21/11/2025
কোক স্টুডিও বাংলাতে “মাস্ত কালান্দার” শুনে সকালটা সুন্দর হয়ে গেলো। রোজ অসুন্দর, অপ্রয়োজনীয় বিষয়, ভুল ভাবনা এবং মন্দ চর্চায় দিন কাটে আমাদের। কতজন প্রশ্ন করি, যে বাঁচা বেঁচে রয়েছি, তা কী যথেষ্ট অর্থবহ, প্রেরণাদায়ক?
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের একটা বিখ্যাত সংলাপ “বেঁচে থাকাটা বড় কথা নয়, কীভাবে বেঁচে আছি সেটাই বড়”
শিল্পী ছবি আঁকেন, তিনি বোঝেন, দেশের মানুষ ছবি আঁকাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে না। তাতে দুঃখিত হন না বা হতাশাক্রান্ত হন না তিনি। শিল্পী ভাবেন, আমি সৌভাগ্যবান, আঁকতে পারি।
একজন লেখক পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য আকর্ষণের দিকে না তাকিয়ে শুধুই তাঁর অনুভব, ভাবনা, বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটিয়ে যান, অবিরাম লিখে চলেন। অনেক লেখক তো জানেনই, দেশের মানুষের সাহিত্য নিয়ে তেমন আগ্রহ, উৎসাহ নেই। লেখক লেখেন, তিনি বেঁচে আছেন এই অনুভব পাওয়ার জন্য। লেখক যদি না লিখতে পারেন, তিনি বেঁচে থেকেও মৃত।
সৃজন ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান, উল্লেখযোগ্য ভূমিকার প্রতি দেশের মানুষ খুব মনোযোগী নয়, তবুও শিল্পী নিবিষ্ট হয়ে ছবি আঁকেন, কন্ঠশিল্পী গানের মধ্যেই খুঁজে পান অপরিমেয় সুখ, অর্থ বিত্ত, জাগতিক নানা সুখময় প্রাপ্তির আশা না করে মনের আনন্দে অবিরাম লিখে চলেন লেখক।
রুনা লায়লা অসাধারণ একজন শিল্পী। অল্প কথায় এটাই তাঁর পুরো পরিচয়। সে পরিচয় এতটা বড়, শিল্পী পরিচয়ের আলোতে আলোকিত হতে পারে একটা পুরো দেশ। দেশের একমাত্র শিল্পী, যিনি পাকিস্তান এবং ভারতের শ্রোতাদের কাছেও তুমুল জনপ্রিয়, সন্মানীয়। এমন শিল্পীর বিষয়ে আমরা কতটুকু মনোযোগী?
কিছুদিন আগে তাঁর জন্মদিন গেলো। অনেক টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ আয়োজন করে তাঁর জন্মদিন পালন করেছে। প্রতিদিনের অস্থিরতা, চেচামেচি, নানা অসন্মানকান্ডের ভিতর এই দায়িত্বশীলতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বেশ আশাবাদী করে।
মাছরাঙা টেলিভিশন চ্যানেল একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, সে অনুষ্ঠানে অন্য দেশের শিল্পী কলাকুশলীরা আমাদের রুনা লায়লাকে নিয়ে যেসব হৃদয়খোলা মন্তব্য করেছেন, সাধ্য অনুযায়ী যেভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন- কোনো শিল্পী, সৃজনশীল মানুষের প্রতি অত উদারভাবে শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানানোর অভ্যাস আমরা কী গড়ে তুলতে পেরেছি?
আমরা বলি দেশ ভালোবাসি কিন্তু দেশের জন্য ক্ষতিকর ভাবনায় সামিল হয়ে যাই। যারা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, ঘৃণা ছড়িয়ে বেড়ায়, সভ্যতার ক্ষতি করে তাদের অনুসারী হয়ে, তাদেরকে মান্য করে অনেক অনেক গর্ববোধ করি। জেগে থাকার অধিকাংশ সময়ই আমরা কাটিয়ে দেই অদরকারি কথা, কূতর্ক ও মানুষকে অসন্মান অমর্যাদা করার চেষ্টায়।
গুরুত্ব পাওয়ার মতো বহু বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী হওয়ার কারণে অসংখ্য প্রদীপ তেলহীন, নিভু নিভু। নিজ নিজ ঘরে আলো থাকলেই আমরা জীবন মুখর আছে ভাবি। এমন অসচতেনতায় জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্যবোধ।
কোক স্টুডিওতে যেভাবে রুনা লায়লাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা শুধু তাঁর গান শোনা ও দেখার অভিজ্ঞতা নয়, মনে হয়েছে সমগ্র আয়োজন যেনো এ অসাধারণ শিল্পীর প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা।
ভালোবাসা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও চমৎকার যত্নের জন্য কোক স্টুডিও বাংলাকে ধন্যবাদ। শিল্পী ও দর্শক শ্রোতার প্রতি সন্মান প্রদানের এমন আন্তরিক চেষ্টা আনন্দিত করে, আশা জাগায়। মাঝে মাঝে অনুভব করা দরকার আলো নিভতে না দেয়া মানুষ দেশে আছে। আছে বলেই মাঝে মাঝে আচমকা বিস্ময়, আনন্দ ও প্রাণের উষ্ণতা এসে এভাবে জীবনকে বুঝিয়ে দেবে, বেঁচে থাকা আসলেই সুন্দর।
নতুন করে প্রাণ পাওয়া রুনা লায়লা ও “মাস্ত কালান্দার” জীবনে যোগ করেছে নতুন বিস্ময়, আলাদা রঙের আনন্দ। আমাদের প্রেমে, শ্রদ্ধায় আপনি দীর্ঘায়ূ হোন রুনা লায়লা।
-প্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন
Afzal Hossain
Tangail Darpan