Raisa moni

Raisa moni Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Raisa moni, Digital creator, Tejkunipara.

আগের দিনগুলি খুবই মিষ্টি ছিলো
16/07/2024

আগের দিনগুলি খুবই মিষ্টি ছিলো

প্রকৃতি
15/07/2024

প্রকৃতি

14/07/2024

আসসালামু আলাইকুম
শুভ সকাল

নিজের হাতে তোলা প্রকৃতির ছবি
12/07/2024

নিজের হাতে তোলা প্রকৃতির ছবি

আজকে তোমাদের রানীর এ-ই পর্বটা কাঁদিয়েছে হাজারো দর্শক,,,,তবে মনে হয়ে রানী মারা যেতে পারেনা,,তাহলে তো গল্পর কিছুই থাকেনা,,...
09/07/2024

আজকে তোমাদের রানীর এ-ই পর্বটা কাঁদিয়েছে হাজারো দর্শক,,,,তবে মনে হয়ে রানী মারা যেতে পারেনা,,তাহলে তো গল্পর কিছুই থাকেনা,, কে কে একমত

দূর্যয় এবং তার মেয়ে কার কার ভালো লাগে ভালো লাগলে একটা লাইক দিয়ে যাবেন
08/07/2024

দূর্যয় এবং তার মেয়ে কার কার ভালো লাগে ভালো লাগলে একটা লাইক দিয়ে যাবেন

08/07/2024
02/07/2024

গল্প:৪
দোয়া কবুলের গল্প

এশার নামাজ শেষ করে বাড়ির দিকেই আসছিলাম, মাঝ পথে আসার পর হঠাৎ মনে হলো, একটা ভুল হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে পরিচিত এক ভাই তাঁর মায়ের জন্য দোয়া করতে বলেছিলেন। বিকেল চারটার সময় উনার মা প্রেসারে স্টোক করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। লোকটা ক্রন্দনরত অবস্থায় তাঁর মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছিলেন আর আমি কি-না বেমালুম ভুলে বসে আছি। এমন তো হবার কথা নয়! ধুর, আজকাল একটু বেশিই ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছি। এতটা ভুলোমনা হলে কি চলে, বলুনতো? নিজের কাছেই কেমন খারাপ লাগছে।

বাড়ির পথে আর পা না বাড়িয়ে আবার ছুটে গেলাম মসজিদে। জায়নামাজ বিছিয়ে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়লাম। মোনাজাত করার সময় মনে হলো, শুধু এক ব্যক্তির জন্য দোয়া করলে হবে না, আমার আরো অনেকের জন্য দোয়া করতে হবে। এই ছোট্ট মানুষটার কাছে এ পর্যন্ত অনেকেই দোয়া চেয়েছিলেন, তাদের কারো জন্যেই জায়নামাজে বসে দোয়া করা হয়নি। আল্লাহর কাছে হাত তুলে চোখের পানি ফেলা হয়নি। আজ সবার জন্য দোয়া করবো। প্রাণ ভরে দোয়া করবো।

একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুনতো --পৃথিবীর কত জায়গা থেকে কত মানুষ কতো কিছুর জন্য আমাদের কাছে দোয়ার দরখাস্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই চোখে পড়ে, কত মানুষ দোয়া চেয়ে পোস্ট করেন। কারো মায়ের জন্য, কারো বাবার জন্য, কারো সন্তানাদি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন কিংবা নিজের জন্য দোয়া চেয়ে থাকেন। আমরা কি তাদের জন্য দোয়া করি? জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে হাত তুলে চোখের পানি ফেলি?

কেউ করে কেউ করে না আবার কেউ কেউ মুখে মুখে বলে ঠিকই কিন্তু পরে আর মনে থাকে না। জাগতিক ব্যস্ততার কারণে পুরোদস্তুর ভুলে যায়।

আচ্ছা, একটু ভাবুনতো! কারো জন্যে দোয়া করলে আমাদের কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়? বরং লাভ আমাদেরই। আমরাও তো নানান বিষয়ে কত মানুষের কাছে দোয়া চাই। অসুস্থতা থেকে রোগ মুক্তি, পড়াশোনার উন্নতি, সাংসারিক ত্রুটি-বিচ্ছুটি, আর্থিক অসচ্ছলতা, মানসিক টেনশান, হাতাশা, ডিপ্রেশন কিংবা মনের আশা পূরণ হওয়ার জন্য। তারা কি আমাদের জন্য দোয়া করে? রবের দরবারে হাত উঠিয়ে কাঁদে?

