10/07/2024
নিন্দুকেরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ের বিষয়ে যত মিথ্যাচার করে তার মাঝে সবচেয়ে বেশী মিথ্যাচার করে আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহার সাথে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ের বিয়েটিকে কেন্দ্র করে। অথচ এ বিয়েকে কেন্দ্র করে যত সংখ্যক হিকমত ও উম্মাহর জন্য কল্যাণ রয়েছে তা অপর কোন বিয়েতে দেখা যায়না। (আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর। আর যখন তাঁকে নিয়ে বাসর ঘর করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর। [সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩২৫৫]
এতো অল্প বয়সে বিয়ে? কি কারণ থাকতে পারে।
এর কারণ আরব পেনিসুয়েলা প্রচন্ড গরম আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় সেখানে মেয়েরা শীতপ্রধান দেশের তুলনায় অতি অল্প বয়সেই সাবালকত্ব অর্জন করতো। ঈমাম তিরমিজি রহঃ তাঁর সুনানে তিরমিজিতে আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ এর বর্ণনায় উল্লেখ করেনঃ যখন মেয়েরা নয় বছরে পদার্পন করতো তারা তখন একজন পরিপূর্ণ নারী হয়ে যেত। [সূত্রঃ ২/৪০৯]
আয়েশা রাঃ এর ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম ছিলোনা। নয় বছর বয়সে যখন তিনি স্ত্রী হিসেবে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করেন তখন পরিপূর্ণভাবে একজন সাবালক নারী ছিলেন। ওই সময়ে যদি এ বিয়ে নিন্দনীয় হতো তবে নিন্দুকরা এ বিয়ে নিয়ে মন্তব্য করতে পিছপা হতোনা। কেননা সে সময় নিন্দুকেরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে নানা কুকথা (কবি, যাদুকর, ইত্যাদি) ছড়ালেও এ বিষয় তারা কিছু বলেছে এমন একটি ঘটনাও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায়না।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয় তা হলো রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিয়ের পূর্বে তাঁর জোবায়ের ইবনে মতিম ইবনে ওদায় নামক এক ব্যক্তির সাথে বিয়ের কথা হয়। কিন্তু সে তখন ইসলাম কবুল না করায় তার সাথে আবু বকর সিদ্দিক রাঃ বিয়ে দেন নি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আয়েশা রাঃ এর বিয়ে ছিল আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নির্দেশিত এক বিয়ে।
এখন অনেকে নয় বছর বয়সী আয়েশা রাঃ এর সাথে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ে মেনে নিতে পারছেনা। অথচ নয় বছর বয়সে তৎকালীন সমাজে মেয়েদের বিয়ে ছিল অতি সাধারণ একটি বিষয়। ইসলামকে নিয়ে যারা সমালোচনার ঝর তুলে তাদের নব্বইভাগ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়কে ব্যবহার করে। যার মাঝে আয়েশা রাঃ এর বিয়েটাই থাকে মুখ্য হাতিয়ার।
আমার মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা প্রতিটি মুসলমানের এ বিষয়ে পরিপূর্ন জ্ঞান থাকুক। কেননা এ জ্ঞান না থাকলে, সে না পারবে সমালোচনাকারীদের কথার উচিৎ জবাব দিতে, না পারবে নিজের মনের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা সংশয় দূর করতে।
আয়েশা রাঃ এর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ে সংক্রান্ত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা:
আয়েশা রাঃ এর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ের পিছনে কি প্রজ্ঞা রয়েছে তা সহজভাবে বুঝতে আমরা তাঁর জীবনের একটু সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।
(১) আয়েশা রাঃ এর জীবনী থেকে জানা যায় ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্না ছিলেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হবার সুবাধে তিনি ইসলামী দ্বীনের পারিবারিক যাবতীয় বিষয়াদি বিশেষ করে মহিলাদের প্রাইভেট ষয়সমূহে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিষয়সমূহে ইসলামের হুকুম-আহকাম কি তা সংগৃহিত করতে পেরেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা তিনি উম্মাহর মাঝে হাদীছ আকারে উপস্থাপন করেন। এ ধরনের বিষয়সমূহ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে জানা তাঁর স্ত্রীর ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব ছিলো না। অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন হওয়ায় বিষয়গুলো তাঁর জন্য মনে রাখা ও পরবর্তীতে হাদীছের মাধ্যমে বর্ণনা করা সহজ হয়েছিল।
(২) আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর তিনি জীবিত ছিলেন। এ সময় তিনি ছিলেন উম্মার অন্যতম শিক্ষক। তিনি অনেক বিষয়ে সাহাবাদেরকে সংশোধন করে দেন। শুধু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মাঝে নয়, নারীদের মাঝে এতো বড় ইসলামিক স্কলার মুসলিম ইতিহাসে আর দেখা যায়না। তিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ জুরিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মতো এতো জ্ঞান আর কোন মুসলিম নারী অর্জন করতে পারেনি। আয়েশা রাঃ এর বয়স কম থাকায় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর জীবিত থেকে দ্বীনের খেদমত করতে পেরেছিলেন।
(৩) আয়েশা রাঃ বর্ণনায় মুসনাদে আহমদে ২,৪৩৩ খানা, বুখারীতে ৭৪১ খানা এবং মুসলিমে ৫০৩ খানা হাদিছ লিপিবদ্ধ আছে। কোন কোন স্কলার মনে করেন ইসলামী দ্বীনের এক তৃতীয়াংশের বেশী এসেছে আয়েশা রা: এর বর্ণিত হাদীছ থেকে।
(৪) প্রচুর সংখ্যক ছাত্র তাঁর নিকট থেকে ইসলামের হুকুম-আহকাম শিক্ষা নিয়েছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ ছাত্রদের মাঝে অন্যতম ছিলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা:, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা:, আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ রা:, সায়ীদ ইবনে মুসায়ীদ রা:, আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব রা:, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা: ও আরও অনেকে।
আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, দুইবার তোমার চেহারা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমি কাপড়ে আবৃতা এবং (জিবরাইল) আমাকে বলছেন, ইনি আপনার স্ত্রী, আমি ঘোমটাটা সরিয়ে দেখলাম। দেখি ওই নারী তো তুমিই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৩৮৯৫, ৫০৭৮, ৫১২৫, ৭০১১; মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৩৮)।
আল্লাহ তা'আলা তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। মূলতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বিয়ে করেছিলেন ওহির নির্দেশ অনুসরণ করে। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিয়ে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেননা আল্লাহ বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় কল্যান সম্পর্কে অবহিত।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। [সূরা আল আন-আম: ৫৯]