13/01/2024
খাস জমি
দীর্ঘ আলোচনায় আমরা দাগ ও খতিয়ান সম্পর্কে জেনেছি। কোন মৌজায় দাগ নম্বর ১ হতে শুরু হয়। ঠিক তেমনি কোন মৌজায় খতিয়ান নম্বরও ১ হতে শুরু হয়ে ক্রমানুসারে চলতে থাকে। কোন মৌজার রেকর্ডের ভলিউম খুললে ্রথমেই যে খতিয়ানটি দেখা যাবে সেটি হল ১ নং খতিয়ান এবং এ খতিয়ানের মালিকের অংশে কারও নাম লেখা থাকবে না। নামের বদলে লেখা থাকবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ও জেলার নাম। এই খতিয়ানে যে দাগ নম্বরগুলো থাকবে এবং সেই দাগের পাশে যে জমির পরিমাণ লেখা থাকবে সেই জমিই খাস জমি। এখানে মনে রাখতে হবে যে, ১ নং দাগ কিন্তু খাস জমি নয়, ১ নং খতিয়ানভুক্ত জমি হল খাস জমি। অন্যভাবে বলা যায় যে, সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে ন্যস্ত এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীণ অর্থাৎ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জমিই খাস জমি। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের যে জমি থাকে সেগুলো খাস জমি কিনা? না; সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যে কোন ধরণের সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি খাস জমি নয়, এগুলোকে সরকারি জমি বলা হয় । শুধুমাত্র ১ নং খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমিই খাস জমি। খাস জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয় না কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয়। রেকর্ড ভলিউমে সাধারণত ২ নং খতিয়ান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির রেকর্ড শুরু হয়। এখন প্রশ্ন আসবে কোন জমি খাস কিনা সেটি কিভাবে বুঝা যাবে? আমরা যদি কোন দাগের জমি খাস কিনা তা যাচাই করতে চাই তাহলে প্রথমেই আমাদেরকে ঐ মৌজার ১নং রেকর্ড ভলিউমের দাগসূচি দেখতে হবে। দাগসূচিতে যদি ঐ দাগটির পাশে ১ নং খতিয়ান লেখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, ঐ দাগের জমি খাস জমি। তারপর ঐ মৌজার ১ নং খতিয়ান যাচাই করলে দেখা যাবে ঐ দাগটি সেখানে লেখা আছে। কোন দাগের সকল জমিই খাস হতে পারে আবার কিছু জমি খাস এবং কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানায় থাকতে পারে। এ বিষয়টিও বুঝা যাবে দাগসূচি থেকে। ধরি, রসুলপুর মৌজার দাগসূচিতে ২৪৫ দাগটির পাশে খতিয়ান নম্বর ১ এবং জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ লেখা আছে। ঠিক তার পরের লাইনে ২৪৫ দাগটি আবার লেখা এবং তার পাশে খতিয়ান নম্বর ১০৩ ও জমির পরিমাণ ১৫ শতাংশ লেখা আছে। তাহলে বুঝা যাবে যে, রসুলপুর মৌজার ২৪৫ দাগের মোট ৪০ শতাংশ জমির মধ্যে ২৫ শতাংশ জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি এবং ১৫ শতাংশ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, পূর্বের জরিপে অর্থাৎ এসএ জরিপে কোন দাগের জমি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল, কিন্তু পরবর্তী জরিপে তা ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়েছে। এ বিষয়টি দাগসূচি হতে সহজে বুঝা যাবে না। উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাক। ধরি, রসুলপুর মৌজার দাগসূচিতে ২৪৫ দাগটির পাশে খতিয়ান নম্বর ৪৬ এবং জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ লেখা আছে। পাশের কলামে ২৪৫ এর সাবেক দাগ হিসেবে ১৫৬ এবং জমির পরিমাণ ২০ শতাংশ লেখা আছে। এ জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল কিনা তা কিন্তু এখন বুঝা যাচ্ছে না। এর জন্য আমাদেরকে ঐ রসুলপুর মৌজার এসএ রেকর্ডের (পূর্ববর্তী জরিপের খতিয়ান) খতিয়ান যাচাই করতে হবে। এসএ রেকর্ডের দাগসূচিতে যদি হালদাগ ১৫৬ এর পাশে খতিয়ান নম্বর ১ লেখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, বর্তমান জরিপের ২৪৫ দাগটি পূর্বের জরিপে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল।
পাবলিক ইজমেন্টঃ
কোন মৌজার যে সকল খাস জমি জনসাধারণ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন তাকে পাবলিক ইজমেন্টভুক্ত জমি বা জনসাধারণের ব্যবহার্ জমি বলে, যেমন- হালট, নদী, খাল, রাস্তা, বিল, গোপাট ইত্যাদি। কোন মৌজার ১ নং রেজিস্টারের ১ নং ভলিউমের শুরুর দিকে ঐ মৌজার সকল পাবলিক ইজমেন্টভুক্ত জমির একটি তালিকা থাকে। এছাড়াও, খাস জমি হওয়ার কারণে ১ নং খতিয়ানেও পাবলিক ইজমেন্টভুক্ত জমির দাগসমূহ লিপিবদ্ধ থাকে। নিচের চিত্রে পাবলিক ইজমেন্টভুক্ত কিছু দাগ রয়েছে।