24/05/2025
“বালি: এক স্বপ্নের দ্বীপে হারিয়ে যাওয়া আমি”
—UR Zahid Hossain-এর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে পা রাখার আগেই আপনি জানেন—আপনার ভেতরের কিছু বদলে যাবে।
ইন্দোনেশিয়ার বালি ঠিক তেমন এক জাদুকরী জায়গা।
আমি যখন বিমান থেকে নামলাম, বাতাসেই একটা ঘ্রাণ—মাটির, সমুদ্রের আর লুকানো ইতিহাসের।
সূর্য তখন মাঝ আকাশে, কিন্তু চারপাশের গাছ, পাহাড় আর মানুষের মুখে একটা শান্তির ছায়া। মনে হলো, আমি কোলাহল থেকে বেরিয়ে কোনো গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়েছি।
---
উবুদ: বালির সবুজ হৃদস্পন্দন
প্রথম গন্তব্য ছিল উবুদ।
চারদিক শুধু ধানক্ষেত, নারকেল গাছ আর ঘরবাঁধা শিল্পের শহর।
এখানে মানুষ হেঁটে চলে ধীরে, চোখে মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি।
প্রতিটা বাড়ির সামনে থাকে একটুকরো মন্দির, আর প্রতিদিন সকালে নারীরা ফুল, ধূপ আর চাল দিয়ে সাজিয়ে দেয় “অফারিং”।
এক সকালে, আমি হাঁটছিলাম উবুদের সরু এক রাস্তায়। এক বালinese বৃদ্ধা আমায় দেখেই বললেন, “Good morning, where are you from?”
আমি বললাম “Bangladesh.”
তিনি হেসে বললেন, “Ah! Far away. But welcome home.”
তখনই মনে হলো, বালি শুধু পর্যটকদের স্বাগত জানায় না—এ দ্বীপ আপনাকে আলিঙ্গন করে।
---
সেমিনিয়াক ও সানসেট
বালিতে সূর্যাস্ত মানেই এক অনুষ্ঠান।
সেমিনিয়াক বিচে বসে থাকতে থাকতে দেখছিলাম, সূর্য ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে সমুদ্রে।
লোকজন সারি সারি বসে আছে, কেউ স্যান্ডে আঁকছে ভালোবাসার প্রতীক, কেউ ছবি তুলছে, আবার কেউ চুপচাপ বসে আছে, শুধু দেখছে।
এক কাপ নারকেল পানি হাতে আমি বলছিলাম নিজেকে—
“কত রকম জীবন বাঁচে এই সূর্যের নিচে, আর আমি তারই একজন দর্শক।”
---
বালিয়ানদের জীবনদর্শন—“ত্রি হিতা করানা”
বালিতে এক দর্শন আছে—Tri Hita Karana—মানে,
> “মানুষ, প্রকৃতি আর ঈশ্বরের মাঝে সামঞ্জস্য থাকা।”
এই বিশ্বাসই বালিকে করেছে এত শান্তিপূর্ণ।
মানুষ রাগ করে না, গলা তোলে না, হাসি দিয়ে সবকিছু বলে দেয়।
তারা গানের মতো করে কথা বলে, ফুল দিয়ে পথ সাজায়, আর যেকোনো অতিথিকে বলে—“আমাদের সঙ্গী হও।”
---
তীর্থা এম্পুল—পবিত্র জলের টান
আমি গিয়েছিলাম তীর্থা এম্পুল মন্দিরে।
এক পবিত্র জলাশয়, যেখানে মানুষ দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে গায়ে জল নেয়।
আমি কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। মনে হলো, এ শুধু ধর্ম নয়—এ এক আত্মশুদ্ধি।
আমার পেছনে এক যুবক বলল, “Try once. Wash away your travel fatigue.”
আমি চুপচাপ গিয়ে মাথা নিচু করলাম, ঠাণ্ডা জলে ডুব দিলাম।
উঠে যখন তাকালাম, মনে হলো—শুধু শরীর না, মনটাও ধুয়ে গেছে।
---
শেষ বিকেলে বালির প্রেমে পড়া
বালির গোধূলি আলোর ভেতর আমি হাঁটছিলাম একা।
বাচ্চারা ফুটবল খেলছে, নারীরা মন্দিরে যাচ্ছে, বাতাসে ভেসে আসছে গামেলান সুর।
তখনই বুঝলাম—বালি কোনো গন্তব্য নয়, বালি এক অনুভব।
যেখানে আপনি কিছুই না করেও পূর্ণ হয়ে ওঠেন।
---
শেষ কথায়...
আমার ভ্রমণ অনেক দেশে, অনেক পথে। কিন্তু বালির মতো শান্ত, দয়ালু ও গভীর জায়গা খুব কমই পেয়েছি।
এই দ্বীপ যেন আপনাকে বলে—“জীবনটা খুব দ্রুত নয়, একটু থামো, একটু শুনো, একটু দেখো।”
আর আমি থেমে গেছি, শুনেছি, দেখেছি, আর প্রেমে পড়ে গেছি।
Page Name:
“একসাথে দেখি পৃথিবীটাকে অন্যভাবে…”