একটি আদর্শবাদী ইসলামী ছাত্র সংগঠন। ছত্র সমাজে মহানবী (সঃ)-এর আনুপম আদর্শ বিস্তারে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের নিমিত্তে, নবী করিম (সঃ)-এর প্রতি মুহাব্বাত ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ ছাড়াও বর্তমান সমাজে তাঁর অতুলনীয় আদর্শ বাস্তবায়নেরব ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার নাম তালামীয...।
নবী করিম (সঃ) ফরমান-- তোমাদের মধ্যে কেউ ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা,সন্তান-সন্তুতি
ও সমস্ত মানুয আপেক্ষা আধিক প্রিয় হই।
সুউচ্চ মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের বর্ননায়...।
''সম্বব নহে বর্ণনা ওগো
যেমন আছ গুণী
খদার পরেই শ্রেষ্ঠ তুমি
সংক্ষেপে মোরা এই জানি।,
(হযরত শেখ সাদী)
(আল্লমা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) সংগঠন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন।)
মুরশীদে বরহক্ব শামসুল উলামা হযরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধূরী ছাহেব কিবলাহ্ ফুলতলী (রহ.)-
মুর্শিদে কামিল রঈসুল কুররা, উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন হযরত আল্লামা মো: আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) আমাদের দেশে এক পরিচিত নাম তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। ২০০৮ সালে ইহকাল ত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ প্রায় সত্তর বছরকাল যাবত আন্জাম দেয়া দ্বীনের বহুমুখী খিদমতই তাঁর ব্যাপক পরিচিতির কারণ। আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (র.)’র জীবন আল্লাহর রাহে সর্বোতভাবে নিবেদিত ছিল। তাঁকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়ে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। এটা কোন অতিশয়োক্তি নয় বরং তাঁর জীবন ও কর্মই এর বাস্তব প্রমাণ। তিনি ছিলেন তাসাউফের উচ্চমার্গে আসীন একজন ওলী আল্লাহ। জৌনপুরী সিলসিলার একজন প্রখ্যাত বুজুর্গ হিসেবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম ছিল। অন্যদিকে ইলমে কিরাতের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান দেশে বিদেশে নন্দিত। সমাজের অসহায়-দু:স্থ মানুষের সেবায় তাঁর রয়েছে বহুবিধ খিদমত। তিনি সারাটি জীবন মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন বিভিন্নভাবে। তিনি সুললিত কন্ঠের অধিকারী দাঈ-ইলাল্লাহ। এতসবের পাশাপাশি তিনি একজন লেখক ও সমাজ সংস্কার।
* জন্ম ও বংশ পরিচয়
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ১৯১৩ (১৩২১ বাংলা) সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানাধীন ফুলতলী গ্রামে এক প্রখ্যাত আলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মুফতী মাওলানা আব্দুল মজিদ চৌধুরী (র.) ছিলেন একজন স্বনামধন্য ও বিখ্যাত আলিমে দ্বীন ও ফকীহ। তিনি অবিভক্ত ভারতের বাংলা আসামের একজন মশহুর আলিম ও বুজুর্গ ছিলেন। তিনি আজীবন মাদ্রাসায় শিক্ষকতাসহ দ্বীনের অসাধারণ খিদমত আঞ্জাম দেন। তিনি আমলে সালেহের মাধ্যমে তাযকিয়ায়ে নাফসের মেহনতে উচ্চাসনে আসীন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) হযরত শাহজালাল (র.)-এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ কামাল (র)-এর বংশের অধ্বঃস্তন পুরুষ বিশিষ্ট বুজুর্গ হযরত শাহ আলা বখশ (র) এর বংশধর।
শিক্ষা জীবন
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ফুলতলী মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন বংশীয় চাচাতো ভাই মাওলানা ফাতির আলী (র.)। এ সময় তিনি কারী সৈয়দ আলী সাহেবের নিকট কিরাত শিক্ষা গ্রহণ করেন। সে সময় তাঁর পিতা গঙ্গাজল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁরই সুযোগ্য সাগরিদ হাইলাকান্দি রাঙ্গাউটি মাদ্রাসার সুপার প্রখ্যাত ওলী মাওলানা আব্দুর রশিদ তাঁর শ্রদ্ধেয় উস্তাদের নিকট ফুলতলী ছাহেবকে উক্ত মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে ১৩৩৬ বাংলায় তিনি উক্ত মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ইতোমধ্যে হযরত বদরপুরী (র.) বদরপুর আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলে ১৩৩৮ বাংলায় বদরপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সুনামের সাথে সমাপন করেন। এরপর তদীয় উস্তাদ ও মুর্শিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ শাহ মুহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র) এর নির্দেশ মোতাবেক উচ্চ শিক্ষা অর্জনার্থে ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায়ে আলিয়া রামপুরে ভর্তি হয়ে ফনুনাত শেষ করে ইলমে হাদীসের শিক্ষা হাসিলের লক্ষ্যে মাতলাউল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি মাদ্রাসায় সুনামের সাথে অধ্যয়নের পর হাদীসের চুড়ান্ত পরীক্ষায় ১ম বিভাগে ১ম স্থান অধিকার করে ১৩৫৫ হিজরী সনে হাদীসের সনদ লাভ করেন। উক্ত মাদরাসায় তার হদীসের উস্তাদ ছিলেন প্রখ্যাত মুহাদ্দীস আল্লামা খলিলুল্লাহ রামপুরী (র) ও আল্লামা ওয়াজীহ উদ্দীন রামপুরী (র.) প্রমুখ। ইলমে হাদীস ছাড়াও তিনি ইলমে তাফসীর ও ফিকহ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। শিক্ষা হিসেবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত তথা ইলমে কিরাত শিক্ষা। ইলমে কিরাতে তার সুযোগ্য শিক্ষক ছিলেন তারই পীর ও মুশির্দ হযরত আবু ইউসূফ শাহ মুহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র)। তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি কিরাতের আরো শিক্ষা গ্রহণ করেন উপমহাদেশের বিখ্যাত কারী হযরত মাওলানা হাফিয আব্দুর রউফ করমপুরী শাহবাজপুরী (র) এর কাছ থেকে। শাহবাজপুরী (র) ছিলেন হযরত ইরকসুস মিশরী (র) এর ছাত্র। ১৪৫১ সালে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) মক্কা শরীফ গমন করে কিরাতের আরো উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন শায়খুল কুররা হযরত আহমদ হিজাযী (র) এর কাছ থেকে। আহমদ হিজাযী (রহ.) ছিলেন হারাম শরীফের ইমামগণের পরীক্ষক ও তৎকালীন বিশ্বের খ্যাতিমান কারীগনের উস্তাদ ও পরীক্ষক। যথারীতি তিনি শায়খুল কুররা হযরত আহমদ (র) এর কাছ থেকে ইলমে কিরাতের সনদ লাভ করেন।
* কর্ম জীবন
কর্মজীবনে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) ১৯৪৬ সালে বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর গাছবাড়ি জামেউল উলুম আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করে ছয় বছর সুনামের সাথে পাঠদান করেন। তিনি এ সময় ভাইসপ্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপাল হিসেবে গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। এরপর সুদীর্ঘকাল সৎপুর আলিয়া মাদরাসা ও ইছামতি আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে ইলমে হাদীসের খিদমত আঞ্জাম দেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে বুখারী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, ইতকান, নূরুল আনোয়ার, আকাঈদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, হিদায়া, জালালাইন প্রভৃতি উঁচু পর্যায়ের কিতাবাদী নিপূণ দক্ষতার সাথে পাঠ দান করেন। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে দু’দিন ফুলতলী আলিয়া মাদরাসায় কামিল জামাতের হাদীসের পাঠ দান করতেন। দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীর শিক্ষকতার জীবনে তার সুগভীর অনুভুতি ও বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষায় আলোকপ্রাপ্ত হয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
* পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে তিনি ১৩৪৫ বাংলায় তার পীর ও মুর্শিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ শাহ মো: ইয়াকুব বদরপুরী (র) এর তৃতীয় কন্যা মুহতারামা মুছাম্মত খাদিজা এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ তরফে চারজন ছাহেবজাদা ও তিন ছাহেবজাদী রয়েছেন। তাঁরা হলেন হযরত মাওলানা মো: ইমাদ উদ্দীন, হযরত মাওলানা মো: নজমুদ্দীন, মোছাম্মত করিমুন্নেছা, হযরত মাওলানা মো: শিহাবুদ্দীন, মোছাম্মত মাহতাবুন্নেছা, মোছাম্মত আফতাবুন্নেছা, মুফতি মাওলানা মো: গিয়াস উদ্দিন। বদরপুরী ছাহেব কিবলাহর এই ছাহেবজাদী আল্লাহর রেজামন্দি তথা ইবাদত বন্দেগীর এক পর্যায়ে সংসারের প্রতি বিরাগভাজন হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি স্বীয় পীর ও মুর্শিদ হযরত বদরপুরী (র) এর নির্দেশে ফুলতলী গ্রামের মরহুম আবব্দুর রশিদ খানের কণ্যা মুহতারামা নেহরুন নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ তরফে তিনজন ছাহেবজাদা রয়েছেন। তারা হলেন- মাওলানা মো: কমরুদ্দীন, হাফিয মাওলানা মো: ফখরুদ্দীন ও মাওলানা মো: হুছামুদ্দীন।
