
04/05/2025
বিশেষ ছাড়!
কবি সঞ্জয়-বিরচিত 'মহাভারত'
অধ্যাপক ডক্টর মুনীন্দ্রকুমার ঘোষ সম্পাদিত
প্রথম প্রকাশ ১৯৬৯। চৈতন্য সংস্করণ ২০২৪
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ। মূল্য ৩০০০/-
মহাকবি সঞ্জয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও তাঁর অনুদিত বাংলা মহাভারতের নিদর্শন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। গবেষকদের মতে মহাকবি সঞ্জয় ছিলেন সুনামগঞ্জের অধিবাসী। তাহিরপুর উপজেলার লাউড় এলাকা ছিল তাঁর জন্মস্থান। ভূবন বিখ্যাত জাত মহাকাব্য মহাভারতের সর্বপ্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন মহাকবি সঞ্জয়। সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাভারতের অন্য কোন ভাষায় এটিই প্রথম অনুবাদ। প্রায় ৫শত বছর পূর্বে জন্ম নেয়া মহাকবি সঞ্জয় বাংলায় মহাভারত অনুবাদের মাধ্যমে আদি জনক-ভাষা সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলা ভাষার সম্পর্ককে আরো ভাব গাম্ভীর্যময় ও দৃঢ় করেন। মহাকবি সঞ্জয়ের সেই প্রয়াসকে এই স্মারকস্তম্ভে স্থাপত্যের ভাষায় প্রতীকায়িত করা হয়েছে।
কবি ও গবেষক ড. মোহাম্মদ সাদিকের দাবি, বাংলায় মহাভারতের আদি অনুবাদক সুনামগঞ্জের তাহিরপুর অর্থাৎ লাউড়ের মহাকবি সঞ্জয়। মহাকবি সঞ্জয়ের মহাভারতে লাউড়ের নিপতি রাজা ভগদত্ত এবং সৈন্যবাহিনীকে মহাভারতের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের পরিচয় পাওয়া যায় এবং তিনি রাজা ভগদত্তকে বহুবার ‘লাউড়-ইস্বর’ বলে সম্বোধন করেছেন, ‘অঙ্গবীর পড়িল সকলে দিল ভঙ্গ’। ত্বরিৎ গমন সব ভীমের আতংক ॥ তাহা দেখি ভগদত্ত ‘লাউড়-ইস্বর’। চড়ি সুপ্রস্তিক হস্তি দাইল সত্বর ॥
সঞ্জয় বিষয়ক এই গবেষণালব্ধ তথ্য বাংলা সাহিত্য চর্চা তথা মধ্যযুগের সাহিত্যের আদি নিদর্শন সমূহের একটি। অধ্যাপক ড. মুনীন্দ্র কুমার ঘোষ সম্পাদিত কবি সঞ্জয় বিরচিত মহাভারত ১৯৬৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং সেখানে গবেষক কবির পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, সঞ্জয় লাউড়ের এই বরদ্বাজগোত্রীয় বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
সঞ্জয় সংক্রান্ত এই গবেষণাকর্ম ভারতে সম্পাদিত হওয়ায় আমাদের দেশে এই বিষয়ক আলোচনা এখনও সীমিত। আমাদের দেশে মহাকবি সঞ্জয়কে নিয়ে আরও গবেষণা আবশ্যক। সুনামগঞ্জের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাচীণ ইতিহাস আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন মহাকবি সঞ্জয়।
উল্লেখ্য, সিলেট অঞ্চল প্রাচীনকালে যে কয়টি রাজ্যে বিভক্ত ছিল তার অন্যতম লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল তাহিরপুরের হলহলিয়ায়। এখনও ওখানে রয়েছে প্রাচীন নিদর্শন। হলহলিয়া লাউড় এলাকার নিকটবর্তী। বর্তমান লাউড়ের গড়কে ঘিরে ভারত সীমান্তবর্তী যে বাংলাদেশি ভূখন্ড বিস্তৃত রয়েছে সেখানে শ্রীচৈতন্যের অন্যতম পারিষদ অদ্বৈত মহাপ্রভুর জন্মস্থান। মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব সাহিত্যের অনেক অমরকীর্তি এই এলাকায় এবং এলাকার মানুষের হাতে রচিত হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে সেইসব ঐতিহাসিক নিদর্শন লুপ্তপ্রায়।