বিনিময় ছাড়া কিছু হয় না এটা জগতের নিয়ম। কিছু পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু ত্যাগ করতে হবে। যেমন ধরুন, আল্লাহ বলেছেন, তোমরা আমার কাছে চাও। আমার কাছে কোনোকিছুর অভাব নেই। কার কী প্রয়োজন চাইলেই তোমরা পাবে।

এবার যদি আমরা আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে চাইতে লজ্জাবোধ করি, তবে কী আল্লাহ নিজে এসে আমাদের দিয়ে যাবেন? তেমনি নিজে কারো জন্যে দোয়া না করে অন্যের কাছ থেকে দোয়া পাওয়ার আশা করাটাও বোকামি। আমরা যদি মানুষের জন্য দোয়া করি মানুষও আমাদের জন্য দোয়া করবে। দশ জনের কাছে দোয়া চাইলে একজন হলেও করবে। আর কে জানে আল্লাহ কখন কার দোয়া কবুল করেন!

মনে করুন, আপনি একজন রুগ্ন ব্যক্তির জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ আপনার দোয়াটা কবুল করে নিয়ে লোকটাকে রোগমুক্ত করে দিলেন। বিষয়টা কেমন হয় বলুনতো? এমন যদি হয় কতোই না ভালো হয়! মানুষে মানুষে একটা গোপনীয় আত্মার সম্পর্ক হয়ে যায়।

আজ দীর্ঘ সময় নিয়ে দোয়া করেছি। দোয়া করার সময় আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিলো। অদ্ভুত! এমনটা আগে কখনো হয়নি। মসজিদে আসতাম, নামাজটা পড়ে শটকার্ট দোয়া করে চলে যেতাম। আজ খুব ভালো লাগছে। মনের মধ্যে অজানা একটা প্রশান্তির বাতাস বইছে। দারুণ এক অভিজ্ঞতা পেলাম।

কোথাও শুনেছিলাম, দোয়া করার পর মনে প্রশান্তি আসলে নাকি সেই দোয়া কবুল হয়। জানি না, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন কি-না! তবে, দোয়া করতে যে এত ভালো লাগে আগে জানলে রোজই এমনভাবে দোয়া করতাম।

বাড়িতে এসে চট্টগ্রামের সেই ভাইটিকে একটা এসএমএস করে রাখলাম, "ভাই, আমি আপনার মায়ের জন্য দোয়া করেছি। প্রাণ ভরে দোয়া করেছি। আপনার মায়ের অবস্থা কেমন সময় করে জানিয়েন।"

সকালে উঠে দেখলাম, ভাইটি আমার মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছেন, "আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ মনে হয় আপনার দোয়া কবুল করেছেন। আমার এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। ডাক্তার বলেছেন, এখন আর ভয়ের কিছু নেই তবে, সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আর আপনাকে অনেক
অনেক ধন্যবাদ। আমিও আপনার জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক।"

লোকটার কথা শুনে মনটা ভরে গেল। খুব শান্তি লাগছে। এইতো ভালোবাসা, মানুষে মানুষে ভালোবাসা, আত্মার সাথে আত্মার ভালোবাসা। আহা! এইভাবে যদি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ, মানুষের জন্য দোয়া করতো কতোই না ভালো হতো!

এরকম আরো গল্পের জন্য এখুনি পেইজটি ফলো করুন

02/07/2024

গল্প:৩
এক টুকরো জীবন

ফারিয়ার বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই মনে হতে থাকে সে যখন ঘরের টুকিটাকি কাজ করে তখন আনিস বেশ বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকায়। আড়চোখে লোকটার মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কিছু একটা সে পছন্দ করছে না। সে ঘুরে আনিসের দিকে সরাসরি তাকাতেই আবার সে চোখ সরিয়ে নেয় বা মুচকি একটা হাসি দেয় তার দিকে দৃষ্টিবদ্ধ রেখে। আনিস যে তাকে পছন্দ করে না, বিষয়টা এমন না। লোকটা যে তাকে এর মধ্যেই কতটা ভালোবেসে ফেলেছে তা সে বুঝতে পারে। সে যখন আনিসের পাশে গিয়ে বসে কী মায়া নিয়ে লোকটা তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে। অন্য মানুষের সঙ্গে যে কোনো কথা বলতে গেলে মুখটা কিছুটা শক্ত করে কথা বলে সে। কিন্তু সে হাজির হলেই মুখের কঠোরতা উধাও হয়ে যায়। কী এক মিষ্টি ভঙ্গিতে কথা বলে তার সঙ্গে। যেন এখনো লজ্জা কাটেনি তার। ফারিয়ারও বেশ লজ্জা লাগে হঠাৎ।

