11/05/2025
আমি কোনো দলের অন্ধ সমর্থক নই। আপনি রাজনীতিক হোন বিএনপির, আওয়ামী লীগের, জামায়াতের বা অন্য যে কোনো দলের—আপনি ভালো করলে আমি আপনার পক্ষে থাকব, খারাপ করলে কখনোই না। আপনি কে, তা নয়—আপনি কী করছেন, সেটাই মুখ্য। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য করাই নাগরিক দায়িত্ব।
আপনি একজন রাজনীতিক হয়ে যদি শুধু নিজের সুবিধা নেন, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে—আপনার নিজের সন্তানদের—চুবিয়ে দেন মোহনীয় কথার বালুকাবেলায়, তাহলে আপনি একজন আত্মঘাতী মানুষ। আপনি যদি জাহাজের উপরতলায় দাঁড়িয়ে থাকেন আর নিচের শ্রমিকদের পানির অভাবে কষ্ট করতে দেন, তাহলে একসময় সেই শ্রমিকরা জাহাজে ফুটো করবে। তখন সমুদ্রের পানি ঢুকবে, এবং আপনি জাহাজের ওপর থেকেও বাঁচবেন না। সবারই ডুববে। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন।
আপনারা বড় বড় দল করেন, ক্ষমতায় যান, স্লোগান দেন—কিন্তু ভুলে যান যে রাজনীতি মানে জনগণের সেবা, ক্ষমতা নয়। যারা মানুষের কথা বলে না, গরিবের দুঃখ বোঝে না, বরং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত হয়ে চুপ থাকে, তারা রাজনীতির নামে ধোঁকাবাজি করে। বিএনপির অনেক নেতাই এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকে হতাশ করেছেন।
আপনারা কি বুঝতে পারছেন না—এই ভুল সিদ্ধান্তগুলোই আপনাদের দলকে দুর্বল করে দিচ্ছে? বিএনপির নেতারা যদি সত্যিই দেশের জন্য ভাবতেন, তাহলে আজ যারা নিখোঁজ—ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, তাঁদের বিষয়ে প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুলতেন। খালেদা জিয়া—তিনবারের প্রধানমন্ত্রী—জেলখানায় পড়ে আছেন। আপনারা শুধু বিবৃতি দেন, কাজ করেন না। দল যখন মেধাশূন্য হয়ে পড়ে, তখনই "আপা" আপনাদের দৌড়ের ওপর রাখেন। বিগত দেড় যুগ কোন পরিবর্তন করতে পারলেন না বা করলেন না, এখন পদে পদে বাঁধাগ্রস্থ কেনো করার প্রচেষ্টা?
আজ যারা আন্দোলন করছে-তারা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, বাঁচার জন্য আন্দোলন করছে। অথচ তাদের আপনি গ্রহণ করলেন না, দূরে ঠেললেন। এটা ছিল আপনাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল। সময় থাকতে শুধরে নিন। সবাই জানে—জনগণ আপনাদের ভালোবাসে, কিন্তু আপনারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
রাজনীতি হবে নৈতিকতা দিয়ে, হিংসা দিয়ে নয়। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা দেখান। ভালো মতামতকে স্বাগত জানান, খারাপ চিন্তাকে ত্যাগ করুন। দেশ সবার, দল কারো নয়। ন্যায়ের পথে থাকুন, দেশ ও সমাজকে সামনে এগিয়ে নিন।
বাংলাদেশের মানুষের চোখ-কান কিন্তু এখন খোলা। গ্রামের কোনায় বসেও কিন্তু সারা দুনিয়ার খবর সবাই ভালোই রাখে এখন। বাংলাদেশের মানুষকে এখন আর সহজে বোকা বানানো যায় না। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে মানুষও ধরে সাইজ করতে শিখে গেছে।
বাংলাদেশকে নিরাপদ, মানবিক ও বাসযোগ্য করতে চাইলে—
নিজেকে সচেতন ও তথ্যভিত্তিক রাখুন—অন্ধভাবে দল বা নেতার পক্ষে নয়, ন্যায়ের পক্ষে থাকুন।
দুর্নীতি, অনিয়ম, মিথ্যাচার দেখলে চুপ না থেকে সামাজিকভাবে প্রতিবাদ করুন। ভোট দিন বিবেক ব্যবহার করে; পারিবারিক বা ধর্মীয় আবেগ নয়, নেতৃত্বের যোগ্যতা দেখে। অসহিষ্ণুতা বা সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মত প্রকাশ করুন। বিভক্ত না হয়ে প্রতিবেশী, সহকর্মী, সমাজের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হন—কারণ দেশটা সবার।
রাজনৈতিক দল ও নেতারা দয়া করে ব্যক্তিস্বার্থে বা ক্ষমতার লোভে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন, জনগণকে বিভক্ত করা, মিথ্যা প্রচারণা চালানো, ইতিহাস বিকৃতি করা থেকে বিরত থাকুন, গুম-খুনের মতো অপরাধে নীরব থাকা বা মদদ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, ভিন্নমতকে দমন করা ও সমালোচনাকে শত্রু ভাবা করা থেকে বিরত থাকুন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা রাখুন। তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার তালে থাকুন।
শুদ্ধাচার ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করুন। বিরোধীদলকে শ্রদ্ধা করা এবং মতভেদে সহনশীলতা দেখান। দুর্নীতিবাজদের দলে জায়গা না দিয়ে —দলীয় পরিচয়ের চেয়ে দেশ বড় মনে রাখুন।
বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় এসে দাড়িয়েছিলো, যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি যদি জুলাইয়ের পর থাকতো, তবে দেখা যেতো অশান্তি কাহাকে বলে। দেশটা ছিন্নভিন্ন হতে বেশি সময় লাগতো না। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিশ্বব্যাপী সন্মান আছে।
তিনি অর্থনীতির ওস্তাদ। তাঁর চিন্তাধারা ও কর্মধারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিসরে গর্বের স্থান এনে দিয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ যদি এতদিন শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে পারে, তার পেছনে অধ্যাপক ইউনুসের মতো একজন নৈতিক নেতৃত্বের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, উন্নয়ন মানে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়—বরং প্রতিটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনই আসল উন্নয়ন।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য অধ্যাপক ইউনুস একটি অনুপ্রেরণার নাম। তাঁর মতো দূরদর্শী, মানবিক এবং বিশ্বমানের নেতৃত্ব আমাদের জাতীয় অগ্রযাত্রার অন্যতম প্রধান শক্তি। আজ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সন্মানেই পৃথিবীর সকল হেড অফ স্টেটদের সাথে এক টেবিলে বসে হেড টু হেড কথা বলার স্পেস তৈরি হয়েছে। তারা সকলেই যখন উনাকে এ্যাড্রেস করে তখন প্ধ্যারোফেসর ইউনুস বা ড. ইউনুস বলেই সম্বোধন করতে হয়। রেসপেক্ট সাবকনশাসলি চলে আসে তাদের মাথায় - মানে বাংলাদেশকে যে রেসপেক্ট করতে হবে সেটা শুরুতেই এস্টট্যাব্লিশ হয়ে যায়। আর কি চান?
শেষ কথা - দেশ আমাদের সবার। রাজনীতি যদি সমাজ ও মানবতার জন্য না হয়, তবে তা ক্ষমতার ব্যবসা ছাড়া কিছুই নয়। দল নয়, দেশ আগে—এই চেতনায় আমরা যদি একতাবদ্ধ হই, তবে বাংলাদেশ হবে নিরাপদ, সম্মানিত ও সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র।