 Copyright Notice:
This page's entire content is copyright protected © Mahmudul Hasan Jahid.
If you want to copy this text, please include the page's name.
Otherwise, please share it — this maintains respect and avoids copyright issues.

22/07/2025

যার এক স্বাক্ষরে জন্ম নিয়েছিল কলকাতা—শুরু হয়েছিল ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য

21/07/2025

ঘন্টাখানেক ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায়।সিলেটের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নাই!

21/07/2025

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দূর্ঘটনার দৃশ্য দেখে মন কেঁপে উঠলো কি করুন অবস্থা! আল্লাহ সবার সহায় হোন।

Address

Sylhet

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mahmudul Hasan Jahid posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mahmudul Hasan Jahid:

Share