07/09/2025
ইতিহাসে মানুষ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণকে নানা কুসংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করেছে। যেমন— কারো মৃ*ত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ ঘটে। এটি অশুভ বা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। কোনো মহাজাগতিক দেবতার প্রভাব। এই সময়ে গর্ভপাত হয়, মৃ*ত্যু বা জন্ম ঘটাসহ নানাবিধ কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু শরীয়ত এসব বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ বাতিল করেছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সেজদা করো না; বরং সেজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন— যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদতকারী হও।”
(সূরা ফুসসিলাত, ৪১:৩৭)
রাসূল ﷺ বলেন:
“নিশ্চয় সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন। এগুলোর গ্রহণ কারো মৃত্যু বা জন্মের জন্য ঘটে না। যখন তোমরা এগুলো (গ্রহণ) দেখতে পাও, তখন নামাজে আশ্রয় নাও।”
(সহিহ বুখারি : ১০৪৩, সহিহ মুসলিম : ৯০১)
ইবনে উমর (রা.) বলেন : “সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে হয় না; বরং আল্লাহর নিদর্শন। যখন এটি ঘটবে তখন নামাজে দাঁড়াও।” (মুয়াত্তা মালিক, ১/১৯৫)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন: “এতে রয়েছে বান্দাকে ভয় প্রদর্শন, আল্লাহর মহাশক্তি স্মরণ করানো এবং ইবাদতের দিকে উদ্বুদ্ধ করা।” (শরহ মুসলিম, ৬/২০৭)
• সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আসলে কেন হয়?
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে :
— সূর্যগ্রহণ (Solar Eclipse) : চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে এসে সূর্যের আলো আড়াল করলে ঘটে।
— চন্দ্রগ্রহণ (Lunar Eclipse) : পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝে এসে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে ঘটে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ জ্যোতির্বিদ্যার নিয়মে ঘটে; কারো মৃ*ত্যু, জন্ম বা কোনো অশুভ ঘটনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামী শরীয়তের বক্তব্যও একই: এগুলো আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন।
• রাসূল ﷺ চন্দ্র-সূর্য গ্রহণে কী করতেন?
১. হঠাৎ দিনের আলো ম্লান হয়ে যাওয়া বা রাতের চাঁদ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মানুষকে ভয় ধরিয়ে দেয়। রাসূল ﷺ এটিকে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন মনে করে ভয় পেতেন এবং বান্দাদের সতর্ক করতেন।
২. কোরআনে কিয়ামতের দিন সূর্য-চন্দ্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ আছে: “এবং সূর্য ও চন্দ্র একত্রিত করা হবে।” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৯) এজন্য গ্রহণের দৃশ্য দেখে রাসূল ﷺ কিয়ামতের দৃশ্যের কথা স্মরণ করতেন এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
৩. রাসূল ﷺ উম্মতকে শিখিয়েছেন— এমন সময়ে ভয় পেয়ে কুসংস্কারে না গিয়ে ইবাদতের দিকে ফিরতে হবে: নামাজ পড়া, দোয়া করা, জিকির করা, সদকা দেওয়া।
মূলকথা হলো :
— সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন। এটি কারো মৃ*ত্যু, জন্ম, অশুভ বা কুসংস্কারের কারণে ঘটে না।
— এর বৈজ্ঞানিক কারণ হলো— সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর অবস্থানগত পরিবর্তন।
— রাসূল ﷺ আল্লাহর ভয় ও কিয়ামতের স্মরণে দীর্ঘ নামাজ ও দোয়ায় দাঁড়াতেন, যাতে উম্মত শিক্ষা নেয়।
লেখা : সুকুন লাইফ