ROFIK CreatioN

ROFIK CreatioN Page
(14)

17/04/2025
11/05/2024

মুক্ত মঞ্চে >>>

14/04/2024

রাজা টংকনাথ জমিদার বাড়ি হতে সরাসরি >>>

সংগৃহীত তথ্য :
জায়গাটির নাম ছিল কাভতিহার, এখন উচ্চারিত হয় কাতিহার। 'ভ' হারিয়ে গেছে মধ্য থেকে। কালের পরিক্রমা বুঝি একেই বলে! তবে কাল বা সময় (Time) এবং সময়ের মানুষ এতো নিষ্ঠুর যে ইতিহাসের অনেক ছোটো খাটো নায়ককে সে হারিয়ে ফেলে, তাকে হারাতে হয়। তরী এতো ছোটো যে সবার এতে জায়গা হয় না। রবিঠাকুরের ভাষায়, 'ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী.....'। এই যেমন আমাদের বাড়ির পাশে অবস্থিত কাতিহারের নি:সন্তান গোয়ালা জমিদারের নামটি আমরা ভুলে গেছি পুরোপুরি। ইতিহাসের কোন বই-এ তাঁর নামটির জায়গা হয় নি। কিন্তু জমিদারি ছেড়ে এই সন্তানহীন জমিদার যখন সপরিবার পাড়ি দিলেন কাশীর পথে এবং যাওয়ার আগে তাম্রপাতায় লিখলেন জীবনের শেষ ইচ্ছাটুকু (উইল), সেটি আমরা ভুলে গেলাম না কেন? তামার পাতায় খোদাই করে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত (পরিচর্যাকারী) বুদ্ধিনাথের জন্য কী লিখেছিলেন এই চন্দ্রাহত আমাদের নাম না জানা জমিদার?

পুত্রহীন জমিদার মন্দিরের সামান্য সেবায়েত বুদ্ধিনাথের জন্য লিখলেন,

'If I do not come back within 2 years, Buddhinath will be the successor to my properties.'

[ দুই বছরের মধ্যে আমি ফিরে না আসলে আমার সকল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন বুদ্ধিনাথ। ]

শুধু ২ বছর নয়, আরো ৫ বছর প্রতীক্ষায় ছিলেন মন্দিরের সেবায়েত বুদ্ধিনাথ। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো প্রজা, এই বুঝি তাঁদের প্রিয় মনিব ফিরে এলেন কাশী থেকে। কিন্তু চাঁদে যাকে পায়, বৈরাগ্য যার অন্তরে, কোন জমিদারি বা অর্থ-বিত্ত কি তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে? ঘর তাকে ডাকে বটে, তবে বাহির বলে দূরে থাকা মানুষ তাই ঘরে ফিরতে পারে না।

এটাই নিয়তি। এটাই নির্মমতা।

কিন্তু নিয়তির নির্মমতা এতোই ভয়াবহ যে, আমরা তাই এ মহান ইচ্ছাপত্রের বা উইলের দাতার নামটি ভুলে যাই, মনে রাখি শুধু গ্রহীতাকে। ইতিহাস রচিত হয়, কাতিহারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত শ্রী বুদ্ধিনাথ রায় এখন জমিদার, তিনিই এএলাকার সকল প্রজার ভাগ্য নিয়ন্তা এবং প্রভু। কাতিহার ছেড়ে জমিদারবাড়ি আরো ৭ কিমি পশ্চিমে কুলিক নদীর পাড়ে স্থানান্তরিত হয়, নির্মিত হয় নতুন ভবন। এ জায়গাটির নাম মালদুয়ার।

ইতিহাসের লিখিত অধ্যায়ে দেখি, জমিদার বুদ্ধিনাথ বৃদ্ধ হয়ে মৃতবরণ করলে মালদুয়ার পরগণার এই জমিদারি ন্যস্ত হয় যোগ্যতম সন্তান শ্রী টংকনাথ রায়ের উপর, যার স্ত্রীর নাম জয়ারাম শংকরী দেবী। টংকনাথ স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত ও তরতাজা মহৎপ্রাণ যুবক, ভূ-ভারতের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সদ্য বি.এ পাশ করে ফিরেছেন। জমিদারি পেয়েই রাস্তাঘাট নির্মাণ, প্রজাদের কষ্ট দূর করার জন্য জলের ব্যবস্থা করার জন্য বড়ো বড়ো পুকুর খনন, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ~ কী করেন নাই যুবক জমিদার টংকনাথ ও অসম্ভব সুন্দরী রাজমাতা জয়ারাম শঙ্করী দেবী? টংকনাথ সিধান্ত নিলেন, উন্নত শিক্ষা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে। যেই সিধান্ত সেই কাজ। মালদুয়ারের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় কুলিক নদীর পাড়ে পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত হল এলাকার প্রথম ইংরেজি মিডিয়াম ইশকুল বি.এন ইনস্টিটিউট বা বুদ্ধিনাথ ইন্সটিটিউট। ইতিহাসের মোড় ঘুরে সেই স্কুল এখন রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে সেই জমিদারি যেমন নাই, নাই সেই ইংরেজিও।

টংকনাথ কি নিছক শিক্ষিত ও ভাল জমিদার ছিলেন?

