27/07/2025
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য bdtickets থেকে Royal Coach বাসের AC suite class এর টিকেট কিনলাম। এই বাসে আমার এটা তৃতীয় বারের অভিজ্ঞতা। কিন্তু, এবারই সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হলো, আশা করি এটাই শেষবার। 💁♀️
সিটের সামনে Leg-space তো নাই, মাথা রাখার জায়গাটাও ছিল অনেক অস্বস্তিকর। আর প্রতিবার হার্ড ব্রেকে বসার সিটের ফোমসহ উঠে সামনে চলে যাচ্ছিলো। এসব ও মেনে নিলাম। অনলাইনে আসলে অনেক বিচক্ষণতার সাথে বাস চুজ করা লাগে।
কিন্তু, জীবন হাতে নিয়ে জার্নি করাটা ছিল সবথেকে বাজে একটা অভিজ্ঞতা। বাসের ড্রাইভার রীতিমতো ইন্টেনশনালি (ভোর ৬টার মধ্যে ঢাকায় থাকার জন্য) উড়াল দিচ্ছিলো বাস নিয়ে। কমপক্ষে ১০-১২বার বিপদজনক ওভারটেকিং করছিল। ৩-৪ বার বাসের সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। ওনাকে বলার পরেও কোনো পরিবর্তন নাই। শেষমেশ হাইওয়ে রেখে, ভিতরের ছোট রাস্তা ব্যবহার করেই বিপদ ডেকে আনলো। ভোর ৪:৩০ মিনিটে কুমিল্লার চান্দিনায় গর্তে বাসের চাক্কা আটকে গেলো। সবাইকে বাসে রেখেই বাস টানাটানি করলো। বাস মনে হচ্ছিলো উল্টেই যাবে। কয়েকজন ভয়ে নিচে নামতে চাইলে দেখা গেলো বাসের গেইট বন্ধ আর সুপারভাইজার, হেল্পয়ার, বাস ড্রাইভারসহ সবাই বাসের বাইরে। ভিতরে একটা পোড়া গন্ধ ও নাকে লাগতে থাকে।
কল করলাম সুপারভাইজারকে। ওনাকে বলে সবাই বাস থেকে নেমে দাঁড়ালাম। সুপারভাইজার অনেক রেস্পন্সিবল এবং ভালো সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করছিলো। সত্যিকথা বলতে গেলে, উনি ওনার কাজটা ঠিকমতো করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু, যেকোনো জবে ফ্রন্টম্যান হওয়ার যে একটা দোষ আছে, সেটাই হচ্ছিলো। গালিগালাজ, বাজে কথা আর কেউ না শুনলেও ওনাকে শুনতে হচ্ছিলো।
যাই হোক, তারপর প্রায় ২ ঘন্টা পর্যন্ত ড্রাইভার তার হেল্পারসহ কারিশমা দেখানোর ট্রাই করলো। চাক্কার নিচে কাঠ ঢুকানোর চেষ্টা চললো। এদিকে আকাশের অবস্থা অনেক খারাপ, ঝড়-বৃষ্টি হলে কোথাও বসার উপায় নাই বাস ছাড়া। সামনেই ছিলো পুলিশ ফাড়ি, এমনকি একটা রেকারও ছিলো গলির মুখেই। ড্রাইভারকে বলার পরেও উনি রেকার ডাকলেন না। নিজের বুদ্ধিতে যা করার করছিলেন। শেষমেশ ৬:২০ মিনিটে বাসের ১৫-২০ জন পুরুষ মিলে ধাক্কা দিয়ে বাসটাকে তুলে দিলো।
এতক্ষণে বিরক্তির চরম পর্যায়ে গিয়েও শান্ত ছিলাম। এতো কিছুর পরও ড্রাইভার আরো তীব্রভাবে ওভারটেক করা শুরু করলো। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো হাইওয়েতে,এমনকি ফ্লাইওভারে উঠেও ওনার ওভারটেকিং গেইম চলতেই থাকলো। মনে মনে আল্লাহকে বলছিলাম আজ বাড়িতে যাতে সুস্থভাবে ফিরতে পারি।
যদিও পান্থপথ নামিয়ে দেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু দেরি হওয়াতে তাদের রুট চেঞ্জ, তাই সায়েদাবাদ নেমে যেতে হবে। নামার কথা বলে বাস একপাশে থামায় এবং তখন যাত্রিরা উঠতে থাকে। এর মধ্যে আবার বাস ছেড়ে দিয়ে এলোমেলো ভাবে চালিয়ে যায় এবং হার্ডব্রেক করতে থাকে। যারা উঠে Walking-row তে দাঁড়ায়, ওনার হার্ডব্রেকে একজন আরেকজনের উপরে পরে যেতে থাকে। আমার সামনেই আমার মা কয়েক পা সামনে এগিয়ে যেতে নেয়। কপাল ভালো তাই ব্যাথা পায় নাই। শেষে আমিও প্রচন্ড রেগে সুপারভাইজার এর সাথে উত্তেজিত হই। যদিও এগুলোর কোনো মানে নাই। কোনো কিছু যায় আসে না। সুপারভাইজার নিজেও একবার বাজেভাবে পরে যেতে নেন। তার ও কি করার আছে! একটা ভাংগাচুড়া বাস, আর বাজে ড্রাইভারকে ঠিক করা তো ওনার হাতে নেই।
সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য যে অনেক বেশি, এই কথাটা আমরা কবে শিখবো! আর যেই পরিমান টাকা নিয়ে বাসগুলো টিকেট সেল করে, সেই পরিমাণ সার্ভিস আপগ্রেশন কেনো হয় না? তার থেকেও বড় কথা, এই ড্রাইভারগুলোকে কেনো লাইসেন্স দেয়া হয়⁉️