এসো মনের কথা বলি - জীবনের পাঠশালা

  • Home
  • Bangladesh
  • Tangail
  • এসো মনের কথা বলি - জীবনের পাঠশালা

এসো মনের কথা বলি - জীবনের পাঠশালা This page was created for educational purposes, with the goal of benefiting both students and their parents.

I hope it serves as a valuable resource for learning and growth.

23/04/2025

ইতিহাসে আজকের দিনে – ২৩ এপ্রিল
বিশ্ব ও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, জন্ম-মৃত্যু ও মজার তথ্য

---

🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা

১৫১৬ – জার্মান বিয়ার বিশুদ্ধতা আইন (Reinheitsgebot)
এই দিনে বাভারিয়ার ডিউক উইলহেল্ম চতুর্থ এই আইন প্রণয়ন করেন, যেখানে বিয়ারে শুধু পানি, বার্লি ও হপস ব্যবহারের অনুমতি ছিল। আজও এই আইন ঐতিহ্য হিসেবে পালিত হয়।

১৬১৬ – উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের মৃত্যু
ইংরেজি সাহিত্যের মহান নাট্যকার ও কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। শেক্সপিয়ারের জন্মদিনও আজ – ২৩ এপ্রিল! এটি "বিশ্ব বই দিবস" পালনের একটি কারণ।

২০০৫ – ইউটিউবের প্রথম ভিডিও প্রকাশ
এই দিনে ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম “Me at the zoo” ভিডিওটি আপলোড করেন – এটি ইউটিউবের ইতিহাসে প্রথম ভিডিও।

---

🇧🇩 বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের উল্লেখযোগ্য ঘটনা

১৯৭১ – জাতিভাঙ্গা গণহত্যা (ঠাকুরগাঁও)
এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে প্রায় ৩,০০০ হিন্দু শরণার্থী নির্মমভাবে নিহত হন। এটি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বড় গণহত্যাগুলোর একটি।

---

🎂 আজকের বিখ্যাত জন্মদিন

জন সিনা (১৯৭৭) – আমেরিকান রেসলার, অভিনেতা, র‍্যাপার।

গিগি হাদিদ (১৯৯৫) – মার্কিন মডেল ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার (১৫৬৪) – কিংবদন্তি নাট্যকার ও কবি।

---

🧠 আজকের মজার তথ্য

ইউটিউবের প্রথম ভিডিও আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল!

শেক্সপিয়ার জন্ম ও মৃত্যু – দুটোই ২৩ এপ্রিল, ৫২ বছর ব্যবধানে!

ঐ কিরে ঐ কিরে। মধু মধু রসমালাই রসমালাই আগুন 🔥
23/04/2025

ঐ কিরে ঐ কিরে। মধু মধু রসমালাই রসমালাই আগুন 🔥

With Green Valley স্বদেশী – I just got recognized as one of their top fans! 🎉
19/04/2025

With Green Valley স্বদেশী – I just got recognized as one of their top fans! 🎉

With Shala Uddin – I just got recognized as one of their top fans! 🎉
19/04/2025

With Shala Uddin – I just got recognized as one of their top fans! 🎉

✍✍টাকার গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন আপনার আদরের সন্তান দোকানে দাঁড়িয়ে একটা খেলনা বা যে কোন জিনিস পছন্দ করে, কিন্তু আপনি স...
16/04/2025

✍✍টাকার গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন আপনার আদরের সন্তান দোকানে দাঁড়িয়ে একটা খেলনা বা যে কোন জিনিস পছন্দ করে, কিন্তু আপনি সেটা কিনে দিতে ব্যর্থ হন!

✍✍টাকার গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে আপনাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

✍✍টাকার গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারেন, আপনার তুলনায় অন্য জামাইকে বেশি আদর আপ্যায়ন করা হচ্ছে, কারণ সে ধনী।

✍✍টাকার গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, আপনার স্ত্রীর ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো আপনি পূরণ করতে পারেন না, আর এজন্য সে আপনাকে উঠতে বসতে খোঁটা দেয়।

পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে, বিল দেওয়ার সময় বুঝবেন টাকা কতটা জরুরি।

যখন আপনার কাছে টাকা নেই বলে বন্ধুরাও আপনাকে মূল্যায়ন করে না, তখন উপলব্ধি করবেন কেন টাকা দরকার।

যখন দেখবেন, আপনার টাকা নেই বিধায় আত্মীয়স্বজন আপনার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলে, তখন স্পষ্ট হবে টাকার মূল্য।

বিপদের সময় দেখবেন, আপনার টাকা কম বলে কেউ আপনার পাশে থাকে না, আপনার প্রতি সহানুভূতি দেখায় না! তখন সত্যিকার অর্থে বুঝবেন টাকার প্রয়োজনীয়তা।

টাকার অভাবই মানুষকে শেখায় এর গুরুত্ব। তাই নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে হলে, টাকা কামাই করতে শিখুন। কারণ, জীবনের ৮০% সমস্যার সমাধান টাকা দিয়েই সম্ভব!

১১ এপ্রিল: ইতিহাসে আজকের দিন ও মজার তথ্য🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:১৮১৪: ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার...
11/04/2025

১১ এপ্রিল: ইতিহাসে আজকের দিন ও মজার তথ্য

🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:

১৮১৪: ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফন্টেনব্লোতে সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তাকে এলবা দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়।

১৮৯৯: স্পেন পুয়ের্তো রিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে।

১৯৪৫: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনী জার্মানির বুচেনভাল্ড কনসেনট্রেশন ক্যাম্প মুক্ত করে।

১৯৬৮: মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন ‘সিভিল রাইটস অ্যাক্ট ১৯৬৮’ স্বাক্ষর করেন, যা ফেয়ার হাউজিং অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করে এবং আবাসন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করে।

১৯৭০: নাসা অ্যাপোলো ১৩ মিশন উৎক্ষেপণ করে; পরে বিস্ফোরণের কারণে চাঁদে অবতরণ ব্যর্থ হয়।

১৯৮১: নাসা প্রথম স্পেস শাটল ‘কোলাম্বিয়া’ উৎক্ষেপণ করে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে।

🇧🇩 বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজকের দিন:

১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সময়, অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর সরকার) প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো রেডিও ভাষণ প্রদান করে, যা স্বাধীনতার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

---

🎉 মজার ও তথ্যবহুল ঘটনা:

১৯৫১: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারকে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় তার পদ থেকে অপসারণ করেন।

১৯৫৪: বিল হ্যালি অ্যান্ড হিজ কমেটস ‘রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক’ গানটি রেকর্ড করেন, যা রক অ্যান্ড রোল সঙ্গীতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়।

