03/12/2025
১৪ জানুয়ারী ২০২৬ বুধবার হোটেল-রেস্তোঁরা সেক্টরে কর্মবিরতি সফল করুন।
সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন শাহপরান থানা কমিটির ২য় সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। ২ ডিসেম্বর’২৫ বিকেল ৪টায় ইসলামপুর (মেজরটিলা) বাজারে থানা কমিটির সভাপতি জয়নাল মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ন আহবায়ক মীর মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এর পরিচালনায় উদ্ধোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল ফজল।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন (রেজি: নং বি ২২০০) এর সাংগঠনিক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ছাদেক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী। অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান আলী, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত, জেলা কমিটির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুনু মিয়া সাগর, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ন সম্পাদক রমজান আলী পটু, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট শাহপরান থানা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ মহিদুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির অন্যতম নেতা আব্দুল মুমিন রাজু, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মো. আলীম উদ্দিনসহ প্রমুখঃ
বক্তারা বলেন প্রতি ৫ বছর অন্তর নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে নি¤œতম মজুরি ঘোষণা করার বিধান থাকলেও দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে ৮ বছর পর এ বছরের ৫ মে হোটেল ও রেস্তোঁরা সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরির চূড়ান্ত গেজেট ঘোষণা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী যে মাসে গেজেট ঘোষণা হয়, সেই মাস থেকেই ঘোষিত মজুরি কার্যকর করার কথা। অথচ প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনও পর্যন্ত হোটেল ও রেস্তোঁরা প্রতিষ্ঠানসমূহে ঘোষিত গেজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এ বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করার পরও অদ্যাবধি সরকার বা মালিক পক্ষ থেকে গেজেট বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের আহবানে দেশব্যাপী কর্মবিরতির কর্মসূচী সর্বাতœকভাবে সফল এবং সা¤্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় শ্রমিক আন্দোলকে বিভ্রান্ত বিভক্ত করার নামে এনজিও’রা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত আন্দোলকে বিভ্রান্ত করে চলেছে এসকল বিভ্রান্তির প্রতিবাদে সকল হোটেলসহ দেশের অপরাপর জনগণের সজাগ সতর্ক থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন একজন হোটেল শ্রমিকের পরিবার অর্থকষ্টে সন্ত¡ানদের পড়াশোনা করাতে পারে না, তারপরও যেসব সন্তানেরা অতি কষ্ট করে পড়াশোনা করে শিক্ষা শেষে তাদের চাকুরি জুটছে না। এরকম অবস্থায় গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের সাথে শহরের মধ্যবিত্ত জনগণের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। সাম্রাজ্যবাদের এক দালালের পরিবর্তে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আরও বিশ্বস্থ দালাল। এই সরকার শ্রমিক-জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তার বদলে মার্কিন পরিকল্পনা ও তার স্বার্থ বাস্তবায়নে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের বন্দর ইজারা দেওয়া, মিয়ানমারের সাথে করিডর প্রদান, মার্কিন সৈন্য উপস্থিতি ইত্যাদি মার্কিন স্বার্থে নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন তৎপর, তেমনি তার প্রতিপক্ষ চীন-রাশিয়াও তৎপর রয়েছে। ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণকে যুদ্ধ তৎপরতা থেকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সাম্রাজ্যবাদী এই যুদ্ধ তৎপরতা থেকে দেশকে মুক্ত রাখা এবং সা¤্রাজ্যবাদী অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ন্যায় যুদ্ধ গড়ে তোলাসহ শ্রমিক শ্রেণীর উপর পুঁজির নির্মম শোষণ উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেণীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের যেমন নেই চাকরির নিশ্চয়তা, তেমনি নেই জীবনের নিরাপত্তা। হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা দেশে প্রচলিত শ্রমআইনের তোয়াক্কা না করে তাদের মনগড়া ইচ্ছামাফিক স্বেচ্ছাচারী কায়দায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বাজারে শ্রমিকরা যে বেতন পায় তা দিয়ে মাসের ১০ দিন চলাও কঠিন। হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরের শ্রমিকদের বাঁচার মত মজুরি, শ্রমআইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ের সংগ্রামের পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণির সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদেরকে দেশের অপরাপর সেক্টরের শ্রমিকদের ও জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামে একাতœ হতে হবে। সেই সাথে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অগ্রসর করা ছাড়া হোটেল-শ্রমিকসহ শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সার্বিক মুক্তি অর্জনের বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান।
সভাপতি তার সমাপনী ভাষণে সম্মেলনে অংশগ্রহনকারী ও বিভিন্নভাবে সহায়তাকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবং আগামী ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ফেডারেশনের আহবানে দেশব্যাপী কর্মবিরতির কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য জানান।
জয়নাল মিয়াকে সভাপতি ও জাকির হোসেন’কে সাধারণ সম্পাদক এবং মো. মুক্তার হোসেন’কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটি নির্বাচিত হয়। নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান সম্মেলনের প্রধান অতিথি তফাজ্জল হোসেন।