04/11/2025
শহর থেকে একটু বাইরে আপনি যদি সনোলজিষ্ট(আল্ট্রাসাউন্ড) হিসাবে কাজ করতে যান আপনাকে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত।কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কত আজগুবি কথা যে আপনাকে শুনতে হবে তার কোনো লাইসেন্স নাই।সেই আজগুবি কথার দিকে না গিয়ে একটা অদ্ভুত কিন্তু মজার ঘটনা শেয়ার করি–
দুই বান্ধবী আসছে আমার চেম্বারে।দুজনেরই বয়স ২০ বা ২১ বছরের মধ্যে।ধরা যাক, একজনের নাম "X"
আরেক জনের নাম "Y"!
X হচ্ছে আমার রোগী। Y তাকে নিয়ে এসেছে। দুজনেই আানম্যারিড।
কমপ্লেইন হল–তলপেটে ব্যথা..জ্বর জ্বর লাগে..রুচি নাই..শরীর দুর্বল..! মাথাও চক্কর দেয় মাঝে মাঝে।
পিরিয়ডের হিস্ট্রি নিলাম। সে ঠিকমত বলতেই পারলো না।
যেহেতু অবিবাহিতা সেহেতু সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করাও অশোভন।একটা আল্ট্রাসাউন্ড আর একটা প্রসাব পরীক্ষা দিলাম।
আল্ট্রাসাউন্ডে দেখি ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট। অবাক হইনি।কারণ এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু না। সব সনোলজিষ্টই এমন ঘটনা অহরহ ফেস করেন।
মেয়েটি যতটুকু নাটক করা দরকার সব করল । কিভাবে কি হলো সে জানেই না ।
এতেও অবাক হইনি । অনেকের বাতাসেই পেটে বাচ্চা আসে এ ঘটনাও আমরা জানি । এসব ক্ষেত্রে আমি একদম নিশ্চুপ থাকি।আমার ডায়াগনোসিস বলে আমি চুপ । যত বড় পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিই হোক আমি চুপ তো চুপ ।
যাহোক, একটা আানম্যারিড মেয়ে প্রেগন্যান্ট এটা কিন্তু মূল বিষয় না ।
মূল বিষয়ে আসি এবার -
বাচ্চা যেভাবেই আসুক(বাতাসে,স্বপ্নে,আগুনে, অথবা পানিতে ভেসে ভেসে) যেহেতু মেয়েটি আনম্যারিড সেহেতু সে বাচ্চা রাখবে না ।
আমি যেহেতু টারমিনেশন করি না এবং এ রিলেটেড অ্যাডভাইসও দেই না সেজন্য আমি পেশেন্টকে ছেড়ে দিছি ।
কিন্তু পেশেন্ট এম আর (বাচ্চা নষ্ট করার পদ্ধতি )এখানেই করবে । রীতিমত হাতে পায়ে ধরাধরি । কান্নাকাটি । ম্যাডাম কি হবে আমার ? আমাকে বাচাঁন ।
পরে পেশেন্টকে বুঝিয়ে কাউন্টারে পাঠাইছি ।
কাউন্টার আর আমার চেম্বার পাশাপাশি। উপরে খোলা। মাঝখানে থাইগ্লাস দিয়ে পার্টিশন করা। কথা বার্তা সব শোনা যায়।
যেহেতু কৃমিনাল অ্যাবরশন,হসপিটাল কর্তৃপক্ষও মুখিয়ে থাকে। টাকার পরিমাণ নিয়ে দর কষাকষি হচ্ছিলো।
টাকার পরিমাণ শুনে রোগীর বান্ধবী উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল–"এখানে এত বেশি চান কেন ? আমি গতমাসে করাইছি ৩০০০ টাকা দিয়ে !
ফাহমিদা মাহবুবা
সনোলজিষ্ট, তায়রুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।