02/07/2024
গল্প:৪
দোয়া কবুলের গল্প
এশার নামাজ শেষ করে বাড়ির দিকেই আসছিলাম, মাঝ পথে আসার পর হঠাৎ মনে হলো, একটা ভুল হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে পরিচিত এক ভাই তাঁর মায়ের জন্য দোয়া করতে বলেছিলেন। বিকেল চারটার সময় উনার মা প্রেসারে স্টোক করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। লোকটা ক্রন্দনরত অবস্থায় তাঁর মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছিলেন আর আমি কি-না বেমালুম ভুলে বসে আছি। এমন তো হবার কথা নয়! ধুর, আজকাল একটু বেশিই ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছি। এতটা ভুলোমনা হলে কি চলে, বলুনতো? নিজের কাছেই কেমন খারাপ লাগছে।
বাড়ির পথে আর পা না বাড়িয়ে আবার ছুটে গেলাম মসজিদে। জায়নামাজ বিছিয়ে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়লাম। মোনাজাত করার সময় মনে হলো, শুধু এক ব্যক্তির জন্য দোয়া করলে হবে না, আমার আরো অনেকের জন্য দোয়া করতে হবে। এই ছোট্ট মানুষটার কাছে এ পর্যন্ত অনেকেই দোয়া চেয়েছিলেন, তাদের কারো জন্যেই জায়নামাজে বসে দোয়া করা হয়নি। আল্লাহর কাছে হাত তুলে চোখের পানি ফেলা হয়নি। আজ সবার জন্য দোয়া করবো। প্রাণ ভরে দোয়া করবো।
একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুনতো --পৃথিবীর কত জায়গা থেকে কত মানুষ কতো কিছুর জন্য আমাদের কাছে দোয়ার দরখাস্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই চোখে পড়ে, কত মানুষ দোয়া চেয়ে পোস্ট করেন। কারো মায়ের জন্য, কারো বাবার জন্য, কারো সন্তানাদি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন কিংবা নিজের জন্য দোয়া চেয়ে থাকেন। আমরা কি তাদের জন্য দোয়া করি? জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে হাত তুলে চোখের পানি ফেলি?
কেউ করে কেউ করে না আবার কেউ কেউ মুখে মুখে বলে ঠিকই কিন্তু পরে আর মনে থাকে না। জাগতিক ব্যস্ততার কারণে পুরোদস্তুর ভুলে যায়।
আচ্ছা, একটু ভাবুনতো! কারো জন্যে দোয়া করলে আমাদের কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়? বরং লাভ আমাদেরই। আমরাও তো নানান বিষয়ে কত মানুষের কাছে দোয়া চাই। অসুস্থতা থেকে রোগ মুক্তি, পড়াশোনার উন্নতি, সাংসারিক ত্রুটি-বিচ্ছুটি, আর্থিক অসচ্ছলতা, মানসিক টেনশান, হাতাশা, ডিপ্রেশন কিংবা মনের আশা পূরণ হওয়ার জন্য। তারা কি আমাদের জন্য দোয়া করে? রবের দরবারে হাত উঠিয়ে কাঁদে?
বিনিময় ছাড়া কিছু হয় না এটা জগতের নিয়ম। কিছু পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু ত্যাগ করতে হবে। যেমন ধরুন, আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার কাছে চাও। আমার কাছে কোনোকিছুর অভাব নেই। কার কী প্রয়োজন চাইলেই তোমরা পাবে।
এবার যদি আমরা আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে চাইতে লজ্জাবোধ করি, তবে কী আল্লাহ নিজে এসে আমাদের দিয়ে যাবেন? তেমনি নিজে কারো জন্যে দোয়া না করে অন্যের কাছ থেকে দোয়া পাওয়ার আশা করাটাও বোকামি। আমরা যদি মানুষের জন্য দোয়া করি মানুষও আমাদের জন্য দোয়া করবে। দশ জনের কাছে দোয়া চাইলে একজন হলেও করবে। আর কে জানে আল্লাহ কখন কার দোয়া কবুল করেন!
মনে করুন, আপনি একজন রুগ্ন ব্যক্তির জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ আপনার দোয়াটা কবুল করে নিয়ে লোকটাকে রোগমুক্ত করে দিলেন। বিষয়টা কেমন হয় বলুনতো? এমন যদি হয় কতোই না ভালো হয়! মানুষে মানুষে একটা গোপনীয় আত্মার সম্পর্ক হয়ে যায়।
আজ দীর্ঘ সময় নিয়ে দোয়া করেছি। দোয়া করার সময় আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিলো। অদ্ভুত! এমনটা আগে কখনো হয়নি। মসজিদে আসতাম, নামাজটা পড়ে শটকার্ট দোয়া করে চলে যেতাম। আজ খুব ভালো লাগছে। মনের মধ্যে অজানা একটা প্রশান্তির বাতাস বইছে। দারুণ এক অভিজ্ঞতা পেলাম।
কোথাও শুনেছিলাম, দোয়া করার পর মনে প্রশান্তি আসলে নাকি সেই দোয়া কবুল হয়। জানি না, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন কি-না! তবে, দোয়া করতে যে এত ভালো লাগে আগে জানলে রোজই এমনভাবে দোয়া করতাম।
বাড়িতে এসে চট্টগ্রামের সেই ভাইটিকে একটা এসএমএস করে রাখলাম, "ভাই, আমি আপনার মায়ের জন্য দোয়া করেছি। প্রাণ ভরে দোয়া করেছি। আপনার মায়ের অবস্থা কেমন সময় করে জানিয়েন।"
সকালে উঠে দেখলাম, ভাইটি আমার মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছেন, "আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ মনে হয় আপনার দোয়া কবুল করেছেন। আমার এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। ডাক্তার বলেছেন, এখন আর ভয়ের কিছু নেই তবে, সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আর আপনাকে অনেক
অনেক ধন্যবাদ। আমিও আপনার জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক।"
লোকটার কথা শুনে মনটা ভরে গেল। খুব শান্তি লাগছে। এইতো ভালোবাসা, মানুষে মানুষে ভালোবাসা, আত্মার সাথে আত্মার ভালোবাসা। আহা! এইভাবে যদি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ, মানুষের জন্য দোয়া করতো কতোই না ভালো হতো!
এরকম আরো গল্পের জন্য এখুনি পেইজটি ফলো করুন