বিয়ের পরই একটা সংসারের পুরো দায়িত্ব চলে এসেছে তার উপর। আনিসের বাবা-মা বেঁচে নেই। আত্মীয়-স্বজন সব বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই চলে গেছে। আনিসের আপন বড় বোন অনেক কষ্টে তিন দিন ছুটি নিয়ে ভাইয়ের বিয়েতে উপস্থিত ছিল স্বামী সন্তান সহ। অফিসের সঙ্গে রাগারাগি করেও অতিরিক্ত আর ছুটি না পেয়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে শ্বশুরবাড়িতে। অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই কল করে ফারিয়ার খোঁজ খবর রাখছেন তিনি। আর ক্ষমা চাচ্ছেন সংসারে এনে তাকে একা ফেলে দিয়ে কিছু বুঝিয়ে না দিয়েই চলে যাওয়ার কারণে। আনিসের বড় বোন লতা আপুকে বেশ ভালোই লাগে তার। নিজের পরিবারের মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ হয় নিয়মিত। আর আনিসতো চোখের আড়ালই হয় না। লোকটার বোধ হয় বাইরে বাইরে ঘুরার অভ্যাস নেই। এক কথায় বিবাহিত জীবনের শুরুর দিন গুলো ভালোই উপভোগ করছে ফারিয়া।

শুধু ওই একটাই সমস্যা। মাঝেমধ্যে তার মনে হয় আনিস বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকায় যখন সে কাজ করে সংসারের। এটা কী তার মনের ভুল! আনিস নিশ্চই চায় না যে সব কাজ ফেলে সারাদিন তার পাশে এসে বসে থাকুক সে! চাইতেও পারে! নতুন নতুন এসবই ভালো লাগে! এসব ভাবতেই লজ্জা অনুভব করে ফারিয়া। আনমনে হাসে। লোকটার সঙ্গে যখন কথা বলে কেমন ফ্যালফ্যাল করে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। একই সাথে লজ্জা আর লোকটার প্রতি মায়া অনুভব করে সে।

মুঠোফোনে কথা বলে এরমধ্যেই লতা আপুর সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সব সময় আজগুবি কিছু না কিছু উপদেশ তাকে দিতেই থাকে আনিসের এই একমাত্র বড় বোন। মানুষটাকে বেশ মজার মনে হয় ফারিয়ার কাছে। একদিন ফোনে কথা হচ্ছিল। লতা আপু হঠাৎ বললেন,

'নতুন বিয়ে হয়েছে। তোমাদেরর মধ্যে নিশ্চই ঝগড়া, খুনসুটি লেগে থাকে সব সময়?'

'আমারতো ইচ্ছা ছিল এমনটাই করার। কিন্তু আপনার ভাইতো ঝগড়ার ধার কাছ দিয়েই যায় না!'

'হাহাহা! ও এইরকমই! বেশ চাপা স্বভাবের। শত অভিযোগেও মুখ খুলবে না। অবশ্য তোমাকে যতটুকু চিনেছি তুমি অভিযোগ করার সুযোগ রাখো না। তবে আস্তে আস্তে দেখবে ও কতটা ফ্রি হয়ে উঠবে তোমার সাথে! অবশ্য তুমি যদি ওর আপন হয়ে যাও অনেক এক গুঁয়েমিই ওর সহ্য করতে হবে।'

'তাই নাকি!' হালকা বিস্ময় ফোটায় ফারিয়া কণ্ঠে।

'তুমি জানো, আমি ওর আপন বড় বোন! অথচ আমার সঙ্গে এমন লজ্জা পেয়ে কথা বলে যেন আমি পাশের বাড়ির মহিলা! প্রয়োজনের বেশি একটাও কথা বলে না। আমি নিজেও সংসার, অফিসের কাজে ওকে সময় দিতে পারিনি ঠিকমতো! আগে অবশ্য এমনটা ছিল না। খুব ছটফট স্বভাবের ছেলে ছিল। কিন্তু মা মারা যাওয়ার পর.......!'

লতা আপুর কণ্ঠটা কেমন আর্দ্র হয়ে উঠলো। ফারিয়া কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেল। কী বলবে বুঝতে পারছে না। এসব প্রসঙ্গ উঠলে সে বিব্রত হয়ে পড়ে। আগে থেকেই। লতা আপুই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলে গেলেন,

'মা রোগে ভুগছিলেন আমরা ছোট থাকা থেকেই। বাবা মারা যাওয়ার পর অযত্নেই তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। হঠাৎই এক দিন স্ট্রোক করে মারা গেলেন বাড়িতেই। সবে কলেজ থেকে ফিরেছিল আনিস সেদিন। বাড়িতে ফিরে দেখে বাড়ি ভর্তি মানুষ। মায়ের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারলো না ছেলেটা। একদম শান্ত হয়ে এলো। আচ্ছা ফারিয়া তুমি যখন সাংসারিক কাজ করো তখন তোমার দিকে আনিস বিরক্ত হয়ে তাকায় না?'