১৯৬১: নাজি যুদ্ধাপরাধী অ্যাডলফ আইখম্যানের বিচার ইসরায়েলে শুরু হয়।

২০০৬: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ঘোষণা করেন যে তারা সফলভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

পর্ব ৫: অগ্নিসাক্ষী (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)মাশরাফি যখন বটতলার দিকে রওনা দিলেন, তার মন-মস্তিষ্ক ছিল এক অদ্ভুত আশঙ্কায়।...
10/04/2025

পর্ব ৫: অগ্নিসাক্ষী (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)

মাশরাফি যখন বটতলার দিকে রওনা দিলেন, তার মন-মস্তিষ্ক ছিল এক অদ্ভুত আশঙ্কায়। শহরের রহস্য, অগ্নিকোষের কার্যক্রম—সব কিছুই যেন একটা বড় ঢেউয়ের মতো তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এবার তাকে সত্যিই শেষ করতে হবে এই সংকট। সেই পুরনো জঙ্গলে, যেখানে প্রথমবারের মতো নিখোঁজ হওয়া মানুষের গল্প শুরু হয়েছিল, সেখানেই তার পরবর্তী পদক্ষেপ।
গায়ে প্রলেপ দেওয়া এক স্যুট পরে, মাশরাফি আর রেজা বটতলার সেই জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেলেন। আধো অন্ধকার, ঘন ঝোপঝাড়, পাখির ডাক—সব কিছু যেন অদ্ভুতভাবে নীরব হয়ে গেছে। রেজা চোখে চোখ রেখে বলল, “আমরা যদি এখন আবার কিছু না খুঁজে পেতে পারি, তাহলে আর ফিরে আসতে পারব না।”
মাশরাফি চোখ বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত থেমে থেকে বললেন, “আমরা যদি সত্য খুঁজে না পাই, তাহলে অন্য কেউ খুঁজে বের করবে। আমরা কোনোভাবেই এ যাত্রায় থামব না।”
তাদের পা ক্রমশ সেই গোপন গুহার দিকে এগিয়ে চলল, যেটি আগে কখনো কেউ ভেবেও চিন্তা করতে পারেনি। এই গুহার ভিতরে সম্ভবত অগ্নিকোষের পুরো গোপন মঞ্চ গড়ে উঠেছে।

অবশেষে তারা পৌঁছাল সেই গুহায়, যা ছিল এক রহস্যময় প্রবাহের কেন্দ্রে। গুহার ভেতর প্রবাহিত পানি আর খনন করা কিছু সুড়ঙ্গ পথ মাশরাফির সামনে এক বিভ্রান্তিকর দৃশ্য তৈরি করেছিল। সব কিছু অদ্ভুতভাবে শান্ত এবং অন্ধকার—কিন্তু গভীরতা বোঝা যাচ্ছিল না।
মাশরাফি তার হাতে থাকা টর্চের আলো ফেললেন। তার চোখে একটা দৃঢ় দৃঢ়তা ছিল—এটা ছিল তার শেষ পরীক্ষা। এই গুহার মধ্যে দিয়ে ছড়ানো অগ্নিকোষের সংগঠন, শহরের ছায়া, সব কিছুই তাকে এক উত্তপ্ত যুদ্ধে নিতেই চাইছিল। তাদের সামনে একটা বিশাল খিলান আকারের দরজা ছিল। দরজার উপরে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন ছিল, যার মধ্যে “অগ্নি” শব্দটি লেখা ছিল।
“এই দরজা খুলতে হলে, আমাদের গোপন বাক্য বলতে হবে,” রেজা বলল। “কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বাক্য কী?”
মাশরাফি খেয়াল করলেন—চিহ্নগুলো সমাধি বা রহস্যময় শব্দের মতো মনে হচ্ছে। মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “এটা আমাদের পরীক্ষা, রেজা। আমরা এখন যদি হারিয়ে ফেলি, তবে সব শেষ।”
মাশরাফি হঠাৎ একটা শব্দ শুনলেন—পেছন থেকে, যেন কোনো গেট খোলার শব্দ। তারা দুজনেই ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন, গুহার ভেতর এক রহস্যময় ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। মুখে মুখোশ, কিন্তু চোখ ছিল মাশরাফির পরিচিত—এটি ছিল তপোধনানন্দ!

“তুমি! তুমি কী করতে চাও?” মাশরাফি একেবারে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন।
তপোধনানন্দ মুখোশ খুলে বললেন, “তুমি যদি ভেবো, আমি খারাপ, তাহলে ভুল ভাবছো। আমি তো চাইছিলাম তুমি আমার কাজে সাহায্য করো। তবে তুমি জানো না, আমি আসলে কী করছিলাম?”
রেজা ভ্রু কুঁচকে বলল, “তুমি আমাদের বিরুদ্ধে এত কিছু করেছো, আর এখন আমাদের সাহায্য চাচ্ছো?”
তপোধনানন্দ এবার গভীর একটা হাসি দিল। “আমার কাজ ছিল অগ্নিকোষের আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা। কিন্তু আমি জানতাম, এই কাজটি তোমার মতো একজন সাহসী মানুষের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়।”
মাশরাফি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “তাহলে তুমি কি চাও? আমি তোমার গোপন সন্ত্রাসী দলের অংশ হতে চাই না।”
তপোধনানন্দ মাথা নেড়ে বললেন, “না, আমি চেয়েছি তুমি আমাকে বন্ধুত্ব দাও, এক নতুন পৃথিবী তৈরির জন্য। কিন্তু আমাদের বিভ্রান্তি আর ভুল আমাদেরকে সবসময় বিভক্ত রেখেছে।”
মাশরাফি কিছু না বলে তার সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। তপোধনানন্দ জানাল, গুহার মধ্যে থাকা একটি বিশেষ প্রকল্প—“অগ্নিনেট্রা”-এর আসল উদ্দেশ্য ছিল পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণে আনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা মানুষের মস্তিষ্কে শাস্তি ও নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে চেয়েছিল।
তপোধনানন্দ আরও বললেন, “এটা ছিল আমাদের বিশাল পরিকল্পনা, একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন—যাতে সবাই এক ধরনের সিস্টেমে চলে আসবে, আর ভয় থেকে মুক্তি পাবে।”
মাশরাফি তার টর্চের আলো ঝলকিয়ে বললেন, “তুমি জানো না, তপোধনানন্দ, যে যার পথে চলতে চায়—কিন্তু এই পৃথিবীতে কোনো একক শক্তি আর কোনোদিন আধিপত্য করতে পারবে না। মানবতা যেভাবে একে অপরকে ভালোবাসে, সেভাবে পৃথিবীও বাঁচবে।”
তপোধনানন্দ হেসে বললেন, “তুমি ভুল ভাবছো, মাশরাফি! এই যুদ্ধে আমি তোমাকে হারাবো।”
কিন্তু ঠিক তখনই, মাশরাফি তপোধনানন্দের হাত থেকে সুরক্ষিত একটি নথি ছিনিয়ে নিয়ে ফেললেন। “তুমি যা বলেছো, সেটা অন্য মানুষদের জন্য।”
সাথে সাথে, মাশরাফি সেই নথিটি পুরো পৃথিবীর সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তপোধনানন্দের বিরুদ্ধে পরাস্ত হয়ে, অগ্নিকোষের পরিকল্পনা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল।
তপোধনানন্দ, অগ্নিকোষ এবং তাদের গোপন পরিকল্পনা ধ্বংস করার পর মাশরাফি জানতেন, এই পৃথিবীকে এখন নতুন করে চেনানো দরকার। তার হাতে ছিল সেই নথি—যেটি অগ্নিকোষের সৃষ্টির মূল রহস্য খুলে দিয়েছিল।
তবে, গল্পের শেষ নয়—এটা এক নতুন শুরুর গল্প। মাশরাফি জানতেন, তার সাহস এবং সত্যের পথ অনুসরণ করলেই, একদিন পৃথিবী অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসবে।

