12/10/2025
রাষ্ট্র কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানা নয়; এটি ইতিহাসের নির্যাস, ত্যাগের প্রতিধ্বনি, এবং জাতির আত্মমর্যাদার দৃঢ় প্রতীক। যে মাটিতে অগণিত শহীদের রক্তে স্বাধীনতার বৃক্ষ রোপিত হয়েছে, সে মাটি কখনো নিঃস্ব হতে পারে না—যদি তার সন্তানরা সতর্ক থাকে, ঐতিহ্য স্মরণে রাখে, আর ন্যায় ও প্রজ্ঞায় পথচলা শিখে নেয়।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এমন এক রাষ্ট্র, যে তার জন্মলগ্ন থেকেই সংগ্রামের সন্তান। এই ভূমি বারবার দেখেছে কূটকৌশল, ষড়যন্ত্র, বৈদেশিক চাপ, এবং অভ্যন্তরীণ প্রলোভনের ভেতর দিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াই। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যে জাতির মানুষ বিশ্বাসে অবিচল, সে জাতিকে পরাভূত করা যায় না।
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী এক অনন্য প্রতীক। তারা রাষ্ট্রের “অতন্দ্র প্রহরী”—জেগে থাকে, যেন আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। তাদের ত্যাগ, শৃঙ্খলা, এবং আত্মসমর্পণ আমাদের জাতিসত্তাকে বলীয়ান করে তোলে। তাই এই বাহিনীকে নিয়ে কূটকৌশল বা বিদ্বেষ ছড়ানো মানে রাষ্ট্রের মেরুদণ্ডে আঘাত করা। ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়গুলো প্রমাণ করে—যে দেশ নিজের সেনাবাহিনীকে অবিশ্বাস করেছে, সে দেশ পরাশক্তির পদতলে নত হয়েছে।
তবে অন্যদিকে, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সমাজ কখনো অপরাধীকে রক্ষা করে না। অপরাধী সে সেনা, রাজনীতিক, বা সাধারণ নাগরিক—সবার জন্যই ন্যায়বিচার অপরিহার্য। কিন্তু ন্যায়ের নামে প্রতিহিংসা, কিংবা বিচারপ্রক্রিয়ার আড়ালে সুযোগসন্ধানীদের প্রবেশ—এটাই রাষ্ট্রের সর্বনাশের সূচনা। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, রোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগ, এমনকি আধুনিক পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকেও ভিতরে ভিতরে ধ্বংস করেছে তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও আত্মঅবমূল্যায়ন।
এই বাস্তবতায়, আজ আমাদের প্রয়োজন “জ্বলে ওঠা নয়, হুশে থাকা”—অর্থাৎ আবেগে নয়, বুদ্ধিতে কাজ করা। জাতিকে এখন যে শত্রুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা সবসময় সীমান্ত পেরিয়ে আসে না; অনেক সময় সে আসে কূটনৈতিক টেবিলের হাসিতে, মিডিয়ার ছদ্মবেশে, কিংবা রাজনীতির মঞ্চে দেশপ্রেমের মুখোশ পরে। তাই রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত সেনাবাহিনী, বিচারবিভাগ ও প্রশাসনকে হতে হবে ন্যায়, সততা ও দূরদর্শিতার অদ্বিতীয় প্রতীক।
আমরা ভুলে যেতে পারি না—এই রাষ্ট্র আমাদের, এর প্রতিটি ইট, প্রতিটি নদী, প্রতিটি পতাকা আমাদেরই উত্তরাধিকার। বাহ্যিক শক্তি আমাদের দেহে আঘাত করতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা যদি হৃদয়ে বাসা বাঁধে, তখন রাষ্ট্ররূপী দেহটি পঙ্গু হয়ে যায়। তাই আমাদের কর্তব্য, আমাদের সামর্থ্য, আমাদের প্রহরীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে—এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করা, সাজানো, এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করে যাওয়া।
ইতিহাস সাক্ষী, যে জাতি নিজের প্রহরীকে দুর্বল করে, সে জাতি একদিন শত্রুর পদতলে ধূলিসাৎ হয়। আর যে জাতি ন্যায়, প্রজ্ঞা ও ঐক্যের পতাকা উঁচু রাখে—আল্লাহর সাহায্যে তার পতাকা কখনো নামতে দেয় না।
শেষ পঙক্তি:
> “রাষ্ট্র আমাদের আশ্রয়, আর সেনাবাহিনী তার প্রহরী।
ন্যায়ের পথে সতর্ক পদক্ষেপই আমাদের অস্তিত্বের প্রতিরোধক ঢাল।”