
27/06/2025
হাসিনার বিচারকে 'প্রহসন' বললো আওয়ামী লীগ, সরকারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ
ঢাকা, বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন' এবং 'একটি অনির্বাচিত সরকারের' সাজানো কার্যক্রম বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে দলটি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে, আইসিসির মতো একটি নিরপেক্ষ তদন্তে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবে এবং দেশের বর্তমান বিচারিক প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "ড. ইউনূসের যদি এই বানোয়াট অভিযোগের ওপর কোনো আস্থা থাকত... তবে তিনি অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠাতেন।" দলটি দাবি করে যে, বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে (আইসিটি) "রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর অস্ত্র হিসেবে" ব্যবহার করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের সময় মারাত্মক সহিংসতার ঘটনা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ওই বিক্ষোভের জের ধরেই ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। নতুন প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর তদন্তের জন্য আইসিটিকে দায়িত্ব দেয়।
আওয়ামী লীগ "গত গ্রীষ্মের বিক্ষোভের সময় দলের সিনিয়র নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে জনতার ওপর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন—এই অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করছে।"
তবে দলটি স্বীকার করেছে যে, "নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্যের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দুঃখজনকভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।" কিন্তু এটিকে "দেশের নির্বাচিত নেতৃত্বের দ্বারা নিজ জনগণের ওপর সমন্বিত আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্পূর্ণ ভুল" বলে দাবি করেছে দলটি।
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয় যে, ট্রাইব্যুনাল বেছে বেছে শুধু আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিচার করছে এবং অন্যান্য ব্যাপক অপরাধ উপেক্ষা করছে। একইসাথে, আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীরা "হয়রানিমূলক মামলা ও কারাবরণের" শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ থাকা দলটি দাবি করছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘের বহুদলীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সুপারিশের পরিপন্থী।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরে বলেছে যে, "আগস্টের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এই বিষয়গুলোর তদন্ত ও জবাবদিহিতা চেয়েছিল।"
সাবেক ক্ষমতাসীন দলের এই কঠোর বিবৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি আইনি প্রক্রিয়াকে ন্যায়বিচারের অংশ হিসেবে না দেখে, বরং ২০২৬ সালের প্রতিশ্রুত নির্বাচনের আগে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্মূল করার জন্য নতুন প্রশাসনের একটি পক্ষপাতমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করছে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বরাবরই বলে আসছে যে, গত বছরের সহিংসতার শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এই বিচার অপরিহার্য।