১০ এপ্রিল: বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:১৮১৫: ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট তাম্বোরা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, ...
10/04/2025

১০ এপ্রিল: বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:

১৮১৫: ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট তাম্বোরা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়, যা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত হিসেবে বিবেচিত; এতে প্রায় ৭১,০০০ মানুষ প্রাণ হারান। ​

১৮৪৯: নিউইয়র্কের উদ্ভাবক ওয়াল্টার হান্ট সেফটি পিনের পেটেন্ট লাভ করেন এবং মাত্র ৪০০ ডলারে এর স্বত্ব বিক্রি করেন। ​

১৯১২: আরএমএস টাইটানিক সাউদাম্পটন, ইংল্যান্ড থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে তার প্রথম ও শেষ যাত্রা শুরু করে। ​

১৯১৬: নিউইয়র্ক সিটিতে পেশাদার গল্ফারদের সংগঠন 'পেশাদার গল্ফার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা (PGA)' প্রতিষ্ঠিত হয়। ​

১৯১৯: মেক্সিকোর বিপ্লবী নেতা এমিলিয়ানো জাপাতা সরকারী বাহিনীর হাতে নিহত হন। ​

১৯৪১: জার্মানি ইউগোস্লাভিয়া আক্রমণ করে এবং ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যদিও এটি কার্যত নাৎসি জার্মানির একটি পুতুল রাষ্ট্র ছিল। ​

১৯৫৩: ভিনসেন্ট প্রাইস অভিনীত 'দ্য হাউস অফ ওয়াক্স' চলচ্চিত্রটি নিউইয়র্কের প্যারামাউন্ট থিয়েটারে মুক্তি পায়; এটি প্রথম রঙিন থ্রিডি চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত। ​

১৯৬৩: পারমাণবিক সাবমেরিন ইউএসএস থ্রেশার আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়, এতে ১২৯ জন নাবিক ও বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারান। ​

১৯৯৮: উত্তর আয়ারল্যান্ডে 'গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট' স্বাক্ষরিত হয়, যা দীর্ঘ ৩০ বছরের সংঘাতের অবসান ঘটায়। ​

২০১৯: বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি ব্ল্যাক হোলের ছবি প্রকাশ করেন, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে সমৃদ্ধ করে। ​

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজকের দিন:
১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সরকার ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করে। ​

🎉 মজার ও তথ্যবহুল ঘটনা:
১৮৬৬: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের জন্য 'আমেরিকান সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস (ASPCA)' প্রতিষ্ঠিত হয়। ​

১৯২৫: এফ. স্কট ফিটজেরাল্ডের বিখ্যাত উপন্যাস 'দ্য গ্রেট গ্যাটসবি' প্রথম প্রকাশিত হয়। ​

১৯৭১: মার্কিন টেবিল টেনিস দল চীন সফর করে, যা 'পিং-পং কূটনীতি' নামে পরিচিত এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয়।

পর্ব ৪: শহরের ছায়া (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)আগের পর্বে:বটতলার অগ্নিকোষ চক্র ধ্বংস হয়েছে। তপোধনানন্দ গ্রেফতার হয়েছে। গ...
09/04/2025

পর্ব ৪: শহরের ছায়া (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)

আগের পর্বে:
বটতলার অগ্নিকোষ চক্র ধ্বংস হয়েছে। তপোধনানন্দ গ্রেফতার হয়েছে। গ্রামের নিচে গোপন সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হয়েছে শতবর্ষ প্রাচীন নথি ও অদ্ভুত গোপন দলিল। কিন্তু মাশরাফি জানে, সব রহস্য এখানেই শেষ নয়…


মাশরাফি ঢাকায় ফিরে আসার পর, কিছুতেই শান্তি পেতে পারছিলেন না। বটতলা গ্রামে শেষ হওয়া এক ভয়ংকর অধ্যায়ের পর, শহরে পা রাখতেই যেন এক নতুন বিপদ তার দিকে এগিয়ে আসছে। চিঠি, অগ্নিকোষ, রহস্য—সবকিছু মিলে এক অদ্ভুত অশুভ পরিবেশ তৈরি করছিল। চিঠির বার্তা স্পষ্ট ছিল, অগ্নিকোষ এখন শহরের মধ্যেই ঘাপটি মেরে আছে। সেই বার্তা তাকে ফের একবার শহরের এক অজানা গোপন সংকটে নিয়ে যাচ্ছিল।

এক সপ্তাহ আগে বটতলা থেকে ফিরে, তার কাছে একটা অদ্ভুত চিঠি পৌঁছায়। চিঠি ছিল হাতে লেখা, কালির ছাপ ফুটে ছিল। শ্রীমোহন—এই নামটা মাশরাফির কাছে পুরোপুরি অপরিচিত ছিল। চিঠির মধ্যে অগ্নিকোষের নতুন পরিকল্পনার হুঁশিয়ারি ছিল। মাশরাফি আগের অভিজ্ঞতায় বুঝে গেছে—এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বড় কিছু হতে চলেছে।

চিঠির নির্দেশ অনুযায়ী, মাশরাফি ও তার সহকারী রেজা একটি পুরনো ফ্ল্যাটে পৌঁছালেন—ঢাকার ধানমন্ডি ৭/এ ব্লকের একটি অন্ধকার, পরিত্যক্ত ফ্ল্যাট। গেটের সামনে এক বৃদ্ধ দারোয়ান দাঁড়িয়ে ছিল। মাশরাফি তাকে প্রশ্ন করলেন, “আপনার এখানে কোনো শ্রীমোহন নামের লোক ছিল?”

