07/07/2025
সম্প্রতি যেই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে সবখানে আলোচনা চলছে— যিনি নিজের স্বামীকে কিডনি দান করার পর সেই স্বামী পরকিয়ায় জড়িয়ে তাকেই প্রতিদান দিয়েছেন। শিরোনামটা যতটা রসালো মনে হচ্ছে, ভেতরের গল্পটা ঠিক ততটাই নির্মম।
এই নারীর বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার মানে শুরু থেকেই বাল্যবিবাহ আর গ্রুমিং এর শিকার। তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি মা হন, এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় নারীদের "নিয়ন্ত্রণে" রাখতে স্বামী-শশুড়বাড়ি এই কৌশল ব্যবহার করে। আর বিয়ের দুবছরের মাথায় জানতে পারেন যে তার স্বামীর দুটি কিডনিই ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যাচ্ছে। কিডনি তো একদিনে নষ্ট হয়না—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তার স্বামী ও পরিবার আগে থেকেই জানত, কিন্তু গোপন রেখেছিল।
কিন্তু এই নারী সেই মুহূর্ত থেকেই স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন—মানসিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, পারিবারিকভাবে। একা সন্তান লালনপালন করেও এত অল্পবয়সে হোম পার্লার দিয়েছে, বুটিকের ব্যবসা শুরু করেছে আর সব উপার্জন স্বামীর চিকিৎসা আর সংসারেই খরচ করেছে। নিজের গয়নাও বিক্রি করেছেন, বাপের বাড়ি থেকে কয়েকবার সাহায্য নিয়েছেন, এমনকি তার নিজের মায়ের পেনশনের টাকাও স্বামীর বিদেশে গিয়ে চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন!
এভাবে বছরের পর বছর চলার পর যখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া উপায় ছিলো না সারাজীবন ডায়ালাইসিস করা থামাতে, তখন তিনি নির্ধিদ্বায় নিজের একটি কিডনিও দিয়ে দিলেন ম্যাচ করার পর। এই লোকের পরিবারের অনেকের সাথে ম্যাচ করার পরও কেউ এগিয়ে আসেনি বরং তাদের আরও আলাদা করে দিয়েছে। কত বড় পাষাণ হলে ট্রান্সপ্লান্টের পর হাসপাতালে বসেই এই লোক উনার সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে? দিল্লির ডাক্তাররা ও হাসপাতালের স্টাফরা পর্যন্ত চমকে গেছিল লোকের আচরণে ও তাকে ডেকে নিয়ে বুঝায় যে এই নতুন করে জন্ম দেয়া স্ত্রীর সাথে এমন কিভাবে করতে পারলো!
দেশে ফিরার পর থেকে সুস্থ হয়ে চাকরি-বাকরি খোঁজা তো দূরের কথা, এই লোক উল্টা চাপ দিতে থাকে শশুড়বাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্য এবং গায়েও হাত তুলতে ছাড়েনি। এই শারীরিক নির্যাতন আর মানসিক চাপ সহ্য না করতে পেরে প্রথমবার যখন এই নারী পুলিশের কাছে কম্পলেইন করে তখন আবার ১৮০ ডিগ্রি টার্ণ নিয়ে ভালো মানুষ সেজে মুচলেকা দিয়ে এসব ধামাচাপা দিয়ে দেয় আর বাসায় আরও নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। ততদিনে ফাঁস হয়ে যায় যে অনেকদিন ধরেই আরেক মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আর অনলাইন জুয়ায় মেতে উঠেছে। শেষপর্যন্ত নিজের জীবনের ভয়ে ভদ্রমহিলা বাপের বাড়ি চলে আসে লুকিয়ে। এখন লোকটি তার প্রেমিকাকে নিয়ে সেই বাড়িতেই থাকছে আর বউকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বাড়ির সম্পত্তি যেন তার নামে করে দেয়।
এই অমানুষ শুধু পরকিয়া করেনি, সে কমবয়সে মেয়েটিকে বিয়ে করে গ্রুম করেছে, নিজের অসুস্থতা গোপন রেখেছে, মেয়েটির সহজ-সরলতার সুযোগ নিয়েছে, অল্পবয়সে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই প্রেগন্যান্ট করে জালে বেঁধে রাখার পায়তারা চালিয়ে গেছে, বছরের পর বছর ধরে তার ও তার পরিবারের ওপর ভর করে বেঁচেছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে—এবং আজও সেই নারীকে হয়রানি করতে তার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই, বরং এক ধরনের অধিকারবোধ নিয়ে দম্ভ দেখাচ্ছে।
এই নারীর হয়ত অনেক আগেই এই ইতরকে ছেড়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু তখন বেশিরভাগ মানুষ আবার তাকেই লোভী, স্বার্থপর, আরও নানান গালি দিত। এই নারী জীবনের প্রায় ২০টা বছর এই অকৃতজ্ঞর উপর ধ্বংস করেছে এমনকি নিজের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি নিয়েও। আমি শুধু চাই, তিনি এবার নিজের জন্য বাঁচতে শুরু করুন। এই জখম থেকে সুস্থ হয়ে উঠুন। নিজের জীবনের মালিক হন। আর কখনো যেন তার পিছনে ফিরে না তাকানো লাগে এই অমানুষের জন্য।
Post from : Bela Hossain