12/07/2025
হুশআপে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, বিয়ে করতে চান না কেন? নিজেকে কি খুব স্পেশাল মনে করেন?
উত্তর দিয়েছিলাম, না। একদমই মনে করি না।
আমরা আসলে কেউই স্পেশাল না। অসাধারণ না। হ্যাঁ, কিছু মানুষের কিছু গুণ আছে। যা অন্যের নেই। কারো রূপ আছে বেশি। কারো মেধা আছে বেশি। কিন্তু এগুলো সবই আপেক্ষিক।
ভার্সিটিতে কিছু মেয়ে এমন ছিলো যাদের জন্যে ছেলেরা ফিদা ছিলো। তাদের সাথে প্রেম করতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে— এমন অবস্থা।
কিন্তু ওদেরকে একপাশ দিয়ে দেখলে আমি ডিপার্টমেন্টের অন্যপাশ দিয়ে হেঁটে যেতাম— এতোটাই ওদেরকে বিরক্ত লাগত আমার। যে রূপ বহু ছেলেকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছিলো, আমাকে তা একটুও স্পর্শ করে নি। আবার আমাকে যা মোহগ্রস্ত করে, তা হয়তো আরেকজনের কাছে একটুও ভালো লাগে না।
একই ব্যাপার, গুণের ব্যাপারেও খাটে। কেউ হয়তো মেধাবী ছাত্র। অনায়াসে ফুরিয়ার ইকুয়েশন সলভ করতে পারে। অনেকের কাছে এ মেধার কোনো মূল্য নেই। এগুলো খাতার হিজিবিজি ছাড়া তার কাছে কিছুই না।
কেউ আবার খুব ভালো কবিতা লিখতে পারে। কিন্তু কারোর কাছে কবিতা গার্বেজ ছাড়া কিছুই না। তাদের কাছে কবিতা হচ্ছে অনর্থক কথাবার্তা। সহজ কথাটা পেঁচিয়ে বলা। ঢঙ করে কথা বলা।
তাই ভালোলাগা, না লাগাটা আমাদের চোখের ওপর নির্ভর করে। যাকে ভালো লাগে, তার সবকিছুই ভালো লাগে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তার নাকে যখন সর্দি লেগে থাকে, সেটাও দেখতে ভালো লাগে। ইচ্ছে করে হাত দিয়ে মুছে দিতে।
সহজ করে বললে, আমাদের চোখ, আমাদের মায়া— মানুষকে আলাদা বানায়। মানুষ নিজ থেকে আলাদা খুব কমই হয়। যখন সে মায়া-মোহ চলে যায়, তখন নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হয়। আরে! এই মানুষটাকে আমি এতো পছন্দ করতাম! ও তো একদম সাধারণ!
কিন্তু আসল সত্যিটা হচ্ছে প্রতিটা মানুষই প্রায় একরকম। সাধারণ।
এক উর্দু কবি তাই বলছেন,
“কিতনি গওর সে দেখা হোগা তুমহে মেরি নজরোঁ সে,
কি তেরে বাদ কোয়ি অওর চেহরা খাবসুরত না লাগা”
তবে মানুষকে ভালো লাগতে পারা, তার কাজে মুগ্ধ হতে পারাটাও একটা গুণ। জীবন মানুষকে শীতল করতে করতে একসময় এমন জায়গায় নিয়ে আসে যে, তার আর কোনো কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই সে আর মুগ্ধ হয় না।
বেশিরভাগ মানুষের জীবনে এ ঘটনা বৃদ্ধ বয়সে ঘটলেও অনেকে যুবক বয়সেই দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। জীবন তার কাছে অর্থহীন মনে হয়।
জীবনের এ স্তরটা আসলে খুব কঠিন। নির্মম। তখন মানুষের হৃদয়টা মরে যায়। চোখ দুটো নিষ্প্রভ হয়ে যায়। যে কখনো জীবনের এ স্তরে আসে নি, অনুভূতিগুলোকে নিজে অনুভব করে নি— তাকে লিখে সেটা বোঝানো যাবে না।
মাহমুদ দারবিশ তার এক কবিতায় এই অবস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন একদম সংক্ষেপে। এই কবিতা আবৃত্তি করতে করতে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন,
لا شيءَ يُعْجبُني
أُريد أن أبكي
"কিছুই আর আমায় বিস্মিত করে না,
আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে!"
তাই কেউ আমাকে ভালোবাসে, এটা যতোটা না আমার স্পেশালিটি, তারচে' বেশি তার স্পেশালিটি। কারণ, এই দুনিয়া এখনো তাকে মেরে ফেলেনি। সে এখনো মুগ্ধ হতে জানে। ভালোবাসতে জানে আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষটাকেও।
হিন্দি ভাষার এক লেখক তাই লিখেছেন,
"কেউ ভালোবাসলে আমরা মনে করি, আমরা এতোটা ভালো বলেই হয়তো সে আমাদের ভালোবাসে।
কিন্তু আমরা কখনো এভাবে চিন্তা করি না, কেউ আমাদেরকে ভালোবাসতে পারে এ জন্যেও যে, সে নিজে একজন ভালো মানুষ।"
কালেক্টেড ✅
—শিহাব আহমেদ তুহিন ভাই
Md Rakib Hasan 🥀
Follow mee