ফারিয়া কিছুটা হকচকিয়ে গেল। এ কথা সে আপাকে বলেনি। সে কী করে জানলো! শান্ত কণ্ঠেই সে উত্তর দিল, 'নাতো!'

'তুমি খেয়াল করোনি তাহলে ফারিয়া! আমি নিশ্চিত সে অমন করে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে ওই সংসারে মায়ের জায়গায় আর কাউকেই কল্পনা করতে পারে না। মা মারা যাওয়ার কয়দিন পর আমাদের এক মামী গিয়েছিল রান্নাঘরে। বাচ্চা ছেলের মতো কান্না করে, রেগে-মেগে সে তাকে ওখান থেকে বের করে দেয়। না কাউকে বাড়ির কাজ করতে দেবে, না সে খাবে কিছু। কত বুঝিয়ে রাজি করলাম আমরা। সদ্য কলেজে উঠলেও বাচ্চা একটা ছেলের মতোই ছিল সে। এরপর থেকে আমি বিয়ের আগে পর্যন্ত বাড়ির কাজ করা অবস্থায় হুট করে যখনই ওর দিকে তাকিয়েছি, তখনই ভয় পেয়ে গেছি। কী একটা আক্রোশ নিয়ে তাকিয়ে থাকে সে। বাড়িতে যেই কাজ করুক তার দিকেই। কতগুলো বছর কেটে গেছে। মায়ের ছবি কত ঝাপসা হয়ে গেছে আমাদের চোখে। এখনো সেই স্বভাব তার যায়নি। যদিও বড় হয়েছে, মাস্টারি করে, কত বই পড়ে! এখন অনেক কিছুই বুঝে বলে বাধা দেয় না। কিন্তু তার চোখের বিরক্তিও চোখ এড়ায় না কারো। তুমি জানো না কত কসরৎ করে বিয়েতে ওকে রাজি করাতে হয়েছে! তোমার ছবি দেখে কী হয়ে গেল তার, কোনো আপত্তি করলো না আর। তবুও বিয়ের সময়টায় আমরা সবাই মিলে যখন কাজ করছিলাম তখন ওর মুখভঙ্গি যদি দেখতে! এই বুঝি ক্ষেপে মারতে আসে। হাহাহা!'

কথাগুলো শুনে আর আনিসের সেই দৃষ্টির কথা মনে পড়ে কেন যেন কান্না পেয়ে গেল ফারিয়ার। চোখ দুটোর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো। হয়তো প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষ হিসেবে আনিসের এই আচরণকে উদ্ভট আর অদ্ভুত আচরণ বলে মনে হবে। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর সন্তানের মনে মানসিক ধাক্কা থেকে সৃষ্ট এই আচরণকে অতোটা হালকা ভাবে উপহাস করাও যায় না। এটা যে ওর মনের কোন কোণায় শক্ত করে গেঁথে রয়েছে তা কে কী করে খুঁজে বের করবে!

বিয়ের বয়স বাড়তে লাগলো। ধীরে ধীরে অভস্থ হয়ে উঠতে লাগলো ফারিয়া আনিসের সেই আড়াল করা বিরক্তি দৃষ্টির। স্থানীয় একটা স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক আনিস। দিনের অর্ধেকের বেশি সময় থাকে সে ওখানে। বাকিটা সময় বাড়িতে। সময় বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আনিসও কী অভস্থ হয়ে উঠছে নতুনত্বে! ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে চাইছে নিজের মনে সৃষ্ট হয়ে বিদ্বেষী এই আচরণ!

