02/07/2025
দুইটা দ্বীপ। মাঝখানে ৪.৮ কিলোমিটারের মতো সমুদ্র। খুব বেশি না। ভালো জুতা থাকলে মিনিট চল্লিশ হাঁটলেই এই দূরত্বে পৌঁছে যাওয়া যায়। শীতকালে বরফ জমে যায়। পানির ওপরে সাদা চাদর। মানুষ সেই চাদরের উপর দিয়ে হেঁটে চলে যায় এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে।
সাধারণ একটা দৃশ্য।
কিন্তু এই হেঁটে চলাটাই সময়ের গায়ে একটা ধাক্কা দেয়।
কাছাকাছি এই দুই দ্বীপের একটাতে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি আজ। অন্যটায় পৌঁছালেই আপনি আগামীকাল।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
ধরুন আপনি ভোর ছয়টার সময় যাত্রা শুরু করলেন এবং ৪০ মিনিটে পৌঁছাবেন বলে আশা করছেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ঘড়িতে দেখা যায়, পার হয়ে গেছে ২২ ঘন্টা, তখন রাত ৪টা!
এই দুইটা দ্বীপ আমেরিকা আর রাশিয়াতে অবস্থিত। আজ যদি বৃহস্পতিবার হয়, আপনি লিটল ডায়োমিডে—মানে আমেরিকার সীমানায়।
আপনি হেঁটে বিগ ডায়োমিডে গেলেন—মানে রাশিয়া। আপনি পৌঁছে গেলেন শুক্রবারে। এক দিন আগিয়ে গেলেন।
কারণটা আন্তর্জাতিক সীমারেখা! এভাবেই দুই দেশের সময় নির্ণয় করা হয়।
এই লিটল ডায়োমিডে থাকে কিছু মানুষ। খুব বেশি না—প্রায় ৮০ জনের মতো।
তারা সবাই ইনুপিয়াক নামের এক প্রাচীন আদিবাসী জনগোষ্ঠী।
উত্তরের হিম ঠাণ্ডা, বরফের পাহাড়, কুয়াশা আর সীল শিকার—এসবই ওদের জীবনের অংশ।
বাচ্চারা ছোট ছোট স্কুলে যায়, বড়রা মাছ ধরে, বরফে ছিদ্র করে প্রাণী শিকার করে, রাতে আগুন জ্বেলে গীত গায়।
আর বিগ ডায়োমিডে?
ওখানে কেউ থাকে না।
শুধু রাশিয়ান সেনারা। সামরিক এলাকা।
চাইলেও কেউ যেতে পারে না।
এই দুই দ্বীপ যেন দুই ভাই—একজন কথা বলে, হাসে, মাছ ধরে। আরেকজন চুপ করে বসে থাকে, কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে।
তবু কিছু ব্যাপার আছে—
বিগ ডায়োমিডকে ডাকা হয় টুমোরো আইল্যান্ড, আর লিটল ডায়োমিড ইয়েসটারডে আইল্যান্ড।
মাত্র ৪.৮ কিলোমিটার হেঁটে গেলে আপনি একদিন পিছিয়ে যেতে পারেন, কিংবা ভবিষ্যতে ঢুকে পড়তে পারেন।
এই দুই দ্বীপের মাঝখান দিয়েই চলে গেছে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। একরকম কল্পনার দাগ—নেই তেমন কিছু চোখে দেখা যায়, তবু তার গুণে সময় বদলে যায়।
আকাশ এক, সাগর এক, বাতাস এক।
তবু সময় দুই রকম।
এ এক বিস্ময়ের ভূগোল।