
30/07/2025
🌿🌼 #হরেকৃষ্ণ_নাম_কেন_মহামন্ত্র ❓
নামের মহিমার বর্ণনায় শাস্ত্রে ভগবানের কৃষ্ণ, রাম, বিষ্ণু, নারায়ণ, গোবিন্দ, বাসুদেব, হরি আদি ভগবৎস্বরূপ-বাচক শব্দবিশেষই উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীহরিভক্তিবিলাসে শাস্ত্র বাক্য তুলে ধরে বলা হয়েছে:
🌿🌺 নাম্নাং মুখ্যতরং নাম কৃষ্ণাখ্যং মে পরন্তপ।
প্রায়শ্চিত্তশেষাণাং পাপানাং মোচকং পরম্।।(১১/২৬৪)
🌿🌺 অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “হে পরন্তপ, আমার নাম সমূহের মধ্যে 'কৃষ্ণ' নামই মুখ্যতর ; তা অশেষ পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ এবং প্রধান মুক্তিদায়ক।”
এ স্থলে কৃষ্ণ নামের কথা বলা হয়েছে, মন্ত্রের কথা বলা হয় নি। "মন্ত্র" শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ:- "যা মনন করার মাধ্যমে ত্রাণ পাওয়া যায়।" অর্থাৎ মুক্তিলাভ করা যায়। মন্ত্রকে নাম বলা হয় না। মন্ত্রের মধ্যে ভগবানের নাম থাকে বলে মন্ত্রকে নামাত্মক বলা হয়। শ্রীজীব গোস্বামীপাদও মন্ত্রকে নামাত্মকই বলেছেন।
"ননু ভগবন্নামাত্মক এব মন্ত্র" ( ভক্তিসন্দর্ভ ২৮৪ )
মন্ত্রে “নমঃ”, “ওঁ”, “ক্লীং”, “স্বাহা” ইত্যাদি থাকে, কিন্তু ভগবন্নামে তা থাকে না। মন্ত্র ও নামের মহিমা সমান নয়। মন্ত্রে নাম অবস্থান করে বলেই মন্ত্রের মন্ত্রত্ব।
স্বয়ং ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর কৃষ্ণমন্ত্র ও কৃষ্ণনামের বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন–
"
🌿🌼 কৃষ্ণমন্ত্র হৈতে হ'বে সংসার-মোচন।
কৃষ্ণনাম হৈতে পা'বে কৃষ্ণের চরণ।।
নাম বিনা কলিকালে নাহি আর ধর্ম।
সর্বমন্ত্র সার নাম- এই শাস্ত্র মর্ম।।
(চৈ.চ. আদি ৭/৭১-৭২)
🌿🌼 অর্থাৎ কৃষ্ণমন্ত্রের দ্বারা সংসার থেকে মুক্তি লাভ হয় আর কৃষ্ণনাম দ্বারা জীব ভক্তি লাভ করে শ্রীকৃষ্ণের চরণ প্রাপ্ত হয়। এজন্য সাধন হিসেবে মন্ত্র অপেক্ষা নাম শ্রেয়। হরিভক্তিবিলাসে (২/১১/৪৫৪) বলা হয়েছে-
🌿🌺 যেন জন্মশতৈঃ পূর্বং বাসুদেবঃ সমর্চিতঃ।
তন্মুখে হরিনামানি সদা তিষ্ঠন্তি ভারত।।
🌿🌺 অর্থাৎ হে ভরতবংশজ, যিনি পূর্বে শত শত জন্ম ধরে শ্রীবাসুদেবকে সম্যকভাবে অর্চন করেছেন ; তাঁর মুখে শ্রীহরির নাম সর্বদা বিরাজ করেন।
[এখানে শত শত জন্মের অর্চনের চেয়েও হরিনামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন হয়েছে ]
ভগবানের নাম ভগবান হতে অভিন্ন। মন্ত্রসিদ্ধির মাধ্যমে যা লাভ হয়, কেবল নামের আভাসেই তা অনায়াসে লাভ করা যায়। মন্ত্রেও নামই বিদ্যমান। মন্ত্র থেকে নামকে পৃথক করলে মন্ত্রের মন্ত্রত্বই থাকে না। পক্ষান্তরে শুধু নাম উচ্চারণ করলেই মন্ত্র উচ্চারণ হয়ে যায়।
মন্ত্র অপেক্ষা নামের মহিমা অত্যধিক বলেই নামকে মহামন্ত্র বলা হয়। মন্ত্রে ভগবান বা ঋষিগণের শক্তি আহ্বান করা হয়, কিন্তু মহামন্ত্র বা নাম সর্বশক্তিমান ভগবানের অভিন্ন প্রকাশ। অনেকেই মনে করেন, মন্ত্রের দ্বারা ভোগাদি নিবেদন করা যায়, কিন্তু নামের দ্বারা করা যায় না। এ ধারণা দূর করার জন্য শ্রীমন্মহাপ্রভু স্বয়ং শিক্ষা দিয়েছেন-
"ভিক্ষা নিমন্ত্রণে প্রভু বলেন হাসিয়া।
চল, আগে তুমি লক্ষেশ্বর হও গিয়া৷।
প্রভু বলে, জানো- লক্ষেশ্বর বলি কারে?