দারোয়ান মাথা নেড়ে বললেন, “কেউ থাকে না। তবে কিছু দিন আগে একজন লোক আসতেন। খুব অদ্ভুত ছিল। মাঝে মাঝে একেবারে রাতের আঁধারে চলে যেতেন।”

তারা ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকলেন। ধুলো আর পুরনো আসবাবপত্রের মধ্যে খুঁজতে শুরু করলেন। তখনই মাশরাফি খেয়াল করলেন, একটি পিচবোর্ডের বাক্স খোলার পর, তার ভিতর একটি প্রাচীন নকশা এবং একাধিক পৃষ্ঠা দেখা গেল। সেই পৃষ্ঠায় লেখা ছিল—

রেজা বলল, “শহরের যুবকদের ওপর পরিচালিত হতে চলেছে প্রভাব। হয়তো এটা তাদের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য।”

মাশরাফি দৃঢ়ভাবে বললেন, “আমরা আর বেশি সময় নষ্ট করতে পারি না। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে হবে।”

মাশরাফি আবার শহরের এক সংবাদপত্রে চোখ বোলালেন। এক ছোটখাটো খবর পড়ে তার শরীরে শিরশিরে অনুভূতি হল—“বিশিষ্ট শিক্ষক শওকত স্যারের ছেলে নিখোঁজ – তিনদিন ধরে কোনো খোঁজ নেই।”

শওকত স্যার ছিলেন এক নামকরা অগ্নিকোষ বিরোধী লেখক। তিনি সম্প্রতি একটি বই লিখেছিলেন যার নাম ছিল—“ভয়ের রাজনীতি ও ছায়া সংগঠন।” এই বইটিতে অগ্নিকোষের গোপন কার্যক্রম নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ছিল। এই ঘটনাটি পরিষ্কার করেছিল, অগ্নিকোষ এখন শুধু গ্রামে নয়, শহরেও তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে।

শওকত স্যারের বাড়িতে গিয়ে মাশরাফি জানতে পারলেন, শওকত স্যারের ছেলে নাজিম দীর্ঘদিন ধরে কিছু অদ্ভুত আচরণ করছিল। মাশরাফি তার কাছ থেকে জানলেন, নাজিম একদিন বইয়ের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক পদ্ধতির খোঁজ পেয়েছিল। তার মাথায় একটি ছোট চিপ বসানো হয়েছিল, যেটি তার আচরণ পরিবর্তন করতে সক্ষম ছিল।

মাশরাফি বুঝতে পারলেন, এখন শুধু শওকত স্যারের ছেলেই নয়, অন্য অনেক যুবকও অগ্নিকোষের গোপন পরিকল্পনার শিকার হতে পারে।

মাশরাফি এবং রেজা অবশেষে একটি গোপন কেন্দ্রের খোঁজ পেলেন। এটি ছিল একটি ‘সামাজিক উন্নয়ন কেন্দ্র’, যেটির বাহ্যিক চেহারা সাধারণ হলেও ভিতরে কিছু অদ্ভুত কার্যক্রম চলছিল। তারা ভিতরে ঢুকলেন এবং দেখতে পেলেন, তরুণরা বিশেষ VR হেডসেট পরা অবস্থায় বসে আছেন, যাতে তাদের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া চলছিল।

কিরণ নামের একজন তরুণকে উদ্ধার করার পর, সে বলল, “ওরা আমাদের ঘরোয়া ভিডিও দেখিয়ে আমাদের ব্রেনওয়াশ করত। আমাদেরকে এটা শিখানো হতো যে, সমাজের যে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে, তা ঠিক করতে হবে। ভয়ের রাজনীতি আমাদের সবার মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছিল।”

এটি ছিল অগ্নিকোষের একটি নতুন পদক্ষেপ—শহরের তরুণদের মধ্যে অবিশ্বাস এবং ভয় সৃষ্টি করা, তাদের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করা। মাশরাফি দ্রুত কিরণকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চাইলেন।
একদিন সন্ধ্যায়, যখন মাশরাফি তার বাসায় ফিরছিলেন, হঠাৎ তাকে লক্ষ্য করে ছুরি ছুড়ে মারল এক মুখোশধারী লোক। মাশরাফি তৎক্ষণাত সরে গিয়ে লোকটিকে হাতেনাতে ধরলেন। তাদের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হল। মাশরাফি লোকটিকে ধরা না দিয়ে যেতে দিলেন, কিন্তু তার হাতের মধ্যে থাকা চিঠির দিকে নজর দিয়ে দেখলেন—চিঠির উপরে লেখা ছিল, “আগুন থামবে না, মাশরাফি। আমরা শহরের ছায়ায় অবস্থান নেব।”

এটি ছিল অগ্নিকোষের এক অশুভ ইঙ্গিত।

বিকেলে, রেজা ফোনে বললেন, “মাশরাফি, তপোধনানন্দ পালিয়েছে। সে বটতলার জঙ্গলে লুকিয়ে আছে।”

মাশরাফি তৎক্ষণাত সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার আর কোনও সময় নষ্ট করা যাবে না। এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে।

তারপর মাশরাফি আবার বটতলার দিকে রওনা হলেন, জানতেন, এখানেই শেষ হবে না—এবার নতুন এক যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে।

(চলবে...)

৯ এপ্রিল: ইতিহাসে আজকের দিন ও মজার তথ্য🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:১৪১৩: ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে হেনরি পঞ্চম...
09/04/2025

৯ এপ্রিল: ইতিহাসে আজকের দিন ও মজার তথ্য

🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
১৪১৩: ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে হেনরি পঞ্চমের অভিষেক। ​

১৬৮২: ফরাসি অভিযাত্রী রবার্ট ক্যাভেলিয়ার দে লা সাল মিসিসিপি নদীর মোহনা আবিষ্কার করেন এবং এলাকাটি ফ্রান্সের জন্য দাবি করেন। ​

১৮৬৫: মার্কিন গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে; কনফেডারেট জেনারেল রবার্ট ই. লি ভার্জিনিয়ার অ্যাপোম্যাটোক্স কোর্ট হাউসে ইউনিয়ন জেনারেল উলিসিস এস. গ্রান্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ​

১৯১৭: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান কর্পস ভিমি রিজে জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। ​

১৯৩৯: আফ্রিকান-আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী মারিয়ান অ্যান্ডারসন ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালে ৭৫,০০০ দর্শকের সামনে পরিবেশন করেন, কারণ তাকে কনস্টিটিউশন হলে পারফর্ম করতে দেওয়া হয়নি। ​