ফারিয়া খেয়াল করে আজকাল লোকটার সেই ভালবাসা পূর্ণ মায়াবী দৃষ্টি সেটে থাকে তার দিকে সব সময়েই। সে যখন তার পাশে থাকে তখন যেমন, আবার সাংসারিক কাজ করে যখন তখনও। সংসারের যে কোনো কাজই যখন সে করতে যায় আনিস এসে তার পাশে দাঁড়ায়। টুকটাক গল্প করে, আনাড়ি হাতে সেসব কাজ করতে সাহায্যও করে, আর বাকিটা সময় অদ্ভুত মায়ার আলো ফেলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এমনটা সে আগে করতো না।

এরকম আরো গল্পের জন্য এখুনি পেইজটি ফলো করুন

02/07/2024

গল্প :২
জোৎস্নাস্নান

বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে তৃষা রুমে ঢুকল। আমার তখনও বিভূতিভূষণ স্যারের 'চাঁদের পাহাড়' শেষ হয় নি। শেষ করতে আরও ৩-৪ মিনিট লাগবে। হঠাৎ বউটা বিছানায় ঘুমাতে না এসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আমি অতটা পাত্তা দিলাম না। হয়ত কোনো কিছু আনতে গেছে। ২ মিনিট পর ঘরে ঢুকল।
"শুন না! বাইরে জোৎস্নার আলোয় চারদিক উজ্জ্বল হয়ে গেছে। চলো না একটু ছাদে যাই।"
"সকালে মিটিং আছে। আমি পারব না। ঘুমাও এখন।"
তাকিয়ে দেখি বউয়ের মুখ অন্ধকার, চোখগুলো পানিতে চিকচিক করছে। এই মেয়েটাকে আমার কাছে ভারী অদ্ভুত লাগে। তার মনের বিরুদ্ধে কিছু বললেই চোখগুলো কেঁপে ওঠে, অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। সেসময় মনে হয় যেন স্বয়ং চোখ দুটিই আমার সাথে কথা বলছে। আকূতি মিনতি করছে তৃষার কথা রাখার জন্য। মাঝেমধ্যে মন চায় এই দৃশ্য দেখার জন্য হলেও ইচ্ছা করে তার মন খারাপ করিয়ে দেই।

আর কিছু না বলেই সে মুখ ঘুরিয়ে বারান্দায় চলে গেল। বউয়ের এমন অবস্থা দেখে মনটা হুট করে খারাপ হয়ে গেল। বাইরে প্রচন্ড গরম অথচ আমার মনে শ্রাবণের মেঘ জোরে জোরে ডাকছে। কাছের মানুষের মন খারাপ হলে কি মনের ভেতর বজ্রপাত ঘটে? কে জানে! আমারও আর শংকরের চাঁদের পাহাড় জয় করার গল্প শোনা হল না। পা টিপে টিপে বারান্দার দিকে এগুতে লাগলাম। গিয়ে দেখি আহেলিয়া এক মনে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। পিছে থেকে জড়িয়ে ধরে তার চোখদুটি হাত দিয়ে ঢাকলাম। হঠাৎ মনে হল হাতটা ভিজে গেছে। তৃষার মুখটা সামনে ঘুরিয়ে দেখি সে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে। আমার মনের শ্রাবণের মেঘ আর ডাকছে না। বরং সেই ডাক জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়ে গেছে। ভালোবাসার মানুষ যখন এভাবে কাঁদে তখন নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী লাগে।

আমি তাকে কাছে টেনে চোখ মুছে দেই। কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞাসা করি,
"এতটুকু জিনিসের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে?"
এবার বউটা আওয়াজ করেই কেঁদে দিল। মনে হচ্ছে তাকে সবে নির্যাতন করেছি। আমি মুখ চেপে ধরে বলি
"এই চুপ! চুপ! এভাবে কেন কাঁদছ? কেউ শুনবে তো।"
"শুনলে শুনুক। তুমি আমার প্রতি একটুও খেয়াল রাখো না। আমার প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই তোমার। একা হাতে ঘর, বাচ্চা সব সামলাই। অথচ সামান্য আবদার করলাম তাতেই না করে দিলে? কি চেয়েছি আমি? টাকা, পয়সা, দামী গহনা এমন কিছু চেয়েছি? আমি যা চাই তাতেই তোমার কোনো না কোনো অজুহাত। তোমার চাওয়ার সময় আমি কি কোনো অজুহাত দেখাই কখনও?"
আমার নিজের মধ্যে হঠাৎ খুব বেশি অপরাধবোধ কাজ শুরু করল। সত্যি তো। মেয়েটা আমার জন্য কি না করে? ঘর, বাচ্চা সব নিজে সামলায়। কোনো অভিযোগ করে না। সামান্য বেতন আমার অথচ তাতে তার কোনো কষ্ট নেই। শুধু চায় অফুরন্ত ভালোবাসা আর তার হুটহাট করে করা আবদার যেন মিটাই। কিন্তু আমি কেন এত অভিযোগ করি? বুঝতে পারলাম তার কান্না নিছক নয়। বরং অভিমানগুলো কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি তখন তাকে কোলে তুলে নি ছাদে যাবার উদ্দেশ্যে।
"এই! এই! কি করছ? পড়ে যাব তো। নামাও নিচে।"
"ওমা! সে কি কথা? নিচে নামালে জোৎস্নাস্নান করবে কে শুনি?"
বউ আর কিছু বলল না। কান্না হারিয়ে গিয়ে মুখটা হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চোখের পানিতে ভেজা মুখটায় হাসি দেখে আমার তাকে অপ্সরা লাগছে। মনে শুধু বলছে, 'এই মেয়ের প্রেমে আমি বারবার পড়তে রাজি।'

