
08/08/2025
কেন তিনি খতীবে যামান?
খতিবে যামান আল্লামা নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী হুজুর কেন তিনি খতিবে যামান?
১১ ফেব্রুয়ারি ১১ সাল। রোজ বুধবার। জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের ৫০বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সম্মেলন ও দশসালা দস্তারবন্দির প্রথম দিন। সম্মেলন তো নয়, যেন জনসমুদ্র। দ্বিতীয় বিশ্ব ইজতেমা। পবিত্র জুমুআর নামাজ পড়ানোর কথা আধ্যাত্মিক বিশ্বের প্রধান রাহবার, দারুল উলূম দেওবন্দের সবচেয়ে প্রিয় ও আদর্শ উস্তাদ, জমিয়তে উলামা ভারতের সভাপতি, শাইখুল ইসলাম মাদানী রাহ. এর সুযোগ্য সাহেবজাদা আল্লামা আরশাদ মাদানীর। তাঁর সফর ব্যবস্থাপকের নেক তায়াজ্জুহ এর বরকতে (?) আগেই সন্দেহ করা হয়েছিল সঠিক সময়ে উপস্থিতির বিষয়ে। দাওয়াত করে রাখা হয়েছিল সুনামগঞ্জের সুনাম শায়খুল হাদীস নূরুল ইসলাম খান সাহেবকে। অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমায় ব্যবহৃত মাইক আনা সত্ত্বেও যান্ত্রিক কারণে মাইক বন্ধ না হলেও এলাকা দূরে থাকায় মাহফিলের ভিতরাংশও আওয়াজ দিয়ে কাভার করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ যারপরনাই পেরেশান। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকই যথাসময়ে হযরত মাদানী এসে উপস্থিত হতে পারেন নি। এখন কী করা? অবশ্য দেশের শীর্ষ কয়েকজন আলিমই হাযির রয়েছেন। তাই বলে এঁদের কেউ তো আর আরশাদ মাদানীর বিকল্প হতে পারেন না। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে মুশকিলে আসানও উত্তম বিকল্প হয়ে উঠলেন এমন একজন খতীব যাঁর বয়ান শুনলে মুসল্লীরা তীর্থের কাকের মতো চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। বয়ান ছাড়া অন্য কিছুর অনুভব শক্তি হারিয়ে ফেলে। গায়ে চিমটি দিয়ে দেখতে হয় নিজে নিজের মধ্যে আছে কি না। তিনি আর কেউ নন- আমাদের দেশের আলিম সমাজের গৌরব হযরত নূরুল ইসলাম খান সাহেব। তাঁকে জুমুআর খুতবা ও নামাজের দায়িত্ব দেওয়া হল। শুরু করলেন মহানবীর ভাষায় খুতবা প্রদান। খুতবা তো নয়,
যেন স্বকোয়াবী। যেন অদ্ভুত বর্ষন। মুসাজ্জা বা ছন্দাবদ্ধ আরবিতে এমন যথা ও আরবীয় খুতবা নিলেন যা আমার জীবনে শোনা সর্বাধিক আজবনীর স্বতরা। যার জেরে সকল পেরেশানীর মাঝেও যেন এক জান্নাতি মুলক অনুভব করছিলাম। হারিয়ে গিয়েছিলাম সে যাদুকরী ভাষায়। সাবলীল ও সোল্ডগ উনভালগায়। অর্থগিত মধুময় আবেদনে। কুকিলের ন্যায় বশ করা দূর, লয় ও তামে। সেই খুতবা আলিম সমাজকে নিয়ে গিয়েছিল চৌদ্দশ বছর পূর্বের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাঞ্জল ভাষা ও ভাবের মালিক আখেরী নবীর ভালে। যোগা ওয়ারিয়ে মনীর ঘুমুখে তারা যেন নবীকণ্ঠ শুনতে পাচ্ছিল।
সংস্থারদ গোকেরা বুঝে উঠতেই পারে নি যে, হযরত মাদানী জুমুআ পড়ান নি। যেহেতু কেউ এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তুলে নি। কর্তৃপক্ষের জন্য এটা এক বিরাট রহমত হয়ে ওঠল। তারা প্রশ্নবান জনিত পেরেশানী থেকে রেহাই পেলেন।
এটা তাঁর আরবী বক্তৃতার বাস্তব রূপ। বাংলা বা উর্দু ভাষায়ও তিনি একই আদলে বক্তব্য দেন। যা শুনে শ্রোতাদের মাঝে বিরাজ করে পিনপতন নিরবতা। মন্ত্র মুগ্ধের মতো সবাই হাঁ করে বসে থাকে। যেন সবাই অমৃত গিলছে। জান্নাতি সুরের আবহে মজছে। হৃদয়ের পরতে পরতে পরম সুখ অনুভব করছে। তাঁর ভাষা যেমন সাহিত্য মানে উন্নীত। তেমনি আঞ্চলিকতার রেশ থেকেও শতভাগ মুক্ত। যা দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ হলেও শ্রোতামণ্ডলী হয় না বিরক্ত। বরং হয়ে ওঠে ভক্ত ও অনুরক্ত। তবে তাঁর খুতবা বা বয়ান সুরসর্বস্ব নয়। যেমন মধুকণ্ঠী, তেমনি পাণ্ডিত্যপূর্ণ। তাঁর বয়ান থেকে সূর্য কিরণের মতো ইলমের আলো বিচ্ছুরিত হয়। যেভাবে জনসাধারণ উপকৃত হয়, সেভাবে আলিম সমাজেরও জ্ঞানের ঝুলি ভরে ওঠে। এজন্যই তো তিনি খতীবে যামান। বাস্তব অর্থে তাঁর বক্তব্য-
কবিতায় জ্ঞান আছে, আর বাগ্মীতায় জাদু আছে।
'কিছু কবিতায় প্রজ্ঞা থাকে আর কোনো কোনো বয়ানে থাকে যাদুর প্রভাব'। এ হাদীসের সাক্ষাৎ মিসদাক। যথার্থ প্রতিচ্ছবি। তাঁকে এই খেতাব যারা দিয়েছেন, তাদের অশেষ মুবারকবাদ।
আল্লাহ হযরত খান সাহেবকে সুস্থ সবল দীর্ঘ হায়াত দান করুন। এই কামনা রইল বিশ্ব-বিধাতার কাছে। আমীন।
লেখক পরিচিতি: মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামেয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, বিয়ানীবাজার।