15/07/2025
মস্তিষ্ক স্ক্যান করে মানুষের স্মৃতি বা চেতনা কম্পিউটারে আপলোড করা সম্ভব হবে?
আপনি হয়তো সিনেমায় বা গল্পে শুনেছেন, যেখানে কোনো মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে তার স্মৃতি কম্পিউটারে রেখে দেওয়া হয়েছে। কেউ হয়তো মৃত্যুর আগে নিজের মস্তিষ্কের সব স্মৃতি ডাউনলোড করে রেখেছে। পরে সেই স্মৃতি দিয়ে তৈরি হয়েছে তার কৃত্রিম ভার্সন! অনেকেই বলে, ভবিষ্যতে মানুষ শরীর ছেড়ে শুধু স্মৃতি বা চেতনা হিসেবেই বেঁচে থাকতে পারবে।
আপনি কি কখনো ভেবেছেন, এই গল্পগুলো কি শুধুই কল্পনা? নাকি এর বিজ্ঞানভিত্তিক বাস্তবতাও রয়েছে? চলুন, আজকে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি।
জনপ্রিয় একটি ধারণা হচ্ছে মেমোরি আপলোডিং দিয়ে অমর হওয়া যাবে! মানুষের মনে একটা আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই ছিল, মৃত্যুর পরও কোনোভাবে টিকে থাকার। বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেকের মনে এই বিশ্বাস তৈরি করেছে যে একদিন আমরা হয়তো মস্তিষ্ক পুরোপুরি স্ক্যান করতে পারব, যেখানে আমাদের স্মৃতি, চিন্তা, অনুভূতি এমনকি পুরো চেতনা কম্পিউটারে তুলে রাখা সম্ভব হবে।
বলা হয়, তখন আর মৃত্যুর ভয় থাকবে না। আপনি একটা ডিজিটাল শরীরে আবার বাঁচতে পারবেন। অনেক সায়েন্স ফিকশন সিনেমা এই ভাবনাকে আরও উসকে দিয়েছে। কিন্তু এবার আসুন, বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বিজ্ঞানের চোখে এটা আসলেই কি সম্ভব?
বর্তমানে বিজ্ঞান যতটুকু এগিয়েছে, সেখানে কিছুটা সত্যি আবার অনেকটা সীমাবদ্ধতা আছে। চলুন একে একে দেখে নেওয়া যাক।
১. মস্তিষ্ক কতটা জটিল?
আপনার মস্তিষ্কে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন আছে। এই নিউরনগুলো আবার ট্রিলিয়নের বেশি সংযোগ তৈরি করে। শুধু নিউরন নয়, নিউরনের সংযোগ(Synapse), রাসায়নিক বার্তা, বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সব মিলে আপনার স্মৃতি তৈরি হয়।
আপনি যদি পুরো মস্তিষ্ক স্ক্যান করতে চান, তাহলে শুধু নিউরনের ছবি নিলেই হবে না! সেই সব সংযোগ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, মুহূর্তের অনুভূতি, চিন্তা সবকিছু রেকর্ড করতে হবে। বর্তমানে এমন প্রযুক্তি এখনও আমাদের হাতে নেই।
২. বর্তমান প্রযুক্তির অবস্থা কী?
আজকের দিনে আমরা মস্তিষ্ক স্ক্যান করার জন্য ব্যবহার করি MRI, fMRI, EEG, PET scan। এগুলোর মাধ্যমে আমরা মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তপ্রবাহ বা বৈদ্যুতিক সিগন্যাল দেখতে পারি। কিন্তু এগুলো দিয়ে আপনি পুরোপুরি কারও স্মৃতি ধরে রাখতে পারবেন না।
আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ভবিষ্যতে হয়তো “Whole Brain Emulation” নামক ধারণা বাস্তব হবে। যেখানে প্রতিটি নিউরন ডিজিটালভাবে নকল করা হবে। তবে এটা এখনও গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করা যায়নি।
৩. সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোথায়?
আপনি মস্তিষ্কের সব তথ্য স্ক্যান করলেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, স্মৃতি আর চেতনা শুধু তথ্যের যোগফল নয়! এগুলো অনুভূতি, চেতনা, সচেতনতার অংশ। আপনি যদি কোনো মানুষের স্মৃতি কম্পিউটারে নেন, তাহলে সেই মানুষ কি বেঁচে থাকবে? নাকি কেবল তার তথ্যের কপি তৈরি হবে?
বিজ্ঞানীরা বলেন, আপনি যদি স্মৃতি আপলোড করেন, আসলে তৈরি হবে আপনার ডিজিটাল অনুলিপি। কিন্তু আপনি নিজে কি সেখানে থাকবেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও আমাদের কাছে নেই!
ভবিষ্যৎ কী বলে?
আপনি যদি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবেন, গবেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে স্মৃতির কিছু অংশ ধারণ, কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি এগুলো সম্ভব হবে। তবে পুরো মস্তিষ্ক স্ক্যান, স্মৃতি আর চেতনার আপলোডিং এখনও অনেক দূরের ব্যাপার।
অনেকে মনে করেন, একদিন মানুষের পুরো চেতনা কম্পিউটারে রাখা সম্ভব হবে, তবে সেটা হয়তো আমাদের জীবদ্দশায় নাও হতে পারে।
আপনি যদি আজকে জানতে চান, মানুষের স্মৃতি কি কম্পিউটারে তোলা সম্ভব? উত্তর হবে— আংশিক হ্যাঁ, সম্পূর্ণ না। কিছু কিছু স্মৃতি সংরক্ষণ, কিছু ভাবনা বিশ্লেষণ এখন সম্ভব হলেও, পুরো চেতনা বা স্মৃতির সফল আপলোড এখনো কল্পনার পর্যায়েই রয়েছে।
আমরা ভবিষ্যতের দিনগুলোতে হয়তো এমন এক সময়ের সাক্ষী হব, যখন এই উত্তরগুলো আরও স্পষ্ট হবে।
আজকের জন্য এইটাই জানা থাকুক, বিজ্ঞান আমাদের পথ দেখায়, তবে প্রত্যেক স্বপ্নপূরণের পথে থাকে অনেক প্রশ্ন আর অনেক লড়াই।