18/02/2025
দুর্ব্বৃত্ত জাতি
বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে, এখন ২০২৫, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এর তথ্য ও বিবরণ অন্য কোথাও আলোচিত না-হওয়ায় শতাব্দপ্রাচীন এই বইয়ের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। এমনিতে ঔপনিবেশিক শাসকেরা সাধারণত যা করে থাকেন, এখানেও তাই করেছেনÑশাসনকাজের সুবিধার কথা ভেবে ব্যবহারিক কারণেই লিখেছেন বইটি। বইয়ের নাম ‘বাঙ্গালাদেশে যে সকল দুর্ব্বৃত্ত জাতি চুরি ডাকাইতি প্রভৃতি করে তাহাদের সম্বন্ধে পুস্তক’, লেখক বাঙ্গালা পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনেরাল এফ্, সি, ডালি, সি, আই, ই, আর মুদ্রক কলকাতা ‘বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েট যন্ত্রালয়’। এ-ধরনের অন্যান্য বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা থেকে আন্দাজ করি, এটি দাপ্তরিক প্রয়োজনে অল্পসংখ্যক বের হয়েছিল,১ যে-কারণে বহুল প্রচারের কোনো সুযোগই আর তৈরি হয়নি।
বইয়ের শুরুতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের একুশ তারিখে লিখিত ভূমিকায় এফ, সি, ডালি জানিয়েছিলেন, বাংলার অধিবাসী এবং অন্য প্রদেশ-থেকে-আসা লোকদের মধ্যে যারা চুরি-ডাকাতি করে তাদের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে পুলিশ কর্মচারীদেরকে শিক্ষা দেওয়াই এই বই লেখার উদ্দেশ্য। আরও লিখেছিলেন :
কার্য্যক্ষেত্রে পুলিশ কর্ম্মচারিগণকর্তৃক ব্যবহারের জন্য এই পুস্তক লিখিত হওয়ায় ইহাতে দুর্ব্বৃত্ত জাতিদিগের উৎপত্তি বা জাতিতত্ত্ব সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা প্রয়োজন মনে হয় নাই। আশা করা যায় যে, কার্য্যক্ষেত্রে যে সকল বিষয় জানা আবশ্যক হয় এই পুস্তকে কেবলমাত্র সেই সকল বিষয়ের আলোচনা থাকায় পুলিশ কর্ম্মচারিগণ এই পুস্তক আগ্রহ করিয়া পড়িবেন, বুঝিবেন ও মনে রাখিবেন।
স্পষ্ট বোঝা যায়, কাজের ক্ষেত্রে যে-সকল বিষয় জানা দরকার, আরও স্পষ্টভাবে বললে, এদেরকে চিনে, ধরে, শায়েস্তা করার জন্য যা যা দরকার, তারই জন্য তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, কোনো জাতির উৎপত্তি বা জাতিতত্ত্ব সম্বন্ধে সবিস্তার বিবরণ প্রকাশ করা এ-বইয়ের লক্ষ্য নয়।
বইটি বাজারজাত করার লক্ষ্যে বের হলে, বা কোনোভাবে বাজারে এলে, যেকোনো পাঠকের মনে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো জাগত :
১. এ-বইয়ে যাদেরকে ‘দুর্ব্বৃত্ত’ বলা হচ্ছে, তা সংগত কি না;
২. এরা কি জাতি, না পেশাজীবী?
৩. তারা যে এইসব অপরাধের/পেশার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছে বা জড়াতে বাধ্য হয়েছে, এর নেপথ্যের সামাজিক কারণগুলো কী?
৪. পরিচয় জানতে চাইলে এদের অনেকেই তথ্য গোপন রাখতে চায় কেন?
এইসব প্রশ্নের উত্তর কোনো ঔপনিবেশিক শাসক, লেখক বা তথ্যসংগ্রাহকের কাছে পাওয়ার কথা নয়, এর উত্তর দিতে গেলে এর দায়টা যে নিজেদের ঘাড়ে নিতে হবে এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ তো উনিশ শো চল্লিশ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথই দিয়ে গিয়েছিলেন। ‘পল্লীসেবা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, নিজে শহরবাসী হলেও ইংল্যান্ডের কোনো এক গ্রামে এক গেরস্ত চাষির ঘরে তিনি কিছুসময় থেকেছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁর থাকতে কোনো অসুবিধা হয়নি; তবু তিনি খেয়াল করেছিলেন সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও গ্রামের চাষিরা শহরে চলে যেতে আগ্রহী এবং গ্রামে থাকার কারণে তারা নিজেদেরকে ‘বঞ্চিত’ও মনে করে। রবীন্দ্রনাথ তাদেরকে জিজ্ঞেস করে এর কারণ জেনেছিলেনÑইউরোপের শহর আর গ্রামের মধ্যে যে-ব্যবধান রয়েছে, তা পরিমাণগত, অর্থাৎ শহরে যা বহুল পরিমাণে পাওয়া যায়, গ্রামে সেরকম পাওয়া যায় না। যা বলবার জন্য রবীন্দ্রনাথ এ-অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন এখানে তা সরাসরি পড়ে নিতে পারি :
চৈতন্য স্টল নাম্বার ৬০৭-৬০৮