31/07/2025
ধূলিমাখা গলির এক কোণে, পুরনো ভাঙা দেয়ালের পাশে শুয়ে ছিল একটি কুকুর — তার শরীর কঙ্কালের মতো, হাড়ের ওপর চামড়া যেন স্রেফ একটা পাতলা কাপড়।
চোখে কোনো জল নেই, মুখে কোনো ভাষা নেই — কেবল নিঃশব্দ আর্তনাদ।
তার চারপাশে ছোট ছোট তিনটি বাচ্চা কুকুর, যাদের পেট ভরার কথা ছিল দুধে — কিন্তু এখন তারা দুধ নয়, খুঁজছে মা’কে কামড়ে একটা হাড় খুঁজে পাবে কিনা!
তাদের শরীরেও হাড় বেরিয়ে আছে। তবুও, তারা মা’কে ঘিরে আছে — নিরাপত্তার জন্য নয়, কারণ ক্ষুধার তাড়না আজ ভয় থেকেও বড়।
তিনদিন ধরে কিছু খায়নি ওরা।
কোনো মানুষ এক টুকরো ভাত ছুঁড়ে দেয়নি, কেউ একবার আদর দিয়ে বলেনি, “আরে বাচ্চা তো…”
এই শহরের প্রতিটি মানুষ ব্যস্ত — ফিল্টার করা কফি, কুকুর প্রুফ ব্যাগ, কুকুরপ্রেমী প্রোফাইল পিক, কিন্তু এক কুকুর মা মরে যাচ্ছে ধূলার নিচে। ধীরে ধীরে… নিঃশব্দে…
এক সন্ধ্যায় হঠাৎ এক বাচ্চা থেমে গেল। শ্বাস থেমে গেল। মা নড়ল না।
সে কেবল তাকিয়ে রইল মৃত সন্তানটির দিকে। হয়তো ভেবেছিল — একদিন সবাই তাকে ছেড়ে যাবে।
পরদিন সকালে, শহরের এক "ভদ্রলোক" হোঁচট খেল সেই মৃত বাচ্চার শরীরে। ঘৃণাভরে বলল:
— “ঘিন লাগে কুকুরের ছানায়, মেরে ফেলো!”
তখন সেই কুকুর মা দাঁড়িয়ে গেল, দাঁড়িয়ে, একবার কাঁপা কাঁপা গলায় ডাক দিল, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না —
তবু সে দাঁড়াল।
কেন?
কারণ সে মা।
নিজের শেষ শক্তি দিয়ে সে তার সন্তানকে রক্ষা করতে চেয়েছিল — হোক সে মৃত।
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
এক লাথি এসে লাগল তার পাঁজরে — ভাঙা হাড় শব্দ করে উঠল।
আর এক লাথি তার মাথায়।
সে পড়ে গেল, নিস্তব্ধ হয়ে। তবু চোখ খোলা, যেন ছানাগুলোর দিকে চেয়ে আছে — শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।
সেদিন সন্ধ্যায় আর এক বাচ্চাও মরে গেল।
তৃতীয়টি সেই রাতে এক বৃদ্ধার পেছনে হাঁটছিল —
হয়তো খাবার চেয়েছিল,
হয়তো শুধু একটু আদর।
---
📌 শেষে শুধু একটা প্রশ্ন রেখে যাই:
আমরা কি সত্যিই মানুষ?
আমরা কি এতটাই ব্যস্ত যে, একটা মা কুকুর মরেও আমাদের মন গলাতে পারে না?