30/06/2025
চার মিনিট! যা পাবে, নিয়ে নাও!
এই ঘোষণা আজ আর কোনো সিনেমার কোনো দৃশ্য নয়, বরং গাজা উপত্যকার বাস্তবতা। একটি টিনের বাক্সে রাখা সামান্য খাবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বিশৃঙ্কলা, আতঙ্ক আর মৃত্যু।
তাকওয়া আহমেদ আল-ওয়াওয়ির এই প্রতিবেদন- যেটি মূলত এক কবির অন্তর্দৃষ্টি অভিজ্ঞতা, আজকের গাজা পরিস্থিতির করুণ প্রতিচ্ছবি।
ত্রাণ নয়, যেন যুদ্ধের ময়দান- মার্চ ২০২৫ থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। এরপর থেকে শুরু হয় নিঃস্ব মানুষের ক্ষুধার বিরুদ্ধে বাঁচার যুদ্ধ। গাজার পূর্বাঞ্চলে সালাহউদ্দিন সড়কের পাশে যে সহায়তা কেন্দ্রগুলো গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো আর মানবিক সহায়তা প্রদানের স্থান নয়। সেগুলো এখন হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ।
ত্রাণের আশায় শিশু, নারী, বৃদ্ধেরা যে ভিড় জমায়, তা মুহূর্তেই রূপ নেয় হিংস্র বিশৃঙ্কলায়।তার পরপরই শুরু হয় গুলিবর্ষণ। যেন ‘হাঙ্গার গেমস’-এর একটি বাস্তব সংস্করণ। যেখানে দুর্বলদের একে অপরের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়, আর বিজয়ী হয় না কেউই।
গণহত্যার নতুন রূপ, ক্ষুধা ও বিশৃঙ্কলার মাধ্যমে নিধন- এক মাসের ভেতর সহায়তা কেন্দ্র ঘিরে প্রাণ গেছে অন্তত ৫শ ফিলিস্তিনির, আহত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার। এই শুধু সংখ্যা নয়, বরং একেকটি পরিবার ধ্বংসের গল্প।
নূরের বাবা সুবহি, খামিসের মতো বহু মানুষ শুধু একটা খাবারের প্যাকেট ঘরে নিতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
তাকওয়া লেখেন, এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো অপমান, বিভ্রান্তি ও মৃত্যুর প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বিশৃঙ্খলা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? তাকওয়ার ভাষায়, এই বিশৃঙ্কলা ইচ্ছাকৃত। সহায়তা কার্যক্রমকে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্কল করে তুলে মানুষের পারস্পরিক আস্থা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক বন্ধন, প্রতিবেশী সম্পর্ক, এমনকি পরিবারগুলোতেও এখন অবিশ্বাস ঢুকে পড়েছে, কে খাবার পাবে, কে মার খাবে, কে মরবে, আর এই আতঙ্কই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে শুরুতে হত্যার বিষয় অস্বীকার করা হলেও, পরে তাদের নিজস্ব মিডিয়াই স্বীকার করেছে, সেনাদের গুলি চালাতে বলা হয়েছিল।
পুরোনো ব্যবস্থার অপসারণ: উদ্দেশ্য কী? জাতিসংঘের পরিচালিত কার্ড-ভিত্তিক ত্রাণব্যবস্থা ছিল অনেক বেশি মানবিক ও গোছানো। বিধবা, এতিম, প্রতিবন্ধী এবং বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেন সহানুভূতির কোনো ছায়াও না থাকে গাজার আকাশে।
বিশ্ব কি শুধু চেয়ে দেখবে? তাকওয়ার জ্বলন্ত প্রশ্ন, এত কিছু ঘটার পরও কি বিশ্ব নিরব থাকবে? এই প্রশ্ন আজ শুধু তাকওয়ার নয়, এটি এখন মানবতার জন্য এক নৈতিক প্রশ্ন।
বিশ্ব কি শুধুই নীরব দর্শক থাকবে, নাকি এই ‘হাঙ্গার গেমস’ বাস্তবতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে?
গাজা এখন আর শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক বিশাল মানবিক পরীক্ষার ক্ষেত্র।
এখানে মানবতা, বিবেক, সহানুভূতি, সব কিছুই একেকটি গুলির সঙ্গে মরে যাচ্ছে।
গাজার আকাশে ড্রোন উড়ে,
নিচে শিশুরা কাঁদে,
ত্রাণের আশায় মানুষ মরে,
শান্তি বিশ্বে পালিয়ে বেড়ায়।
গাজা! এখন সত্যিই এক মৃত্যুফাঁদ।
এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক যদি এখনো না জাগে, তাহলে ইতিহাস এ মানবতাহীনতার দায় বিশ্বকেই নিতে হবে।
[তথ্যসূত্র: তাকওয়া আহমেদ, আল-জাজিরা]