আসলে তিনি ছিলেন মূলত সমাজ সংস্কারক। তিনি পুরো জমিদারিকে এস্টেট ঘোষণা করেন। এর অর্থ একটাই, এই মালদুয়ার এস্টেটের সমুদয় সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রজার কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ যেন টংকনাথের মধ্যে কাতিহারের সেই নি:সন্তান জমিদারের পুনর্জন্ম দেখি আমরা। মালদুয়ারের সহজ সরল সুখী প্রজাগণ বলতে থাকেন, তামার পাতায় লিখিত ইচ্ছাপত্রে কোন আত্মীয় স্বজনের নামের পরিবর্তে মন্দিরের সেবায়েতের নামটি খোদাই করে জমিদার সঠিক সিধান্ত নিয়েছিলেন।

মালদুয়ারের জমিদার টংকনাথের প্রজাহৈতিষীর কথা দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজা নাথের কাছে পৌঁছায়, পৌঁছায় বড়লাটের কাছে। মহারাজা গিরিজা নাথ বড় আয়োজন করে সম্বর্ধনা দেন টংকনাথকে এবং মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়ে বলেন,

'আপনি জমিদার নন, আপনি রাজা, মানুষের মনের রাজা। আসলে আপনি হলেন রাজাধিরাজ!'

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ নভেম্বর ভারতের ভাইসরয় লর্ড রিডিং টংকনাথকে চৌধুরী খেতাব দেন। মালদুয়ারের মানুষের কাছে তিনি রাজা টংকনাথ চৌধুরী।

মালদুয়ারের ঘরে ঘরে আজ উৎসব। বিশাল সম্বর্ধনা সভা বসেছে বি.এন হাইস্কুল মাঠে। মালদুয়ারের সমস্ত মানুষ ভেঙ্গে পড়েছে সেখানে। সবাই আজ তারা তাদের প্রাণের রাজাকে দেখতে চায় একটিবার। ছোট্ট সন্তান বাবার ঘাড়ে করে চরে চলে এসেছে দূর দূরান্ত থেকে, নাতি এসেছে দাদুর হাতটি শক্ত করে ধরে। ঘরের ঘোমটা টানা বউটাও নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি, চলে এসেছে গরুর গাড়িতে করে বাচ্চাকাচ্চাসহ। মেঠো পথে হেঁটে ধূলো উড়িয়ে চলে এসেছে সমস্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-আবাল বনিতা। এসেছে গানের দল, সার্কাস পার্টি ও ব্যান্ডদল। সম্বর্ধনা সভা ঘিরে যেন বিশাল মেলা বসেছে আজ। মন্ডা-মিঠাই এর দোকান, হাড়ি-পাতিলের দোকান, বাচ্চাদের ভেঁপু ও খেলনা~ কী নাই তাতে? কুলিক নদীর পাড়ে এ যেন জনসমুদ্র, শব্দে কান পাতা দায়। মানুষ রাজা টংকনাথ চৌধুরীর নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে একটু পর পর, গান গাইছে গানের দল, নাম না জানা চারণ কবি চিৎকার করে আবৃত্তি করছে রাজাকে নিয়ে সদ্যরচিত কবিতা। মঞ্চে রাজার পাশে বসেছে রাণীমাতা, পুরো মঞ্চ ঝলমল করছে দু'জনের আলোকচ্ছটায়। সম্বর্ধনা শেষে রাজা টংকনাথ চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হয় সম্বর্ধনা সভায়, 'মানুষের প্রতি~ মানে আপনার প্রজাদের প্রতি আপনার এই যে দরদ বা প্রজাকল্যাণে আপনার সম্পত্তির এস্টেট ঘোষণা বা সম্পত্তি বিলিয়ে দেওয়া~ এসব কাজ কেন করেন এবং কার উৎসাহে করেন?'

রাজা টংকনাথ চৌধুরী পাশের আসনে বসা রমণীর দিকে একবার তাকিয়ে স্মিতহেসে বললেন,

'এই জমিদারি আমার তো নয়, আমার বাবারও কেনা নয়। এটি আমরা দানসূত্রে পেয়েছি মহান একজন মানুষের নিকট থেকে, তাই এর যথাযথ ব্যবহার আমাদের কর্তব্য। তবে এ কাজে আমাকে একজন উৎসাহ জুগিয়েছে নয়, আসলে তিনিই সবকিছু সবকাজ করেছেন। সেই একজন তিনি আর কেউ নন

Address

Thakurgaon

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when ROFIK CreatioN posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to ROFIK CreatioN:

Share