১৯৪০: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ডেনমার্ক ও নরওয়ে আক্রমণ করে।

১৯৪২: ফিলিপাইনের বাতান شبهদ্বীপে মার্কিন ও ফিলিপিনো সেনারা জাপানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, যা বাতান ডেথ মার্চ নামে পরিচিত। ​

১৯৫৯: নাসা তাদের প্রথম সাতজন মহাকাশচারী, যাদের "মার্কারি সেভেন" বলা হয়, ঘোষণা করে। ​

১৯৬۷: বোয়িং ৭৩৭ বিমান প্রথমবারের মতো উড্ডয়ন করে, যা ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিমান মডেল হয়ে ওঠে। ​

১৯৭০: পল ম্যাককার্টনি ঘোষণা করেন যে দ্য বিটলস ব্যান্ড ভেঙে যাচ্ছে, যা জনপ্রিয় সঙ্গীত জগতে একটি যুগের সমাপ্তি নির্দেশ করে। ​

২০০৩: ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনী বাগদাদ দখল করে, যা সাদ্দাম হোসেনের শাসনের পতনের সূচনা করে। ​

২০০৫: ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস ক্যামিলা পার্কার বোলসকে বিয়ে করেন। ​

🇧🇩 বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আজকের দিন:
১৯৭৪: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ-পরবর্তী মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ​

১৯৯৫: বাংলাদেশের বিরোধী দল সরকার পতনের দাবিতে হরতাল পালন করে। ​

🎉 মজার ও তথ্যবহুল ঘটনা:
১৮৬০: ফরাসি উদ্ভাবক এদুয়ার্ড-লিওন স্কট দে মার্টিনভিল প্রথমবারের মতো মানব কণ্ঠস্বর রেকর্ড করেন, যা বিশ্বের প্রথম সাউন্ড রেকর্ডিং হিসেবে বিবেচিত। ​

১৯৩৭: জাপানি বিমান কামিকাজে লন্ডনের ক্রয়ডন বিমানবন্দরে অবতরণ করে, যা প্রথম জাপানি নির্মিত বিমান ইউরোপে পৌঁছানোর ঘটনা। ​

১৯৫০: কমেডিয়ান বব হোপ তার প্রথম টেলিভিশন উপস্থিতি করেন। ​

১৯৬৮: মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তার নিজ শহর আটলান্টা, জর্জিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়। ​

১৯৭৯: থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক দুর্ঘটনার সংকট সমাপ্ত হয়।

পর্ব ৩: আগুনের শপথ (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে মাশরাফির মনে হচ্ছিল, যেন সময়ের ভেতর দিয়ে এক অ...
08/04/2025

পর্ব ৩: আগুনের শপথ (গ্রামবাংলার গুপ্ত রহস্য)

পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে মাশরাফির মনে হচ্ছিল, যেন সময়ের ভেতর দিয়ে এক অতল গহ্বরে ঢুকে পড়েছেন। সেই গহ্বরের একদিকে লুকিয়ে আছে গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আতঙ্ক, অন্যদিকে রয়েছে ‘অগ্নিকোষ’ নামের এক অদৃশ্য দানবের ছায়া।
লাইব্রেরির ভেতর আলো কম, কিন্তু উত্তেজনা বেশি। হঠাৎ আরেকটি দলিল চোখে পড়ল। সেটি ছিল জমিদার রামচরণ রায়ের ডায়েরির একটি পৃষ্ঠা—
“১৮৯৮ সালের ১৬ই চৈত্র—
আজ রাতে আবার লোক গায়েব। চরণ পাল, গৃহস্থ পরিবারের যুবক। চারদিন ধরে নিখোঁজ। ভৈরব ঠাকুরের মন্দিরের পেছনে একটা ছেলের কাটা হাত পাওয়া গেছে। গ্রামের মানুষ বলছে, আবার ফিরে এসেছে অগ্নিকোষ। যতোই বলি এ কুসংস্কার, তবু মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা বাসা বাঁধছে…”
এই অংশ পড়ে শিউরে উঠলেন মাশরাফি। “তা হলে শত বছর আগেও এই ঘটনা ঘটেছে? এবং তার সাথে একই সংগঠন জড়িত?”
তিনি ডায়েরিটা ব্যাগে রাখলেন। “এখনই এগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে,” বলে বেরিয়ে পড়লেন।
ঘরে ফিরে এসে, রাতের খাবারের পর নিশিকে ডেকে পাঠালেন।
“এই দেখো,” বললেন তিনি, “এই জমিদার ডায়েরির অংশ পড়ো।”
নিশি পড়ে উঠে বলল, “এটা তাহলে একটা চক্র... বহু প্রজন্ম ধরে চলছে।”
“হ্যাঁ। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল—এই চক্র শুধু গায়েব হওয়া নয়, মানুষ হত্যা করছে। এবং তা একটা ধর্মীয় বা তান্ত্রিক উদ্দেশ্য নিয়ে।”
মাশরাফি পাশের কাগজে প্রতীকটি আঁকলেন। এরপর তাঁর বিশ্লেষণ শুরু হল—‘চোখ’ প্রতীক, আগুন, পুরনো শ্মশান, অপহরণ, নিখোঁজ মানুষ, রক্তচিহ্ন, কাদা... সব মিলিয়ে এক অন্ধকার দিক স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
পরদিন সকালে তিনি রওনা দিলেন গ্রামের পুরনো মন্দিরের দিকে—ভৈরব ঠাকুরের মন্দির। ডায়েরিতে সেই জায়গার উল্লেখ ছিল।
মন্দিরটি ছিল পরিত্যক্ত। বড় বড় গাছ, মাটিতে ভাঙা প্রতিমা, লতা-পাতায় ঢাকা প্রাচীন ইট। যেন ভেতরে কোনো শক্তি আজও বাস করে।
মন্দিরের পেছনে ঘুরে দেখতে গিয়ে তিনি এক আশ্চর্য আবিষ্কার করলেন—মাটির নিচে যেন একটা কাঠের দরজা! বহুদিন ধরে চাপা পড়ে আছে, তার ওপর আগাছা জন্মেছে।
মাশরাফি সাবধানে আগাছা সরালেন, তারপর কাঠের দরজার হাতল টানলেন। একটু কষ্ট হলেও দরজাটি খুলে গেল। নিচে একটি সিঁড়ি, অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।
তিনি মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলেন।
নিচে নেমে একটি গুহার মতো জায়গা দেখতে পেলেন। ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে, এবং অদ্ভুত এক গন্ধে ভরা। দেয়ালে আগুনের চিহ্ন, আর অনেক পুরনো চিত্রলিপি। একটা দেয়ালে লেখা ছিল—
“আগুনই মুক্তি। আগুনই শক্তি। যারা আগুনে বিশ্বাস করে না, তাদের স্থান হবে অন্ধকারে।”
মাশরাফির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
এবার তিনি বুঝলেন—‘অগ্নিকোষ’ একটি তান্ত্রিক গোষ্ঠী, যারা আগুনকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাসে মেতে আছে। তারা বিশ্বাস করে, আগুনের মাধ্যমে আত্মা মুক্তি পায়, আর এই মুক্তির জন্য চাই ‘মানব উৎসর্গ’।
ঠিক তখনই, পেছনে কারো পায়ের শব্দ।
তিনি দ্রুত ফিরে তাকালেন।
—“তুমি এখানে কী করছো?”—একটি রুক্ষ কণ্ঠস্বর।
মাশরাফি তাকিয়ে দেখলেন, একজন লম্বা, মুখ ঢাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে, হাতে লাঠি।
“তুমি কে?” জিজ্ঞেস করলেন মাশরাফি।
লোকটা কিছু না বলে দৌড়ে পালাতে শুরু করল। মাশরাফি তৎক্ষণাৎ ধাওয়া করলেন, কিন্তু গুহার পথ এত জটিল ছিল যে অল্প কিছু দূর গিয়েই সেই লোক অদৃশ্য হয়ে গেল।
ফিরে এসে তিনি গুহার একটি কোণে একটি পুরনো বাক্স খুঁজে পেলেন। খুলে দেখলেন—ভেতরে রক্তমাখা কাপড়, কয়েকটি পুরনো লকেট, আর একটি ছোট খাতা।
খাতায় লেখা—“রূপা... চরণ... রাহুল...”
“এটা অপহৃতদের তালিকা!” চমকে উঠলেন মাশরাফি।
তিনি জানতেন, এখন আর সময় নেই। ‘অগ্নিকোষ’ আবার সক্রিয়, এবং এবার তাদের থামানো না গেলে এই গ্রাম ধ্বংসের মুখে পড়বে।
মাশরাফি খাতা, লকেট আর রক্তমাখা কাপড় নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন। মুখে এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ছাপ—এই গ্রামকে মুক্ত করতে হবে ‘অগ্নিকোষ’-এর ছায়া থেকে। বেলা তখন পড়ন্ত, সূর্য ডুবে যাচ্ছে দিগন্তে, আর সেই সূর্যকে দেখেই যেন শপথ নিলেন—এই আগুনের ভক্তদের, যারা মানুষকে উৎসর্গ করে বাঁচতে চায়, তাদের আগুনেই শেষ করতে হবে।
ঘরে ফিরে আসতেই নিশি জিজ্ঞেস করল, “কী খুঁজে পেলে?”
মাশরাফি চুপ করে খাতাটি এগিয়ে দিল। নিশি পড়ে ফেলল প্রথম পৃষ্ঠা—রূপা, চরণ, রাহুল… আর তার নিচে একটা তারিখ—‘০৯/০৪/২৫’। অর্থাৎ আগামীকাল?
“তাদের উৎসর্গ করার দিন কাল?” নিশি চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল।
“ঠিক তাই,” বললেন মাশরাফি। “তাই আমাদের হাতে সময় খুব কম। আজ রাতেই কিছু করতে হবে।”
ময়নাল কাকাকেও সব জানানো হল। তিনি বললেন, “আগে শোনা যেত, এই চক্র বছরে একবার উৎসব করে, যেটা তারা বলে ‘অগ্নি পূর্ণিমা’। সেই রাতে তারা বলি দেয়। সম্ভবত কাল সেই রাত।”
মাশরাফি এবার গ্রাম চৌকিদার আর কিছু সাহসী যুবককে ডেকে নিলেন। তাদের সঙ্গে পরিকল্পনা তৈরি করলেন।
“তোমরা কেউ টর্চ, বাঁশি আর মোটা লাঠি নিয়ে তৈরি থাকো। আমি সেই গুহা পথে আবার যাব। তোমরা থাকবে বাইরে, সংকেত পেলে ভেতরে ঢুকবে।”
“কিন্তু ওরা যদি অস্ত্র নিয়ে থাকে?”
