25/02/2024
রাতে বউয়ের সাথে তীব্র ঝগড়া হলো। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ক্রোধের বশে আমি বলেই ফেললাম,
-"এ জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল তোমাকে বিয়ে করা।"
বউ আমার কথায় যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। তার ঝাঁঝালো কন্ঠে শুধালো,
-"কি বললে তুমি আমাকে বিয়ে করা তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল?"
আমিও আমার কন্ঠে জোর দিলাম। বউ উপর চেঁচিয়ে বললাম,
-"তা নয়তো কি? না আছে রূপ না আছে গুন। ঠিক মতো রাঁধতেও পারো না। কোনোদিন তরকারিতে লবন বেশি কোনোদিন মরিচ বেশি, কোনোদিন আবার ভাতের বদলে ফেরনি হয়ে যায়। এর থেকে যদি ঐ ম্যাচে কাজ করা বুয়াকেও বিয়ে করতাম তাতেও অন্তত রোজ একটু ভালো খেতে পারতাম। তোমার হাতের ঐ কুখ্যাত রান্না খেতে খেতে আমার জীহ্বা যেন পঁচে গেল।"
এতগুলো কথা বলে একটু দম নিলাম আমি। কিন্তু এবার আর বউ উত্তর দিল না কোনো। দেখলাম শুধুমাত্র আমার দিকে একবার শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। বুঝলাম বউ আমার অভিমান করেছে ভীষণ। কারন ও যখন রেগে থাকে তখন আমার সাথে তর্ক করে লাগাতার। ভিতরের সব রাগ উগড়ে দেয় আমার উপর। আর যখন অভিমান করে তখন চুপ হয়ে যায়, হাজার কথা বললেও উত্তর দেয় না কোনো। কিন্তু তাতে আমার কি? আমি বরং আজ ভীষণ খুশি। কতদিন পর বউয়ের সাথে তর্কে জিততে পেরেছি, দুই চার কথা শোনাতে পেরেছি তাকে। তাছাড়া ঝগড়া তো আর আমি আগে শুরু করিনি সেই তুচ্ছ একটা বিষয়ে আমার উপরে চড়াও হয়েছিল প্রথমে।
বেশ অনেদিন পরে বউকে বাক যুদ্ধে হারিয়ে ফুরফুরে মন মেজাজেই আজ ঘুমাতে গেলাম আমি। কিন্তু একি ঘুম আসছে না যে। বুকটা খালি খালি লাগছে ভীষণ। বউটা প্রতিদিন আমার বুকেই ঘুমায়। আজ নেই বলে হয়তো খালি খালি লাগছে। নিশ্চই সে আজ আমার উপর অভিমান করে অন্য কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়েছে। ঘুমাক তো, আজ আমিও যাব না তার অভিমান ভাঙাতে। মেয়ে মানুষ যত লাই দিবে এরা তত মাথায় উঠবে। এই যেমন আমার বউটা। লাই দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলেছি একদম। আগে হাজারটা প্রশ্ন করলেও জবাব দিতো না আর এখন কারনে অকারণে আমার সাথে ঝগড়া করে। নিজের ইগো দেখিয়ে আর গেলাম না বউয়ের কাছে। বিছানার একপাশ থেকে একটা কোল বালিশ বুকে জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা চালালাম। কিন্তু ঘুম আর হলো না আমার, সারারাত না ঘুমিয়েই কাটালাম।
প্রতিদিন সকালে বউ আমার ঘুম ভাঙালেও আজ ঘুম ভাঙালো না। আমি একা একাই উঠে পড়লাম। ফ্রেশ হয়ে গেলাম ডাইনিং রুমে। কই কোথাও কেউ নেই। সবকিছু কাল রাতের মতোই পড়ে আছে। হয়তো কাল রাতের কথা ধরে মেয়েটা ওঠেওনি খাবারও বানায়নি। যাক ভালোই হয়েছে ওর ঐ বিস্বাদ খাবার ছেড়ে আজ অন্তত রেস্টুরেন্টে ভালো মন্দ খাওয়া যাবে। বউকে আর ডাকলাম না খুঁজলামও না যে সে কোন কক্ষে আছে। অফিসের জন্য তৈরী হয়ে বেরিয়ে এলাম বাড়ি থেকে। বেশ ভালো একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পছন্দসই কিছু খাবারও অর্ডার করলাম। ওয়েটার খাবার দিয়ে গেলে উৎফুল্ল ভঙ্গিতে খেতে উদ্যত হলাম। কিন্তু সে খাবার আমার গলা থেকে নামলো না। হৃদয়ে তীব্র বেগে আঁচড়ে পড়লো "বউটা খেয়েছে তো আমার?" আসার সময় একবার দেখেও আসলাম না মেয়েটাকে। মেয়েটা নিশ্চই আমার সাথে অভিমান করে না খেয়েই আছে। খেতে চেয়েও কিছু খেতে পারলাম না আমি। ওয়েটারকে বলে খাবার গুলো প্যাক করে নিয়ে বেরিয়ে এলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম কল দেই বউকে একবার। জিজ্ঞেস করি খেয়েছে কিনা। কিন্তু নিজের ইগোর কাছে হার মানলাম পরক্ষনেই। ভাবলাম ঝগড়া তো কাল আমি একা করিনি সেও করেছিল। সেই তো ঝগড়া আগে শুরু করেছিল তাহলে আমি কেন তাকে আগে কল করবো, আগে কথা বলবো? আর কল দিলাম না বউকে। খাবারগুলো রাস্তার পাশে কিছু অবহেলিত মানুষকে দিয়ে গেলাম অফিসে। সেখানেও কোনো কাজে মন বসাতে পারছিলাম না আজ। আবার নিজে ইগোও ভাঙতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত ভাবলাম ফেক আইডি থেকে বউয়ের খোঁজ খবর নেওয়া যাক। তাতে বউ আমাকে নিশ্চই চিনতে পারবে না, বউয়ের খোঁজও পাব আর ইগোও ভাঙবে না। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ফেক আইডি থেকে বউকে মেসেজ করলাম। বউ এসএমএস দেখলোই না। একবার দুইবার তিনবার কতগুলো এসএমএস করলাম ওপাশ থেকে কোনো সাড়াই দিল না। আমিও দমার পাত্র নই। একের পর এক কমপক্ষে ৩০ টার মতো এসএমএস করলাম বউকে। শেষে বউ বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল,
-"সমস্যা কি? কে আপনি?"
