11/07/2025
ভিডিও টা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সব দায়িত্বশীল আইনের মানুষকে ইজ রাইল / ইরা ন কেন দেখে না। একটা মারত সবাই এক সাথে ভেনিস হতো।
শুক্রবার ছুটির দিনে ভীষণ মন খারাপ করে লিখছি। ছবিটা দেখেন, ভাবেন! অসংখ্য মানুষের সামনে একজন মানুষকে পিটিয়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এরপর রক্তাক্ত ওই মরদেহের ওপর উঠে দুই তরুণ লাফিয়েছে। একজন মরদেহে চড় মেরেছে আরেকজন লাথি মেরেছে। ভয়াবহ বর্বর এই ঘটনা ঘটেছে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে। না কেউ প্রতিরোধ করতে যায়নি। কেউ একটা শব্দ করেনি। এর নাম বাংলাদেশ!
নিহত মানুষটির নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। তিনি পুরান ঢাকার ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী। একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আচ্ছা এই দুইটা ছেলেমেয়েয কাছে বাংলাদেশ মানে কী বলেন তো?
দেখেন যে দেশে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, মানবিক মূল্যবোধ নেই সেই দেশ ধ্বংস করতে আর কী লাগে? এসব কারণেই অতীতের উন্নয়ন আর এখনকার সংস্কারের সব আলাপ আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়! কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে তো বড় আর কিছু হতে পারে না। গোটা পৃথিবীর বিনিময়ে যেখানে একজন মানুষের জীবন পাওয়া যায় না সেখানে এই দেশে উৎসব করে মব করে মানুষ হত্যা করা হয় এবং রাষ্ট্র নির্বিকার থাকে!
সিসিটিভিতে ধরা পড়া ছবিতে দেখা গেছে, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। লোকজন ঔৎসুক্য নিয়ে দেখছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প ছিল পাশেই। তারাও কেউ এগিয়ে আসেনি।
আপনারা যে কেউ চাইলে সমকালের আজকের লিড নিউজটা পড়তে পারেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘এমন বীভৎসতা আগে দেখিনি।’ তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তরুণদের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় না থাকলে বিপদ আরও বাড়বে। রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে।
শুধু সোহাগ হত্যা নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গতকাল চট্টগ্রামে এক গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ ১১ টুকরো করা হয়েছে।
সমকালের প্রতিবেদন বলেছ, এবং বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে রাজধানীতেই খুন হয়েছেন ১৩৬ জন। সারাদেশে এই সংখ্যা ১ হাজার ২৪৪। ২০২১ সালের প্রথম চার মাসে ঢাকায় এই সংখ্যা ছিল ৫৫, ২০২২ সালে ৫৪, ২০২৩ সালে ৫১ এবং ২০২৪ সালে ছিল ৪৭। সারাদেশের হিসাবে জানুয়ারিতে ২৯৪, ফেব্রুয়ারিতে ৩০৮, মার্চে ৩১৬ এবং এপ্রিলে খুন হয়েছেন ৩৩৬ জন।
সংখ্যার কম বেশি আলাপ বাদ দিন শুধু একবার ভাবেন এই যে উৎসব করে মব করে যেদেশে মানুষ হত্যা করা হয় সেই দেশের ভবিষ্যৎ কী? গণমাধ্যমের খবর বলছে, চলতি বছরের শুরুর ৫ মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৪১টি মব হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
ভাবেন একবার! রাষ্ট্রীয় ক্রসফায়ার গুম নেই কিন্তু মব করে মানুষ হত্যা চলছেই। আচ্ছা এই দেশে মানুষের জীবনের কী কোন দাম নেই? বছরের পর বছর ধরে যে বর্বরতা চলছে সেগুলো কী চলতেই থাকবে?
বছরের পর বছর ধরে লিখছি, বেঁচে থাকার অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। একটা দেশে যতো ঘটনাই ঘটুক, যতো সংকটই আসুক এই দুটো বিষয় ঠিক থাকলে সেই দেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আর এই দুটো সংকটে পড়লে যতো উন্নয়ন বা পরিবর্তনই হোক সেই দেশ বিপর্যয়ে পড়বেই। বাংলাদেশে সব আমলে সব সময়ে এই দুটি বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এই দেশের ইতিহাসে গত ৫৪ বছরে এমন একটা দিনও আসেনি যখন এই দুটি বিষয় ঠিক ছিলো।
দেখেন এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। গোটা পৃথিবীর বিনিময়েও একজন মানুষের জীবন পাওয়া যায় না। কাজেই আদর্শ রাজনীতি বিশ্বাস ধর্ম যাই হোক না কেন কোনভাবেই মানুষ মানুষের ওপর হামলা চালাতে পারবে না। হত্যা করতে পারে না। কিন্তু এই দেশে সব আমলে সবসময় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
দেখেন এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। শুধু ভালো মানুষ নয় এই পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটাকেও বিচারের বাইরে গায়ে হাত তোলা বা তাকে হত্যার অধিকার কারো নেই।
দয়া করে সবাই মনে রাখবেন, গোটা পৃথিবীর বিনিময়েও একজন মানুষের জীবন পাওয়া যায় না। কাজেই আদর্শ রাজনীতি বিশ্বাস ধর্ম যাই হোক না কেন কোনভাবেই মানুষ মানুষের ওপর হামলা চালাতে পারবে না। হত্যা করতে পারে না। আপনার আমার চোখের সামনে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ করতেই হবে।
সারাজীবন বলেছি, লিখেছি- প্রতিটা মৃত্যু কষ্টের। যারা মারা যায় সবার রক্ত লাল। সব স্বজনদের কান্না আর আহাজারি এক। আর আমরা কে কাকে মারছি? সবাই তো বাংলাদেশের নাগরিক।
পুরোনো কথাগুলোই বলি এইসব মব হত্যা যদি বন্ধ না হয়, দিনশেষে যদি আমরা মানুষ না হই, মানবতাবোধকে সামনে না রাখি তাহলে সব বৃথা যাবে। ওপরওয়ালা আমাদের সবাইকে বিবেকবোধবোধ দিন।
জানি না এই রাষ্ট্রের কর্তারা কোথায়া? আল্লাহ তাদের বোধ দিক! বোধ দিক সবাইকে! ভালো থাকুক বাংলাদেশ! ভালো থাকুক প্রতিটা মানুষ।
Copy