“আমাদের সাহস থাকতে হবে। কারণ অপহৃতদের জীবন এখন আমাদের হাতে। আর আমিও একা যাব না,” বলেই মাশরাফি নিজের ছোট রিভলভারটি কোমরে গুঁজে নিলেন।
রাত নেমে এল। চাঁদহীন অন্ধকারে হাওয়ার স্রোত যেন কান পাতলেই ভয় জাগায়। গ্রামের সবাই ঘরের ভেতর বন্ধ, কেবল মাশরাফির দল প্রস্তুত।
গভীর রাতে গোপনে গুহার দিকে রওনা দিলেন মাশরাফি ও তাঁর দল। তারা মন্দিরের পেছনে গিয়ে গোপন দরজা খুলল, সিঁড়ি দিয়ে নামল নিচে। মাশরাফির নির্দেশে বাকিরা বাইরে পাহারায় রইল।
ভেতরে নেমেই মাশরাফি শুনলেন—এক ধরনের মন্ত্রপাঠ। গলার স্বরগুলো কাঁপছে, যেন কোনো অদ্ভুত সাধনার মধ্যে ডুবে আছে তারা।
তিনি সাবধানে এগিয়ে গেলেন। একটু দূর গিয়ে দেখলেন এক বিশাল কক্ষ, যার মাঝখানে আগুনের চুল্লি। চারপাশে মুখঢাকা দশ-বারো জন লোক দাঁড়িয়ে, তাদের মাঝখানে একটি ছেলেমেয়েকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা।
মাশরাফির রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল।
তাঁর পেছনে দাঁড়ানো দুই যুবককে ইশারায় ডাকলেন।
“আমি এগিয়ে যাব, ঠিক সময়ে বাকিরা আক্রমণ করবে,” ফিসফিস করে বললেন।
একটা মোক্ষম সময়ে, মাশরাফি দৌড়ে ভিতরে ঢুকে চিৎকার করলেন—
“থামো! পুলিশের নামে বলছি, কেউ নড়বে না!”
হঠাৎ চারদিকে হুলস্থুল পড়ে গেল। কেউ কেউ পালানোর চেষ্টা করল, কেউ আবার আগুনের চারপাশে ঢাল তৈরি করতে চাইল। মাশরাফি একের পর এক গুলি ছুঁড়ে তাদের পিছু হটিয়ে দিল। তখন বাইরে থাকা দলটিও ভেতরে ঢুকে পড়ল।
একটা তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হল।
মাশরাফি সেই ছেলেমেয়েদের দড়ি কেটে দিলেন, তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখলেন। এরপর একে একে মুখোশধারীদের ধরে ফেলল সবাই। কয়েকজন পালিয়ে গেলেও তিন-চারজন ধরা পড়ল।
তাদের মধ্যে একজন মুখোশ খুলতেই চমকে উঠলেন মাশরাফি—এ তো রমেশ সর্দার নিজে!
“তুমি?” চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি।
রমেশ মাথা নিচু করে বলল, “আমাদের পূর্বপুরুষরা এ কাজ করত। আমিও শুধু ধারাবাহিকতা বজায় রাখছিলাম…”
“তোমাদের এই ‘ধারাবাহিকতা’ মানুষের জীবন নিয়ে খেলে! এবার তোমার শেষ!”
ঘটনাটি শেষ হতে হতে রাত প্রায় শেষ। সকালবেলায় গ্রামবাসীরা জেগে উঠে জানতে পারল, ‘অগ্নিকোষ’ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, অপহৃতরা উদ্ধার হয়েছে।
মাশরাফির চোখে তখন একটা প্রশান্তি। তবে তিনি জানেন, গল্প এখানেই শেষ নয়। ‘অগ্নিকোষ’-এর মূল নেতৃত্ব হয়তো এখনও ধরা পড়েনি।
তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন—
“আগুনের নামে যারা মানুষ হত্যা করে, তাদের নিজস্ব আগুনেই পুড়ে মরতে হবে।”
রাতের উত্তেজনাপূর্ণ অভিযানের পর সকালে গোটা গ্রাম যেন এক নতুন সূর্য দেখল। লোকজন ভয়ে কাঁপছিল যে, হয়তো তাদের আত্মীয়রা আর ফিরে আসবে না, কিন্তু যখন তারা দেখে নিখোঁজরা ফিরে এসেছে, তখন আনন্দে কান্না ছড়িয়ে পড়ে গোটা বটতলায়।
তবে মাশরাফির মনে এখনো অস্থিরতা। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে—এত বড় চক্র শুধু রমেশ সর্দার আর গ্রামের কিছু মানুষের হাতে তৈরি হতে পারে না। এটি নিশ্চয়ই বাইরে থেকে পরিচালিত হয়। সেই মূল হোতা কে?
তিনি চৌধুরী বাড়িতে ফিরে এসে তাঁর সংগ্রহ করা দলিল, পুরনো চিঠিপত্র, আর খাতাটি ফের একবার খুলে বসলেন। নিশিও পাশে বসে।
“এই দেখো,” মাশরাফি একটি চিঠির অংশ দেখাল—
“রামচরণ, পূর্ণিমার রাতে উৎসর্গের আয়োজন করতে ভুলো না। অগ্নিকোষের সন্ন্যাসী আসবেন। তিনি আসলেই শক্তি।—তোমার দাদা, বীরেন্দ্রনাথ।”
নিশি বলল, “এই সন্ন্যাসীটা কে হতে পারে?”
মাশরাফি তখনই পুরনো নথি ঘেঁটে গ্রামের পাশের জঙ্গলে অবস্থিত একটা আশ্রমের নাম পেল—‘অগ্নাশ্রম’। এবং আশ্রমের প্রধানের নাম—তপোধনানন্দ মহারাজ।
“তপোধনানন্দ,” মাশরাফি নিজে নিজে বললেন, “তাঁর নামই তো গ্রামের কেউ নেয় না, যেন কেউ তাঁকে চোখে দেখেনি। হয়তো সবার ভয়ই তাঁকে অদৃশ্য রাজার মতো করেছে।”
পরেরদিন ভোরে, মাশরাফি নিশিকে নিয়ে গেলেন সেই অগ্নাশ্রমে। আশ্রমটি জঙ্গলের মাঝে, কাঁচা পথ ধরে যেতে হয়। পথ ধরে যেতে যেতে তিনি চারদিকে খেয়াল করলেন—গাছে গাছে অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা, আগুনের প্রতীক, চোখের প্রতীক… সব মিলিয়ে শিউরে উঠতে হয়।
অবশেষে তাঁরা পৌঁছালেন আশ্রমে। সামনের ফটকেই দাঁড়িয়ে থাকা এক সন্ন্যাসী তাদের থামাল।
“কোথা থেকে এসেছেন?”
“আমরা সন্ন্যাসীজীর দর্শন চাই। তিনি তপোধনানন্দ মহারাজ তো?”
সন্ন্যাসী অবাক চোখে তাকালেন। “তাঁর সাথে সাধারণ কেউ দেখা করে না।”
“আমি সাধারণ নই,” মাশরাফি তাঁর পরিচয়পত্র বের করলেন। “ডিটেকটিভ মাশরাফি বিন মর্তুজা। আমি সরকারি তদন্তে এসেছি।”
সন্ন্যাসী কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল। তারপর গেট খুলে বলল, “আসুন।”
তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলেন, আশ্রমের পরিবেশ অস্বাভাবিক নিঃশব্দ। যেন কিছু লুকানো আছে, যেন সবুজ পাতার আড়ালে নজরদারির চক্ষু জ্বলছে।
একটি বড় হলঘরে বসেছিলেন তপোধনানন্দ। সাদা পোশাকে, মাথায় লাল পাগড়ি, চোখ দুটি স্থির, তীব্র দৃষ্টিতে তাকালেন মাশরাফির দিকে।
“আপনি কে?”
“আমি সেই লোক, যে আপনার আগুন নেভাতে এসেছে,” মাশরাফি চুপচাপ বললেন।
তপোধনানন্দ হেসে উঠলেন, “তুমি তো সাহসী। জানো, এই আগুনে শত বছর ধরে কত শক্তি জন্মেছে? আমরা মানুষ তৈরি করি আগুনে...”
“আর মানুষও মারো আগুনে,” বলে ফেললেন মাশরাফি।
তপোধনানন্দ কিছু না বলেই উঠে দাঁড়ালেন। “তুমি জানো না, তুমি কাকে চ্যালেঞ্জ করছো। এই অগ্নিকোষ-এ শুধু ধর্ম নয়, শক্তি, রাজনীতি, অর্থ—সব কিছু আছে।”