হাত দুটো দিয়ে শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে। আর আমি ভাবছি বউয়ের ওজনটা হঠাৎ বাড়ল বাড়ল কেন লাগছে?

শংকর তো চাঁদের পাহাড় জয় করল। আমি নাহয় বউয়ের মুখের হাসিটা জয় করে আসি যা আফ্রিকার রিখটারসভেল্ড আইসল্যান্ডের সেই হীরা অপেক্ষা দামি, অনেক দামি।

এরকম আরো গল্পের জন্য এখুনি পেইজটি ফলো করুন

02/07/2024

গল্প:১
অপেক্ষা

"আমি কখনো রিলেশন করবো না। যদি পারো তাহলে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমার পরিবারের কাছে আমাকে চেয়ো। ততদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এই ভালোবাসা থাকবে তো মিস্টার অনুভব আহসান আবির?"

আর্দ্রতার কথায় হালকা হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো অনুভবের ঠোঁটের কোণে।

"আবারো বলছি ভালোবাসি তোমায়। আমার ভালোবাসা কোনো ছেলেখেলা নয়। আজ তোমাকে কথা দিচ্ছি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই তোমাকে নিজের করে চাইবো। ততদিন পর্যন্ত নিজেকে আড়ালে রেখো। যেন অন্য কারো ছায়া তোমার উপরে না পড়ে।"

"তবে তাই হোক। আজ থেকে অনুভব আহসান আবির আর আর্দ্রতা জামান আইরা একে-অপরের বন্ধু। নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে আমরা একে-অপরকে সাহায্য করবো। এবং একই সাথে নিজেদের দেওয়া কথা স্মরণ করে এগিয়ে যাবো নিজেদের লক্ষ্যে!"

সেদিন নিজেদের দেওয়া কথা রেখেছিল অনুভব আর আর্দ্রতা। তারা কোনো সম্পর্কে না জড়িয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল একে-অপরের দিকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের পরিবার সামলিয়েছে দুজনেই। পার্ট টাইম জব আর টিউশনি করেও ঢাকার মাটিতে টিকে থাকতে বেশ লড়াই করতে হয়েছে তাদের।
প্রথমত নিজেদের হাত খরচ, আর তারপর নিজেদের পরিবারে কিছু টাকা পাঠিয়ে আর্থিক সহযোগিতা এসবই সমান তালে করেছে অনুভব আর আর্দ্রতা। কাকতালীয়ভাবে নাকি স্বাভাবিকভাবেই অনুভব আর আর্দ্রতা মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান ছিল তা জানা নেই কারোর। দুজনের কাঁধেই ছিল পরিবারের বড়সন্তান নামক ট্যাগ। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার ফলে কখনো রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাওয়া আবার কখনো ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছিল দু'জনেরই। আর্দ্রতা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বছরে দু/একটা পোশাক কিনলেও অনুভব তার পুরোনো সেই চেক শার্ট পরিধান করেই চলেছেবছরের পর বছর। একদিন অনুভবকে এক প্রকার চমকে দিয়েই আর্দ্রতা ওর মেসে গিয়ে হাজির হয়৷ অনুভব তখন পড়ছিল। দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলতেই আর্দ্রতাকে সামনে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গিয়েছিল সে।

"আর্দ্রতা তুমি?"

"হ্যা আমি। এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলবে?"

"না না ভেতরে এসো।"

আর্দ্রতা ভেতরে গিয়ে দেখলো সব অগোছালো। ব্যাচেলর হলে যা হয় আর কী!

"পুরো ঘরের অবস্থা তো গোয়ালঘর বানিয়ে রেখেছো।"

অনুভব মাথার পেছনে হাত দিয়ে কিছুটা লজ্জার সুরে বললো,

"ব্যাচেলর তো।"

"তা আমি বুঝি বিবাহিত?"

আর্দ্রতার এমন প্রশ্নে ভরকে গেল অনুভব।

"তুমি বিবাহিত হতে যাবে কেন?"

