08/09/2025
ধানের জমিতে পার্চিং, লাইন ও লোগো পদ্ধতি।
লাইন ও লোগো পদ্ধতি হলো ধান চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তি যার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ধানের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
লাইন পদ্ধতিতে ধান চাষঃ লাইন বা সারি পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ২০-২৫ সেমি বা ৮-১০ ইঞ্চি। ধানের সারিতে গুছি থেকে গুছির দূরত্ব হতে হবে ১৫-২০ সেমি বা ৬-৮ ইঞ্চি।
লাইন বা সারি পদ্ধতিতে চারা লাগানোর সুবিধাসমুহঃ
লাইন বা সারি করে চারা লাগালে গাছ পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো ও বাতাস পেয়ে থাকে। ফলে গাছের সালোকসংশ্লেষণে সুবিধা হয়।
সহজেই গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়।
লাইন বা সারি করে চারা লাগালে ধান গাছের অান্তঃপরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহার করে খুব সহজেই জমি আগাছামুক্ত করা যায় এবং খরচও কম হয়ে থাকে।
এই পদ্ধতিতে সার প্রয়োগে সুবিধা হয়।
লাইন বা সারি পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে জমিতে তুলনামুলকভাবে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
লোগো পদ্ধতিতে ধান চাষঃ
লোগো পদ্ধতিও ধান চাষের নতুন একটি প্রযুক্তি। ধানের চারা রোপণের সময় প্রতি ১০ সারির পরে একটি সারি বাদ দেওয়া বা ফাঁকা রাখাই হলো লোগো পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রতি ১০ সারি পরে ১২-১৬ ইঞ্চি ফাঁকা রাখা উত্তম। ধানের চারা রোপণের সময় প্রতি ১০ সারির পরে ১ টি লাইনে ধানের চারা লাগানো বাদ রেখে অন্য লাইনে চারা লাগাতে হবে। এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ জমিতে ধানের চারা রোপণ শেষ করতে হবে।
ধান চাষে লোগো পদ্ধতির সুবিধাসমুহঃ
বাদামী ঘাসফড়িং ও মাজরা পোকা ধান গাছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। ছায়াযুক্ত স্থানে সাধারণত এ ধরনের পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। লোগো পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হলে ধান গাছ পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস পাওয়ায় পোকার আক্রমণ কমে যায়। জমিতে এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আগাছা দমন, সঠিকভাবে সার প্রয়োগ ইত্যাদি অান্তঃপরিচর্যা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া আগাছা পরিষ্কারের সময় লোগোর লাইনে বা সারিতে তা পুতেঁ রাখলে ভালো জৈব সার হয়। লোগো পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো লোগোযুক্ত জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ কম হয়ে থাকে।
পার্চিং :
পার্চিং একটি প্রাকৃতিক পোকা দমনের পদ্ধতি যেখানে ফসলের জমিতে গাছের ডাল, বাঁশের কঞ্চি বা খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয়, যাতে পাখিরা সেগুলোতে বসে ক্ষতিকারক পোকামাকড়, পোকার মথ ও ডিম খেয়ে ফেলতে পারে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে কম খরচে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখা।
পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের কারণ
জৈবিক দমন:
এটি একটি জৈবিক দমন ব্যবস্থা, যেখানে প্রকৃতি ও প্রাণীর ব্যবহারেই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পরিবেশবান্ধব:
কীটনাশকের ব্যবহার না করে ফসলকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, যা পরিবেশের জন্য নিরাপদ।
খরচ সাশ্রয়ী:
কম খরচে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ফসল রক্ষা করা যায়।
কীভাবে পার্চিং করা হয়
1. বস্তু স্থাপন:
ফসলের জমিতে গাছের ডাল, বাঁশের কঞ্চি, খুঁটি, ধইঞ্চার ডাল বা T-আকৃতির দণ্ড খাড়াভাবে পুঁতে দেওয়া হয়।
2. পাখিদের আকর্ষণ:
এই উঁচু জায়গাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পাখি এসে বসে।
3. পোকা দমন:
পাখিরা তখন জমিতে থাকা ক্ষতিকারক পোকামাকড়, যেমন – পোকার মথ ও ডিম খেয়ে ফেলে, ফলে পোকার সংখ্যা কমে যায়।
সুবিধা ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন হয়, কীটনাশকের ওপর নির্ভরতা কমে, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমে, পরিবেশ দূষণ হ্রাস পায়, ফসলের উৎপাদন বাড়ে.
#কৃষিকথা