28/06/2024
নিখিল রঞ্জন মজুমদার
মায়ের প্রত্যাশা
মা আজ এমন ছেলে চায়
সত্য জ্ঞানে উঁচু যার শির সকল বাধার মুখে
মুক্ত চিন্তা শুদ্ধ বুদ্ধি সুবাস ছড়ায় বাকে।
মিথ্যা যাহার বুক পিঞ্জরে পায় না কভু ঠাঁই
মায়ের স্নেহের সব সন্তানে বলবে আমার ভাই।
ভ্রাতৃপ্রেমে বিচ্ছেদ হানি ধর্মকে না ধরে
মানুষ তাই মনুষ্যত্বকে ধর্ম জ্ঞান করে।
ধর্মটা যার পূজ্য নহে ধর্ম মেনে চলা
ধর্ম নিয়ে রচে না যে কাল্পনিক সব পালা।
বিশ্বজনের হিতের তরে যা কিছু রয় ভাল
তাই তুলে নেয় আপন করে ঘুচায় মনের কালো।
জ্বালায় প্রেমের প্রদীপ শিখা মনুষ্যত্বের বলে
ভস্ম করে হিংসা দ্বেষের দুষ্ট রিপুদলে।
বাজায় বাঁশি মানবতার মানুষের হোক জয়
জানায় সবে এই ধরণী সবার মাতা হয়।
প্রত্যেকে তাই সহোদর ভাই এইতো পরিচয়
বাঁশির তানে যে ছেলেটি ছড়ায় বিশ্বময়।
মা এমন ছেলে চায়Ñ
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারÑভাষা শহিদ যত
সবার প্রতি উন্নত শির শ্রদ্ধাতে হয় নত।
বর্ণমালার বর্ণচ্ছটা অন্তরে যার স্থিত
মাতৃভাষার সাধনায় যার চিত্ত সদা প্রীত।
রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কবিতা-গল্প-গানে
মিটায় তাহার প্রাণের তৃষ্ণা অমিয় ধারা পানে।
জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ হৃদে লাগায় দোলা
“নকশি কাঁথার” নকশা বুঝি মনের কাঁথায় তোলা।
মধুসূদন পাঠেতে যার মধু আস্বাদন
নীল লোহিতের কাব্যে করে প্রেমের অন্বেষণ।
সাম্যবাদী সুকান্ত যার পথ চলারই ভাতি
আরজ আলীর “সত্য খুঁজা” ভাবায় দিবা-রাতি।
‘সবার উপর মানুষ সত্য’ চণ্ডীদাসের বাণী
সেই ছেলেটির হৃদ ঘরেতে করছে কানাকানি।
চর্যাপদের গন্ধ শুকে পথ চলা যার শুরু
সুনীতি কুমার, হুমায়ুন আজাদ ভাষা শিক্ষার গুরু।
ডাকে যারে কাতর স্বরে দিজেন্দ্রলাল রায়
“সকল দেশের রাণী সে যে”-স্থান করে নাও পায়।
আ-মরি, বাংলা ভাষা-অতুল যখন গাহে
সেই ছেলেটির মনের মাঝে প্রেম যমুনা বহে।
নদীর বুকে মাঝির মুখে জেলের মুখে গান
মহানন্দে ভরিয়ে দেয় সেই ছেলেটির প্রাণ।
সবুজ শ্যামল এ বঙ্গতল কৃষক যেথায় গায়
সে গান শুনে আপন মনে সুখ শিহরণ পায়।
লালন, হাসন, রাধা রমণ যত বাউল কবি
সবাই যে তার শ্রদ্ধা লভি থাকবেন চিরজীবী।
মায়ের কাম্য ছেলে সেইÑ
মুক্তিযুদ্ধের শহিদকে যে দেবতা বলে জানে
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মানস পিতার স্থানে।
সূর্যসেন আর প্রীতিলতার আত্ম বলিদান
শেখায় তারে জীবন দিয়ে রাখতে দেশের মান।
ক্ষুদিরামের ফাঁসিতে তার আত্মদানের দীক্ষা
সাত মার্চের ভাষণে যার স্বাধীনতার শিক্ষা।
বীরশ্রেষ্ঠ সাত বঙ্গসন্তান রাখি মাথার ’পরে
যে ছেলেটি দেশ প্রেমের স্বপ্ন বুনন করে।
বুকটি যে তার হৃদপিণ্ডটা রাখে দেশের তরে
যদি ডাকে মাতৃভূমি দিবে উজাড় করে।
দেশের মাটি স্বর্ণ খাঁটি আপন দেশের জন
করতে চাহে দেশের তরে জীবন বিসর্জন।
লভে শিক্ষা-জ্ঞান-দীক্ষা দেশের হিতের তরে
ধূপের মত আপনি দহে সুবাস দানে পরে।
ফুটায় জীবন ফুলের মতন সাজায় দেশের কানন
মুক্তধারার বারি সম ধোয়ায় দেশের চরণ।
দেশই স্বর্গ দেশই স্বপ্ন দেশই যে তার প্রাণ
বিদ্রোহী হয় যদি বা কেউ টুটায় দেশের মান।
ঊনসত্তর আর নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান হতে
প্রতিজ্ঞা নেয় লড়তে যেতে জনগণের সাথে।
গণতন্ত্রের বেদীর মূলে দিতে আত্মবলি
নূর হোসেন বা আসাদ হয়ে বুক পেতে লয় গুলি।
দেশের তরে জীবন দিয়ে পূণ্য করে ক্রয়
দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে ভুলে মৃত্যু ভয়।
রক্তে মাংসে বাঙালি হয় স্বর্গ বঙ্গ ভূমি
বিপদ মাঝে ঝাঁপিয়ে পরে দেশের চরণ চুমি।
মধ্যযুগীয় বর্বরতা আর সা¤প্রদায়িক মত
পায়ের তলায় পিষ্ট করে এগিয়ে চলে পথ।
মৌলবাদের হিংস্রতা আর দল বদলের ভীতি
সব ছাড়িয়ে উর্ধ্বে উঠে ঢালবে শুধু প্রীতি।
মায়ের সোনার ছেলে চাওয়াÑ
বাংলা-কে যার সোনার বাংলায় গড়ার অঙ্গীকার
বাণীর বন্যায় দেশ ডুবিয়ে করবে না ছারখার।
কর্ম মাঝে ডুবায় অঙ্গ বঙ্গ লভে ফল
স্বার্থ ত্যাগী হয় বৈরাগী দেশ সেবা সম্বল।
অঙ্গে যাহার বঙ্গজ সাজ আচারে সংস্কৃতি
পাখির মত পরের ভাষায় গাহে না যে গীতি।
বাংলার ফল, বাংলার জল, বাংলার শস্য কণা
সুধাসম তৃপ্ত করে যার অন্তরখানা।
থাক না পরে নিখিল ধরা যতই মনোহরা
জন্মভূমি অমরা তার শান্ত শীতল ধারা।
হাত পেতে লয় মায়েরই দান যা দেয় জন্মভূমি
অল্পতেই যার তুষ্টি আসে দুরন্ত নয় “আমি”।
লোভের বশে সর্বগ্রাসী রূপ ধরে না কভু
মায়ের সাধ এমন ছেলে মিলান যদি প্রভু।