"সেটাই তো কথা। আমিও ব্যাচেলর। তুমিও ব্যাচেলর। আমি পরিপাটি হয়ে মেসে থাকতে পারলে তুমি কেন পারবে না? ছেলে বলেই কী এমন অগোছালো থাকতে হবে? এখন থেকে সব গুছিয়ে রাখবে। পরবর্তীতে এসে যেন আমি ঘরের এমন বেহাল অবস্থা না দেখি।"

"এখানে তো আমি একা থাকি না। আরো তিন জন থাকে।"

"সবাই মিলে গুছিয়ে রাখবে। আরে বাবা, পড়ার জন্য তো একটা সুন্দর পরিবেশ দরকার। এমন অগোছালো পরিবেশে পড়াশোনায় মন বসবে না কখনোই।"

"আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি।"

"বুঝলে ভালো। আর এই নাও।"

"কি এটা?"

"খুলে দেখ।"

প্যাকেটটা খুলে দু'টো শার্ট আর একটা জিন্স দেখে অনুভব অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আর্দ্রতাকে,

"এসব কী? তুমি নিজেই এত কষ্ট করে চলো। সেখানে এতগুলো টাকা আমার জন্য খরচ করার কোনো মানে হয় আর্দ্রতা?"

"এভাবে বলছো কেন? আমি তোমার বন্ধু না? বন্ধু হয়ে কিছু উপহার দিলে এভাবে বলতে হয় বুঝি?"

"না সেটা নয়। কিন্তু.."

"কোনো কিন্তু নয়। কালকে তুমি এগুলো পড়েই ক্যাম্পাসে যাবে। আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না।"

কথাটা বলেই আর্দ্রতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

"আজ আসি। আর এই বাটিতে কিছু খাবার আছে। আমি নিজে রান্না করে এনেছি। তোমার বাকি রুমমেটদের সাথে খেয়ে নিয়ো। আমি জানি তারাও তোমার, আমার মতোই কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত এসেছে।"

"জানো আর্দ্রতা আমি তোমাকে যত দেখি ততই অবাক হই। একটা মেয়ে সবার জন্য কতটা ভাবলে অচেনা কারোর জন্যও খাবার রান্না করে নিয়ে আসে?"

"আমি সাধারণ একজন। আর এসব মানবিকতার খাতিরে অতি সামান্য কিছু আয়োজন। আজকাল তো অনেকের মধ্যে মানবিকতা বলে কিছু নেই। তাই হয়তো তোমার কাছে আমাকে আলাদা মনে হয়।"

"হতে পারে!"

"আজ তবে আসি। ভালো থেকো। আর নিজের খেয়াল রেখো।"

কথাটা বলেই আর্দ্রতা বেড়িয়ে গেল নিজ গন্তব্যে। অনুভব স্বযত্নে প্রেয়সীর দেওয়া খাবার আর উপহার এক সাইটে রেখে আবার পড়ায় মনোযোগী হলো।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো। বছর পেরিয়ে গেলেও বন্ধুত্বের হাত ছিন্ন হয়নি অনুভব আর আর্দ্রতার। কঠোর পরিশ্রম, নিজ মনোবল আর একে-অপরকে দেওয়া সেই কমিটমেন্ট। সব মিলিয়ে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুভব আর আর্দ্রতার প্রায় ছয় বছর সময় লেগেছিল।

আজ অনুভব নিজের পরিচয় গড়েছে। একজন ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে আর্দ্রতা একজন ব্যাংকার হিসেবে কাজ করছে। সব ঠিকঠাক। এখন সময় এসে গেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের!

অনুভব আর আর্দ্রতা নদীর পাড় দিয়ে হাঁটছে। আর্দ্রতার পড়নে সাদা জামদানী। মুঠো ভর্তি রেশমি চুড়ি। মাথায় হিজাব করা। তার উপর ফুলের রাণী গোলাপ হিজাব পিনের সাথে আটকানো। মায়বী চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। এসবই অনুভব নিজে আর্দ্রতাকে উপহার দিয়েছে।

"ভারি মিষ্টি লাগছে তোমাকে।"

অনুভবের কথায় লজ্জা মাখা হাসি ফুটে উঠলো আর্দ্রতার ঠোঁটের কোণে!

"সাদা শুভ্রতার রং। সেই রংয়ে নিজেকে সাজিয়েছি যে!"

"প্রিয় রংয়ে প্রিয় মানুষটাকে দেখার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।"

"দীর্ঘ ছয় বছর পর আজ আমরা সফল। নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি আমরা।"

"এতকিছুর পরেও নিজেদের দেওয়া কথা ভুলিনি কেউই!"