বউয়ের উত্তর পেয়েই উৎফুল্ল হলাম আমি। সাথে সাথেই হাত চালিয়ে লিখতে গেলাম "খেয়েছো তুমি?" কিন্তু এতে যদি বউ চিনে নেয় আমাকে তাই আর লিখলাম না। অপরিচিত হওয়ার ভান ধরে বউয়ের সাথে ভাব জমাতে চাইলাম। বউকে পটানোর জন্য লিখলাম,
-"আমার সমস্যা তো আপনি।"
-"কেন কি করেছি আমি।"
-"আপনি ভীষণ সুন্দর।"
সাথে সাথেই দেখলাম বউ ওপাশ থেকে জবাব দিয়েছে,
-"শা'লা অন্যের বউকে সুন্দর বলতে লজ্জা করে না? চরিত্রহীন কোথাকার।"
আমি আহাম্মক বনে গেলাম যেন। নিজের বউকে নিজে সুন্দরী বলে কিনা চরিত্রহীনের উপাধি পেতে হলো শেষ পর্যন্ত। নাহ এ অপমান মানা যায় না। বউকে ফের এসএমএস দিতে গিয়ে দেখলাম বউ আমাকে ব্লক মেরে দিয়েছে। প্রথমে আশাহত হলেও পরক্ষনেই আমার হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। বউটা আমার ঠিক কতটা ভালোবাসে আমাকে। আমার দৃষ্টির আড়ালেও সে অন্য পুরুষের সাথে ঘনিষ্ট হওয়া তো দূরে থাক কথাই বলে না। আজকালকার যুগে এমন মেয়ে বউ হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আর আমি কিনা কাল কতকিছু বলে অপমান করলাম তাকে। সকালে একবার না দেখেই চলে এলাম। মনের ভিতরে অনুতাপবোধ জাগ্রত হলো। নিজের ইগোকে ছুঁড়ে ফেললাম বাইরে। অফিস থেকে জরুরি ভিত্তিতে ছুটি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম।
দোকান থেকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি, বেলী ফুলের মালা আর দুই মুঠো চুরি নিলাম বউয়ের জন্য। বউয়ের অভিমান ভাঙাতে হবে যে, আর তারপর খাওয়াতে হবে।
বাসার দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজালাম। ক্ষানিক বাদেই মলিন মুখে বউ দরজাটা খুলে দিল। মেয়েটার মুখটা দেখে হৃদয়টা আমার কম্পিত হলো যেন। এক রাতেই মেয়েটার মুখশ্রী কেমন চুপসে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। বউ আমাকে দেখেই উল্টো হাঁটা ধরলো আমিও সময় ব্যয় করলাম না। কোনো রকম দরজাটা আটকেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম বউকে। বউ ছিটকে সরে যেতে চাইলো আমার বাঁধন থেকে। আমিও কম যাই না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম বউয়ের ছোট খাটো কোমল দেহটাকে। অপধারীর কন্ঠে বললাম,
-"স্যরি বউ মাফ করে দাও। আমি কাল খুব বেশিই বলে ফেলেছি।"
বউ আমার শান্ত হয়ে দাঁড়ালো তবে বলল না কিছুই, ফিরেও তাকালো না আমার দিকে। আমি এক প্রকার জোর করেই বউকে আমার দিকে ফিরিয়ে নিলাম। দুই হাতে কান ধরে বললাম,
-"এই দেখো কান ধরেছি আর কখনও ওভাবে বলবো না। তবুও আমার সাথে অভিমান করে থেকো না লক্ষ্মীটি।"
বউ হুট করেই আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
-"কাল কতগুলো কথা বললেন আপনি আমাকে। আপনি ভীষন পঁচা, পঁচা লোক একটা।"
আমি হাসলাম বউয়ের কথায়। তার সুবাশযুক্ত চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে বললাম,
-"হুম, তোমার পঁচা জামাই।"
#পঁচা_জামাই
🖤
Send a message to learn more