24/06/2025
অভিনন্দন মাহাদি কে!
এইচএসসি পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব পেয়েছেন মাহাদি ইব্রাহিম। ঢাকার সাভার সেনানিবাসের সেনা পাবলিক স্কুল ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটিতে।
মাহাদির এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘ প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস, এবং একাগ্রতা। স্কুলজীবনের একটি বড় অংশ তিনি কাটিয়েছেন মালয়েশিয়ায়, কেলানতান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে, যেখানে তার মা–বাবা গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাল্টিকালচারাল পরিবেশে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করতে, আর বিশ্বমানের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করেছে। দেশে ফিরে বাংলা কারিকুলামে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে, তবে কোভিড-১৯–এর সময় ঘরে বসে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সেই চ্যালেঞ্জ জয় করেন তিনি। এরপর এসএসসি পরীক্ষায় অর্জন করেন এ-প্লাস।
এসএসসি শেষ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করেন মাহাদি। তিনি SAT পরীক্ষায় অংশ নেন এবং প্রোফাইল তৈরিতে মনোযোগ দেন। বিতর্কে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জন, রোবোটিকস ক্যাম্প, বিজনেস ফেস্টে রানারআপ হওয়া, মালয়েশিয়ায় মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় সিলভার মেডেল পাওয়া—এমন বহু অর্জন তার প্রোফাইলকে করেছে সমৃদ্ধ। নিজের উদ্যোগে সাভারে আয়োজিত আন্তপ্রতিষ্ঠান উৎসব ‘এনটিএইচও’-এর মাধ্যমে দেখিয়েছেন নেতৃত্বের দক্ষতা। পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন সঞ্জীবন, হার্বালজ, আন্তর্জাতিক লিও ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে।
তিনি বিশ্বাস করেন, তার সাফল্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে সঠিক গাইডলাইন, একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রোফাইল এবং ঝুঁকি নেওয়ার সাহস। এজেন্সির ওপর নির্ভর না করে নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন, আবেদন প্রস্তুতি ও বৃত্তি সংক্রান্ত গবেষণা করেছেন। একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের ভারসাম্য রেখেছেন শুরু থেকেই। নিজেই স্থির করেছিলেন, কোথায় আবেদন করবেন, কী ধরনের সহায়তা লাগবে।
ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রেও মাহাদি নিজের কৌশলে এগিয়েছেন। কখনো কোচিং না করে বই, সিনেমা ও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করেন। ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ ডুয়োলিংগো ইংলিশ টেস্ট দিয়েছেন।
মাহাদি মনে করেন, ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বরং সচেতন, দক্ষ ও দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠাই প্রকৃত জয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তার পরামর্শ—শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, দরকার ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতনতা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার স্পষ্টতা। ইংরেজিতে দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। নিজের স্বপ্ন নিজেকেই গড়ে নিতে হবে।
তার ভাষায়, যে স্বপ্ন কেবল নিজেকে নিয়ে, তা খুব ছোট; বরং দেশের জন্য কাজে লাগার স্বপ্নই হওয়া উচিত একজন তরুণের আসল ‘বাংলাদেশি ড্রিম’।