প্রতিদিন লক্ষনাম যে গ্রহণ করে।।
সে জনের নাম আমি বলি লক্ষেশ্বর।
তথা ভিক্ষা আমার, না যাই অন্য ঘর।।"
(চৈ.ভা ১০/১১৭,২১-২২)
প্রতিদিন লক্ষ নাম গ্রহণ না করা পর্য্যন্ত ভগবান মন্ত্রের দ্বারা প্রদত্ত নৈবেদ্যও গ্রহণ করতেন না। শ্রীখণ্ডের মুকুন্দের পুত্র রঘুনন্দন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
🌿🌺 শ্রীমুকুন্দাচার্য্য শ্রীবামনদেবকে (ভা.৮/২৩/১৬) বলেছেনঃ
"মন্ত্রতস্তন্ত্রতশ্চিদ্রং দেশকালাহবস্তুতঃ।
সর্বং করোতি নিশ্ছিদ্রংমনুসংকীর্তনং তব।।"
🌿🌺 অর্থাৎ উচ্চারণের ত্রুটি হেতু মন্ত্রগত, ক্রমবিপর্যয়াদি দ্বারা তন্ত্রগত এবং দেশগত, কালগত, পাত্রগত এবং দক্ষিণাদি বস্তুগত যে যে ত্রুটি ঘটে, আপনার নাম সংকীর্তন সেসকলকে নির্দোষ করে।
কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীগৌরহরি স্বয়ং ষোলনাম বত্রিশ অক্ষর সমন্বিত শ্রীকৃষ্ণনামকে "মহামন্ত্র'' বলে অভিহিত করেছেন।
🌿🌼 প্রভু বলে কহিলাম এই মহামন্ত্র।
ইহা জপ, গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।। (চৈ.ভা.মধ্য ২১/৭৮)
এছাড়া হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কে মহামন্ত্র বলার আরো কিছু কারণ হলো, তা মন্ত্র ও নাম উভয়ই। অন্য মন্ত্রে যেমন দীক্ষা প্রদান করা হয়, হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে তেমনি দীক্ষা প্রদান করা হয়। আবার তা গ্রহণ করবার জন্য দীক্ষারও অপেক্ষা করতে হয় না। গুরুদেব শিষ্যকে মহামন্ত্র দীক্ষা প্রদান করেন। গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে এ ধারা প্রচলিত। যদি তা কেবল নাম হতো, তাহলে গুরুর কাছ থেকে দীক্ষার প্রয়োজন হতো না। তবে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ মন্ত্র ত্রিকাল, একাসনে উপবেশন, করন্যাস ও শৌচাদি মন্ত্রবিধির অতীত। এ মহামন্ত্র তারক (মুক্তিদানকারী) ও পারক(প্রেমদানকারী) উভয়ই। প্রতি কলিযুগে যুগাবতারের দ্বারা প্রবর্তিত কলির যুগধর্ম মহামন্ত্রকে তারকব্রহ্ম নাম বলা হয়। যা কেবল মুক্তি প্রদান করে। কিন্তু যে বিশেষ কলিযুগে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু অবতীর্ণ হয়ে নাম বিতরণ করেন, সে নাম পারকব্রহ্মনাম বলে খ্যাত। অর্থাৎ এ হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা যায়। এজন্য মহাপ্রভু প্রদত্ত এ হরিনাম কৃষ্ণপ্রেম প্রাপ্তির জন্য গ্রহণ করা সর্বোত্তম ও অবশ্য কর্তব্য।
🌼 হরে কৃষ্ণ 🌼 হরে কৃষ্ণ 🌼 কৃষ্ণ কৃষ্ণ 🌼 হরে হরে 🌼
🌼 হরে রাম 🌼 হরে রাম 🌼 রাম রাম 🌼 হরে হরে 🌼