28/07/2025
টাংগাইলের বাঁশ ও বেত শিল্প💥
টাঙ্গাইলের বাঁশ ও বেতশিল্পেরও রয়েছে একটি সুপ্রাচীন ইতিহাস। বাঁশ দিয়ে শুধু বাঁশি তৈরি হয় নি। এদিয়ে তৈরি হয়েছে নানাবিধ উপকরণ। টাঙ্গাইলের বেতঝোপ থেকে বেত কেটে এনে হাতের গুণে তৈরি করা হয় নানা প্রকার ব্যবহার যোগ্য জিনিস। বেতের ডালিয়া, ধান চাউলের বেড় ও তিল তিসি, সরিষা রাখার ছোট বড় ডুলি। বাটখারা প্রচলনের পূর্বে পাঁচসেরি মুনকা বা ধামার ব্যবহার ছিল। এখনো গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। বাঁশের চটি দিয়ে তৈরি হয় ডালি, চাটাই, ধাড়ি, কাইত্যা, বেড়, ডুলি, ঘরের বেড়া। এছাড়াও টুকরি, ঝাকা, কূলা, চালনি, খালই, তালাই প্রভৃতি। আজো গ্রাম বাংলায় কৃষিকাজ করার জন্য কৃষকের মাথায় মাথাইল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। টাঙ্গাইলের বিপুল সংখ্যক নারীপুরুষ বাঁশজাত সামগ্রী তৈরির কাজে নিয়োজিত আছেন।
টাঙ্গাইলের পাট বেতের সাহায্যে চমৎকার হস্তশিল্প শীতল পাটি তৈরি হয়। বুনন কৌশলে ও কাজের দক্ষতায় যে কোনো সাধারণ পাটিতেও ফুটিয়ে তোলা হয় জ্যামিতিক নকশা। এছাড়া জীবজন্তু, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, ফুল, লতাপাতা, মিনার, মসজিদ, নৌকা, পালকী, প্রভৃতি ফুটে উঠে শীতল পাটির বুননের মাধ্যমে। টাঙ্গাইলের কালিহাতি ঘাটাইল, বাশাইল, মির্জাপুর, নাগরপুর ও দেলদুয়ারের পাইতারা সম্প্রদায় পটিয়াল বলে পরিচিত। তারা সাধারণ ও শীতল পাটি বুনে থাকে। টাঙ্গাইলের গ্রামাঞ্চলে ৫/৭ ফুট উঁচু একপ্রকার গাছের ছাল দিয়ে পাটি তৈরি করা হয়। গরমের সময় কারুকার্যময় শীতল পাটি বিছানায় ব্যবহার করলে শরীর ঠান্ডা হয়। এক সময় টাঙ্গাইলের পাটি সুদূর কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হতো। টাঙ্গাইলে এখনও পাটি বোনার যথেষ্ট কারিগর রয়েছে। বিশেষভাবে এলাসিনের কিছু কারিগরেরা সিলেটের মতো উৎকৃষ্ট পাটি প্রস্তুত করতে পারে। কুটিরশিল্পের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অঙ্গ। কাগমারী, তারটিয়া, মটরা, এলাসিন, কালিহাতী, মির্জাপুর প্রভৃতি পাটুনিদের তৈরি জিনিষ সমূহ বিশেষভাবে সমাদৃত। এই শিল্পের সম্ভাবনা এখনো প্রচুর। তবে কাঁচামালের অভাব এবং উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার ফলে এই শিল্প হুমকির সম্মুখীন।