
26/07/2025
ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়ক।
সুরমা নদী ভাঙনে হুমকিতে নির্মাণাধীন সড়ক-ব্রীজ।
ছাতক(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর ভাঙ্গনের কবলে বড় রকমের ঝুঁকিতে পড়েছে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়ক। চলতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতের পানিতে একটি ব্রীজ ও সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যে কারনে সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এই সড়কের চলমান নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারনেই সড়ক ও ব্রীজ হুমকির এখন মুখে। তবে উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারের টেকসই কাজ সম্পন্ন করতে নিয়মিতই মনিটরিং করা হচ্ছে। সড়কটি রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ছাতক সদর ইউনিয়নের আওতাধীন সুরমা নদীর তীর ঘেষে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের অবস্থান।
গত ২০২২ইং সালের স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীন এই সড়কটির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) আওতাধীন সম্প্রতি এই সড়কের ছাতক অংশে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে জন্য ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যায়ে কিশোর গঞ্জ জেলার ভৈরবের মেসার্স মমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে গত বছরের আগষ্ট মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর সড়কাটি সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। এ কাজের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে সংস্কার কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান।
তবে সড়ক মেরামত কাজ চলমান থাকা অবস্থায় দেখা দেয় নদী ভাঙ্গন। কাজের শুরুতেই স্থানীয় লোকজন নানা অনিময়ের অভিযোগ করলেও ঠিকাদার এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে নিজের ইচ্ছে মতোই কাজ সম্পন্ন করেছেন। নিম্ম মানের এমন কাজের জন্য উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগকে দায়ী করেছেন এলাকার অনেকেই।
সরজমিনে ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মল্লিকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি মাজারের পাশে শুরু হয়েছে সুরমা নদী ভাঙ্গন। যা গত কয়েক দিনে ধরে ভাঙ্গনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সড়কের পাকা পর্যন্ত এসে গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এখানে বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারা কাজ সম্পন্ন করেছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বালুর বস্তা গুলো নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। নতুন সংস্কার কাজের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং ধসে যাচ্ছে।
এছাড়াও সড়কের মাছুখালী ব্রীজের এপ্রোচের পশ্চিমাংশ ভেঙ্গে মাটি সরে যাওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন এখানে গাড়ি চলাচলে সতর্কতার জন্য বাঁশ বেঁধে রখেছেন। ব্রীজটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে সড়কটি ভেঙ্গে সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যে কারনে এ সড়কের মল্লিকপুর ও মাছুখালী অংশের নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী প্রয়োজন।
ছাতক সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী ও নোয়াব আলী বলেন, ঠিকাদার কাজের শুরুতেই নানা অনিয়ম করেছে। ঠিকাদার নদীর তীরে কিছু বস্তা দিয়েছিল, দুদিন পরই বস্তা গুলো নদীতে চলে গেছে। এবিষয়ে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এ রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বর্তমানে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মাছুখালী এলাকার বাসিন্দা মো.সমুজ আলী বলেন, মল্লিকপুর মাছুখালীর মাঝখানে যে ব্রীজটি রয়েছে, এটি এখন মারাত্নক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
দূর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে বাঁশ বেঁধে রেখেছেন। এ সড়ক রক্ষায় দ্রুত নদী ভাঙন রোধ করার বিকল্প নেই।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চালে ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের প্রতিনিধি সালেক মিয়া কাজের অনিয়মের বিষয় গুলো অস্বীকার করে বলেন, সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নদী ভাঙনের বিষয়টি কাজ আমাদের নয়, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখবে।
ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের মল্লিকপুর ও মাছুখালী ঝুকিপূর্ণ অংশ পরির্শন করা হয়েছে। এবিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সড়কটি নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।