"আজ সময় এসে গেছে আমাদের কথা রাখার। আমি আমার পরিবারকে তোমার কথা জানিয়েছি। তারা তোমার পরিবার নিয়ে যেতে বলেছে আমাদের বাসায়।"

"যাবো। কালই যাবো আমার পরিবারকে নিয়ে। অনেক অপেক্ষা করেছি। আর না!"

"আমিও চাই আমাদের চার হাত সবার সম্মতিতে খুব তাড়াতাড়ি এক হোক!"

"আচ্ছা চলো তোমাকে দিয়ে আসি।"

"আমি একাই যেতে পারবো।"

"আমি জানি তুমি একাই যেতে পারবে। কিন্তু আজ আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসতে চাই আর্দ্রতা।"

"আচ্ছা ঠিক আছে। চলো তাহলে যাওয়া যাক।"

বাসে উঠে পাশাপাশি সিটে বসলো দু'জন। রাত প্রায় দশটা বাজে। ঢাকা শহর এখন আলোয় ভরপুর। এদিকে দুজন মানব-মানবীর মুখের হাসি জানান দিচ্ছে আজ তারা খুব খুশি।

"হাতটা ধরতে পারি কী আজ?"

"অপেক্ষা যখন করলেই তখন আর কিছু দিন অপেক্ষা করো। তখন শুধু হাত না, এই আমি সম্পূর্ণটাই তোমার হয়ে যাবো।"

"আচ্ছা তবে তাই হোক।"

হঠাৎই একটা বিকট আওয়াজে চারিদিক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল। আর্দ্রতাদের বাস অন্য একটা ট্রাকের সাথে লেগে গুরুতর অবস্থা। বাস উল্টে গেছে। বাসে থাকা বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে৷ সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে মুখরিত হলো চারপাশ। রাস্তায়লাশের রক্তের গন্ধে সবার দমবন্ধ অবস্থা। কত মানুষ মারা গেছে তা এখনো কেউ জানেনা। ইতোমধ্যেই পুলিশের গাড়ি এসে থেমেছে স্পটে। সবাইকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় চোখ পড়লো এক দম্পতির দিকে। ছেলেটার বুকে মেয়েটার মাথা দেখা যাচ্ছে। দুজনের কেউ বেঁচে নেই। তবুও ঠোঁটের কোণে মুচকিহাসির রেখা দেখে অবাক হতে বাধ্য হলো উপস্থিত সকলেই। এমন ঘটনা হয়তো আগে কখনো দেখেনি কেউ। তাদের পাশে গিয়ে মেয়েটার ব্যাগ আর ছেলেটার ওয়ালেট বের করতেই চোখে পড়লো দুটো নাম!

"আর্দ্রতা আর অনুভব!"

সাথে সাথে বাড়ির লোককে কল করে জানানো হলো তারা আর বেঁচে নেই। স্পটেই মৃত্যু হয়েছে তাদের। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। যে দু'জন এক সময় নিজেদের এক করার জন্য অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর। সেই দু'জন মানব-মানবী যখন একে-অপরকে পেতে যাচ্ছিল তখনই এক দমকা হাওয়াএসে সব ওলটপালট করে দিলো।

অপেক্ষা শব্দটা ছোট হলেও এর পরিসর অনেক। এতগুলো দিন অপেক্ষা করেও শেষ মুহূর্তে এসে নিয়তির নির্মম পরিহাসে আজ তারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল বহুদূরে। এতটাই দূরে চলে গেল যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়।

দুনিয়ার বুকে একসাথে বাঁচতে চেয়েছিল অনুভব আর আর্দ্রতা। তাদের এই চাওয়া পূরণ হয়নি ঠিকই। কিন্তু একসাথে চলে যাওয়ার ভাগ্য হয়েছে তাদের। নিজের প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে চিরজীবনের জন্য চোখ বন্ধ করে নিয়েছে আর্দ্রতা নামক মিষ্টি মেয়েটি। অন্যদিকে প্রেয়সীর হাত ধরতেনা পারলেও তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে অনুভব নামক সেই ভাবুক ছেলেটি।

ভালো থাকুক তারা ওপারে। এই জীবনে এক হতে না পারার আক্ষেপটা যেন ওপারে গিয়ে মুছে যায়। অপেক্ষা নামক শব্দটার যেন এবার সমাপ্তি ঘটে!

এরকম আরো গল্পের জন্য এখুনি পেইজটি ফলো করো

Address

Tejkunipara

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Raisa moni posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share