* ইলমে কিরাতের খিদমত
হযরত ছাহেব কিবলাহ ভারতের উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী রামপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে হাদীস, তাফসীর ও ফিকাহ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় যখন শিক্ষকতায় নিয়োজিত, তখন তার মুর্শিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসূফ শাহ মোহম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র) তাকে বিশুদ্ধ কিরাত শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ তাকীদ প্রদান করেন। মুর্শিদ কিবলাহর নির্দেশ পেয়ে তিনি প্রথমে বিশ্ববিখ্যাত কারী হযরত ইরকসুস মিশরী (র) এর অন্যতম শাগরিদ হযরত মাওলানা হাফিজ আব্দুর রউফ করমপুরী (র) ও পরবর্তীতে মক্কা শরীফের ইমামগণের পরীক্ষক, মিশরীয় বংশোদ্ভুত, রঈছুল কুররা হযরত আহমদ হিজাযী (র) এর নিকট কিরাতের শিক্ষা গ্রহণ করেন। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর অনন্য সাধারণ গুণাবলী বা বৈশিষ্টাবলীর মধ্যে একটি ছিল শিক্ষা জীবনে ১৮ বছর বয়সে মুর্শিদ থেকে তরীকতের খিলাফত লাভ আর অন্যটি ছিল রঈছুল কুররা আহমদ হিজাযী (র.) এর ভারত উপমহাদেশের সম্ভবত প্রথম এবং একমাত্র সনদ প্রাপ্ত ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা।
১৯৫০ ইংরেজী সনে ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়ীতে ইলমে কিরাতের দরস প্রথম চালু করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষকদের সুবিধার্থে ছুটির অবসরকালীন রামাদ্বান মাসকে কিরাত শিক্ষার জন্য বেছে নেয়া হয়। আর রামাদ্বান মাস যেহেতু নুযুলে কুরআনের মাস, তাই প্রতি বৎসর রামাদ্বানে ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়ীতে শিক্ষার্থী আলেমদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিজ খরচে বহন করতে থাকেন। পঞ্চাশ হতে একশত এভাবে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি সকলকে তালিম দিয়ে এবং সমগ্র কুরআন শরীফ নিজে শুনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী করে তবেই সনদ প্রদান করতেন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় অন্যান্য স্থানে শাখাকেন্দ্র অনুমোদন ও একটি বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং ৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাষ্টি বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যদের অনুরোধক্রমে ছাহেব কিবলাহ‘র ওয়ালিদ মুহতরম হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুল মজিদ চৌধুরী (রহ.)-এর নামানুসারে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় ‘দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট’। ছাহেব কিবলাহ তাঁর ভূ-সম্পত্তির বিশাল অংশ (প্রায় ৩৩ একর) এই ট্রাস্টের নামে ওয়াকফ করে রেখেছেন। বর্তমানে এই বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় দেড় হাজার শাখা কেন্দ্র দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
* ইলমে হাদীসের খিদমত
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ইলমে হাদীসের এক নিবেদিত খাদিম। কর্মময় জীবনের শত ব্যস্ততার ফাঁকেও তিনি হাদীসে নববীর খিদমত করে যাচ্ছেন। হযরত ছাহেব কিবলাহ (র.) ভারত উপমহাদেশের দুই প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ মাওলানা খলিলুল্লাহ রামপুরী (র.) ও মাওলানা ওজীহ উদ্দিন রামপুরী (র.) এর নিকট থেকে হাদীস শরীফের সনদ গ্রহণ করেছেন। সনদ গ্রহণের পর তিনি বদরপুর আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি হাদীসের কিতাবাদী পাঠদানকরতেন। গাছবাড়ী জামেউল উলূম কামিল মাদরাসায়ও তিনি ইল্মে হাদীসের দারস দান করেন। পরবর্তীতে তিনি সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসা, ইছামতি কামিল মাদ্রাসা ও ফুলতলী আলিয়া কমপক্ষে সপ্তাহে দু’দিন দারস দান করেন। ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে দুই দিন ফুলতলী আলিয়া মাদ্রাসায় হাদীসের দারস প্রদান করতেন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ ছিলেন ইলমে কিরাত, ইলমে হাদীস ও তাসাউফের জ্ঞানে বিভূষিত।
* সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা
আল্লমা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অনেক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতাও করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর কয়েকটি হচ্ছে- আনজুমানে আল-ইসলাহ বাংলাদেশ,ছাত্রসংগঠন- বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া,শিক্ষক সংগঠন-আনজুমানে মাদারিছে আরাবিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান-লতিফিয়া দারুল মুতালাআহ। দেশে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেছীন-এর উপদেষ্টা, সমাজকল্যাণ সংস্থা ‘মুসলিম হ্যান্ডস বাংলাদেশেরও’-এর তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
* বিদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র অসংখ্য মুরিদান বিশ্বের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। বিশেষতঃ গ্রেট বৃটেনে তার মুতাআল্লিকীনের সংখ্যা অগণিত। সেখানে দ্বীনের খিদমতে তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক মাদ্রাসা মসজিদ গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে মাদ্রাসা-ই-মজিদিয়া ইউ.কে ও দারুল হাদীস লতিফিয়া’র নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সংঘবদ্ধভাবে দ্বীনি কাজ আনজাম দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েকটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। আনজুমানে আল ইসলাহ ইউ.কে, আল ইসলাহ ইয়ুথ ফোরাম, লতিফিয়া কারী সোসাইটি ইউ.কে ও উলামা সোসাইটি ইউ.কে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রেও বহু সংগঠন গড়েছেন। তাঁর সরাসরি নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে।
ইন্তেকাল
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ১৬জানুয়ারী ২০০৮ঈসায়ী, ৬ মহররম ১৪২৯হিজরী, ৩মাঘ ১৪১৪বাংলা রোজ বুধবার প্রথম প্রহরে (রাত ২টায়) সিলেট শহরের সুবহানীঘাটস্থ তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইন্তেকালের কিছুক্ষণ পর ফজরের আগেই তাঁকে নিজ বাড়ি ফুলতলীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ দিন বিকাল ৪টার সময় বাড়ীর দক্ষিণ পার্শ্বস্থ বালাই হাওরে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় মুরীদান-মুহিব্বীনসহ লাখো লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন বড় ছাহেবজাদা আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহকে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ছাহেব বাড়ী জামে মসজিদের উত্তর পাশে কবর দেয়া হয়েছে।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ সারা জীবন দ্বীনের খিদমতে অতিবাহিত করেছেন। শেষ জীবনে বয়সের ভারে অত্যন্ত দূর্বল হয়ে গেলেও এ খিদমত থেকে তিনি বিরত হন নি। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি প্রায় নিয়মিতই ইসলামী মাহফিলে যোগ দিতেন। এসব সভা সম্মেলনে তাঁর অনুসারী মুরীদদেরসহ উপস্থিত জনগণকে ইসলামী শরীয়ত ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা অনুযায়ী জীবন গঠনের জন্য বিস্তারিত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিতেন। অসাধারণ বাগ্মী হিসেবে তাঁর পরিচয় সুবিদিত ছিল। তাঁর বাগ্মিতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, তাঁর বক্তব্য বাস্তবোচিত, যুক্তিসিদ্ধ ও পুরোপুরি তথ্যনির্ভর।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ শুধু উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম ওলীয়ে কামিলই নন বরং যথার্থ অর্থেই এই যামানার মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঠিক ইসলামী শিক্ষা দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ঘটাতে পারে। আর জাগরণের এই আলোর দ্বারাই ইসলামী সমাজ গঠন এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে ইসলামী নির্দেশনাবলীর বাস্তবায়ন সম্ভব।
(দ্বীনের খিদমতে অনন্য ব্যক্তিত্ব হযরত আল্লামা ছাহেব কিবলাহ্ ফুলতলী (র.) - আহমদ হাসান চৌধুরী)
[ঈষৎ সম্পাদিত ও সংক্ষেপিত]