05/10/2025
শতাধিক মৎস্যজীবীর মুখে স্বস্তি,উল্লাপাড়ায় নদী ইজারা বাতিল করল প্রশাসন
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির দেওয়া নদী ইজারা বাতিল করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে করে নদীতে মাছ ধরার সুযোগ ফিরে পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে শতাধিক মৎস্যজীবীর মুখে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) উপজেলার উধুনিয়া বাজার এলাকায় স্থানীয় জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে গোহালা নদীর আড়াই কিলোমিটার শাখা অংশ দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়। দরপত্রে শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় নদীটির ইজারা নেন উধুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মোল্লা। মসজিদ কমিটি উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলে এলাকায় মাইকিং করে দরপত্রের আয়োজন করেছিল।
তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় মৎস্যজীবীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি জলমহাল বা নদী ইজারা দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষা করে মসজিদ কমিটি নদীর বড় একটি অংশ ব্যক্তির কাছে তুলে দেয়। ফলে অন্তত শতাধিক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জীবিকার সংকটে পড়েন।
উধুনিয়া গ্রামের প্রবীণ মৎস্যজীবী আব্দুল মান্নান ফকির বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এই নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। এবার নদী ইজারা দেওয়ায় আমাদের টাকা না দিলে মাছ ধরতে দেওয়া হচ্ছিল না। এতে খুব বিপাকে পড়েছিলাম।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, নদী ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা মসজিদ কমিটির নেই। বিষয়টি জানার পরই উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
পরে শতাধিক মৎস্যজীবীর জীবিকা অনিশ্চিত, উল্লাপাড়ায় নদী ইজারার অভিযোগ, শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি নজরে আসে উপজেলা প্রশাসনের। শনিবার (৪ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত উধুনিয়া গিয়ে সেখানকার মসজিদ কমিটির দেওয়া গোহালা নদীর ওই আড়াই কিলোমিটার অংশের ইজারা বাতিল করেন। একই সঙ্গে ইজারাদারের কাছ থেকে নেওয়া ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উল্লাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভূইয়া, উল্লাপাড়া উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা রশির আহমেদ, উধুনিয়া মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ঝড়ু,সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হাজি আব্দুল হামিদ।
এরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয় গোহালা নদীতে এখন সবাই মাছ ধরতে পারবে, কাউকে কোনো টাকা দিতে হবে না। নদী সরকারি সম্পত্তি কেউ ইজারা দিতে পারবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, নদী সরকারি সম্পদ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নদী ইজারা দিতে পারে না। মসজিদ কমিটির দেওয়া ইজারা বাতিল করা হয়েছে এবং ইজারাদার কে টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা আগের মতোই নদীতে মাছ ধরতে পারবেন।
নদী ইজারা বাতিল হওয়ায় উধুনিয়া গ্রামের মৎস্যজীবীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে তাদের জীবিকার পথ আবার উন্মুক্ত হয়েছে।