13/07/2025
কেন সমাজের এই অবস্থা?
ধ্বংসপ্রাপ্ত সামাজিক ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রসবিত সন্তানের কাছ থেকে আর কি আশা করতে পারি। আমাদের যে শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা তার মধ্য থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারি না। বোকামি। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আপনি কতজনকে কুলাঙ্গার বলবেন? কতজনকে বেয়াদব বলবেন? কুলাঙ্গার আর বেয়াদব তো সেদিন থেকেই তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে, যেদিন জাতীর মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থার মানদণ্ডকে পাসের হার দিয়ে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে। কোয়ালিটি নয়, কোয়ান্টিটি দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করা শুরু হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ও তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সরবরাহের যে ঠিকাদারী নেয়া হয়েছিল সেখান থেকেই শুরু হয় ধ্বংসের।
এই দোষ আমি কোনভাবেই এই মেয়েকে দেবো না। এই দোষ আমাদের সমাজ ব্যবস্থার, শিক্ষা ব্যবস্থার, সর্বোপরি রাষ্ট্রের। কারণ রাষ্ট্র তাকে শেখাতে পারে নাই, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয়। রাষ্ট্র তাকে শেখাতে পারে নাই, পরিবাররের সাধ্য না থাকলে, নিজেকে অর্জন করে নিতে হয় যোগ্যতা ও শ্রম দিয়ে।
পরিবারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বাহাবা অর্জন যে গর্বের নয়, বাবা-মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বাহাবা অর্জন নিজের ও পরিবারের জন্য সম্মানের নয়, এই বোধটুকু এই রাষ্ট্র, শিক্ষা ব্যবস্থা মেয়েটিকে শেখাতে পারে নাই। অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে বাবা-মাকে দোষারোপ করা গর্বের নয়। এটা আমার রাষ্ট্র মেয়েটিকে শেখাতে পারে নাই। এটাই রাষ্ট্রর ব্যর্থতা।
হ্যাঁ আপনি বলতেই পারেন, আমি একটি কুলাঙ্গার, বেয়াদব মেয়ের পক্ষে কথা বলতেছি, আপনার মনে হতেই পারে। কেউ কি কুলাঙ্গার, বেয়াদব হয়ে জন্ম নেয়? যাদের সন্তান এই ধরনের কুলাঙ্গার আর বেয়াদব হয়েছে, তাদের কষ্টটা কি একবার অনুধাবন করেছেন?
এখন যদি প্রশ্ন করি রাষ্ট্র কে? রাষ্ট্রের মালিক কে? তাহলেই দ্বিধা বিভক্তি শুরু হয়ে যাবে। রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। আমাকে ট্যাগ দেয়া শুরু হবে। হোক। কিন্তু এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ হলেও জনগণ কি রাষ্ট্রের কেউ? জনগণ রাষ্ট্রের কেউ নয় বলেই তাদের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে সজাগ নয় রাষ্ট্র। আর তাই ধ্বংস হয়েছে সামাজিক ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি আগেও ছিলো। কিন্তু এরকম ছিলো কি? ছাত্রদের দাবিদাওয়ার জন্য ছাত্র সংসদ ছিল। সেই ছাত্র সংসদে প্রতি বছর ছাত্ররা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতো। আর প্রতিনিধিরা শুধু ছাত্রদের নিয়েই থাকতো। আর এখনকার ছাত্র সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যই অছাত্র। আর তারা নেতাদের লেজুরবৃত্তি করে, তাদের লাঠিয়াল হয়। এই আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা।
আমি এই মেয়েটার কোন দোষ দেই না। দোষ রাষ্ট্রের। দায় রাজনীতিবিদদের, যারা দেশ চালায়। কারণ যারা সকল বাঁধা অতিক্রম করে নিজেদের শিক্ষিত করে তুলছে, তাদের জন্য এই রাষ্ট্র কি করছে। শিক্ষিত হয়ে, চাকুরি করা ছাড়া আর কিছু নেই দেশে। সেটাও কি সবার ভাগ্যে জোটে? যে চাকরির আশায় তারা লেখাপড়া করেছে, সেটাও সোনার হরিণ। কোটা পদ্ধতি, ঘুষ, আত্মীয়করণের মাধ্যমেই তার সবটুকু শেষ।
দেশে কোন গবেষণা কেন্দ্র আছে? নাই। কেন নাই? গবেষণা কেন্দ্র থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে, জাতির চোখ খুলে যাবে, তখন এই ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদদের চিনে যাবে, তাই জাতির উন্নয়ের জন্য, ভালো কাজ করতে আগ্রহী না রাজনীতিবিদরা।
দেশে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান থাকলে কেউ কি রাজনীতিবিদদের পেছনে ঘুরবে? এটা আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা খুব ভাল করে জানে, তারা দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের উন্নয়নের জন্য মগ্ন থেকেছে বেশি। প্রমাণ তো ভুরি ভুরি। এজন্য অধিকাংশ শিক্ষিত যুবক হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। কিছু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবাজদের ধোকায় পড়ে আরো বড় ধোকাবাজ তৈরি হয়েছে।
আর তাদের পরিচালিত দেশে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে আপনাদের অনেকের মতে এই ধরনের কুলাঙ্গার আর বেয়াদব।
#বাংলাদেশ #শিক্ষা #সমাজ #মৌলিক