“আপনার সময় শেষ। রমেশ ধরা পড়েছে। বাকি সবাইও যাবে।”
এইবার তপোধনানন্দ ঠান্ডা গলায় বললেন, “তোমার শহরে কি তেমন কেউ নেই, যার ওপর তুমি নির্ভর করো?”
এই প্রশ্নে মাশরাফির চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।
“নিশির দিকে তাকিও না,” সে বলল। “ওর সঙ্গে কিছু হলে, আমি তোমার এই সন্ন্যাসী বেশ ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলব।”
এক মুহূর্তে উত্তেজনা জমে উঠল। সেই মুহূর্তে আশ্রমের পেছন থেকে চিৎকার ভেসে এল—
“দাদা! সাহায্য করো!”
মাশরাফি বুঝে গেল—আবার কেউ অপহৃত হয়েছে।
তিনি নিশিকে বাইরে পাঠালেন, নিজে ছোট লুকানো দরজা দিয়ে পেছনে চলে গেলেন। সেখানে একটি ছোট কুঠুরি, আর তার মধ্যে দুই চোখ বাঁধা কিশোরী—হয়তো রূপার মতই আরেক অপহৃত।
“তোমার নাম কী?” জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
“সোহিনী… আমায়… ওরা বলি দিতে চেয়েছিল…”
মাশরাফি তখনই মেয়েটিকে নিয়ে আশ্রম থেকে বেরিয়ে এলেন। ততক্ষণে নিশি বাইরে পুলিশ ডেকে এনেছে।
তপোধনানন্দ গ্রেফতার হলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে গ্রামে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হল—কেউ কেউ বিশ্বাস করত, উনি প্রকৃতপক্ষে সাধু। কিন্তু প্রমাণ, নথি, অপহৃতদের সাক্ষ্য—সব মিলিয়ে তপোধনানন্দ-ই এই শতবর্ষের অগ্নিকোষ চক্রের মূল চালক প্রমাণিত হল।
তপোধনানন্দ গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রামবাসীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “উনি তো আমায় আশীর্বাদ দিয়েছিলেন, ফসল ভাল হয়েছিল।”
আবার অনেকে বলল, “উনি-ই আমার ছেলেকে নিয়ে গেছেন, আমি জানতাম।”
এই সময়ই একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বললেন, “তোমরা কেউ জানো না, তপোধনানন্দ কেউ না… সে মাত্র এক চরিত্র। এই চক্রের নাম 'অগ্নিকোষ' ঠিক আছে, কিন্তু এর মূল পরিকল্পনা আজ থেকে একশো বছর আগে তৈরি হয়েছে।”
মাশরাফি তাকালেন সেই বৃদ্ধের দিকে, “আপনি কে?”
“আমি আশুতোষ। আগেকার দিনগুলোতে চৌধুরী সাহেবের ব্যক্তিগত কেরানি ছিলাম। অনেক কিছু জানি।”
তাঁকে নিয়ে মাশরাফি চৌধুরী বাড়িতে গেলেন। আশুতোষ একটি পুরনো সিন্দুক দেখালেন, যার মধ্যে ছিল ছেঁড়া কিছু পাতার বই, আর একটি নকশা।
মাশরাফি বইটি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলেন। তাতে লেখা—
“শুধু আগুন নয়, আমাদের লক্ষ্য চেতনার আগুন। আমরা তৈরি করব এমন এক প্রজন্ম, যারা নিজের আত্মাকে উৎসর্গ করবে শক্তির পূজায়। মানুষের ভয়ই আমাদের শক্তি। আমরা তাদের ভয় দেখাব, তাদের কাছ থেকে বিশ্বাস কিনব, তারপর তাদের মন নিয়ন্ত্রণ করব।”
এই কথাগুলো মাশরাফির কাঁধে শীতল স্রোতের মতো নেমে এলো।
নকশাটি ছিল গ্রামের নিচে খনন করা একটি সুড়ঙ্গপথের। আশুতোষ বললেন, “এই পথ চৌধুরীবাড়ি থেকে শুরু হয়ে অগ্নাশ্রম পর্যন্ত গিয়েছে। তার নিচে লুকানো আছে আসল দলিল, আসল পরিকল্পনা।”
মাশরাফি সিদ্ধান্ত নিলেন—এই সুড়ঙ্গই তার পরবর্তী লক্ষ্য। নিশি, চৌধুরী বাড়ির দুই বিশ্বস্ত মানুষ এবং দুইজন পুলিশ নিয়ে তিনি ঢুকলেন সেই গোপন সুড়ঙ্গে।
সুড়ঙ্গটি অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে এবং অদ্ভুতভাবে শান্ত। মাঝে মাঝে কিছু পুরনো শিকল, ধাতব বাক্স আর রক্তের দাগ দেখা গেল। এই পথ দিয়ে অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে—এই সত্যি যেন দেয়ালে লেখা।
হঠাৎ তাঁরা এক জায়গায় পৌঁছালেন, যেখানে বড় এক চেম্বার। সেই চেম্বারের মাঝে একটি ভাঙা বেদি, আর তার উপর একটি পাথরের বাক্স।
মাশরাফি বাক্সটি খুললেন।
তার মধ্যে একটি পুরনো কাগজ—ব্রহ্মলিপিতে লেখা।
পাশে রাখা একটি ছোট পাথরের ফলকে খোদাই করা—
“আগুন নিভবে, যেদিন সত্য ভয়হীন হবে।”
এই লাইনটি নিশি পড়ে ফেলল।
“তুমি বুঝেছো এর মানে?” নিশি জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ,” মাশরাফি বলল, “এই চক্র ভয় দিয়ে শাসন করত। তাদের পরিকল্পনা ছিল—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মন নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু সত্য—ভয়হীন সত্য—এই আগুনকে নিভিয়ে দিতে পারে।”
এই চেম্বারে আরও কিছু দলিল পাওয়া গেল, যেগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হল। পুরো অগ্নিকোষ চক্রকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। তপোধনানন্দের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, এবং ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের হল।
বটতলা গ্রাম আবার ফিরে পেল তার শান্তি। শিশুরা খেলতে শুরু করল মাঠে, মানুষজন রাতেও নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করতে লাগল।
শেষ রাতে মাশরাফি একা বসে ছিলেন চৌধুরী বাড়ির বারান্দায়। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে।
নিশি এসে চুপ করে পাশে বসে বলল, “তুমি চলে যাবে কাল?”
“হ্যাঁ,” মাশরাফি বলল। “কিন্তু আমি আবার ফিরব। কারণ এই গ্রামে রহস্য আছে, অন্ধকার আছে, আবার অনেক আলোও আছে।”
নিশি হেসে বলল, “আচ্ছা, তুমি কি সব রহস্য একদিনে বুঝে ফেলো?”
“সব না,” মাশরাফি তাকিয়ে বলল, “কিছু রহস্য আমাদের অপেক্ষা করে… কিছু উত্তর একদিন আসবেই।”
আকাশে ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটছে।
(চলবে...)

Address

Apon Vuvon
Tangail

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when এসো মনের কথা বলি - জীবনের পাঠশালা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share