27/03/2025
শবে কদরের সম্ভাব্য তারিখ ও ২৭তম রাতের বিশেষ গুরুত্ব
শবে কদর এমন একটি রাত, যা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হাদিস থেকে জানা যায়, এটি ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতের মধ্যে কোনো একটিতে হতে পারে। তবে অধিকাংশ সাহাবী ও উলামায়ে কেরামের মতে, ২৭তম রাতেই শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
শবে কদর নির্দিষ্ট কোন রাত তা নিয়ে বিভিন্ন হাদিস
🔹 বিজোড় রাতগুলোতে খোঁজার নির্দেশ:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন—
"তোমরা শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।" (সহিহ বুখারি: ২০২৩, সহিহ মুসলিম: ১১৬৭)
🔹 ২৭তম রাতের অধিক সম্ভাবনা:
উবাই ইবনে কা’ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) শপথ করে বলেন—
"আল্লাহর কসম! এটি সেই রাত, যা আমাদের নবী ﷺ আমাদের ইবাদতের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন—এটি ২৭তম রাত।" (সহিহ মুসলিম: ৭৬২)
🔹 ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যাখ্যা:
তিনি বলেন, "আল্লাহ তাআলা কুরআনে সাতটি স্থানে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং এই রাত রমজানের মধ্যে রয়েছে, যা ৭ম মাস (রজব) থেকে গণনা করলে ২৭তম রাতে পড়ে।"
শবে কদরের মর্যাদা: কুরআনের আলোকে
আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ:
“নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো, শবে কদর কী? শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা আল-কদর: ১-৩)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, এই এক রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম!
---
সাহাবায়ে কেরামের শবে কদরের আমল
১. উবাই ইবনে কা’ব (রাদিয়াল্লাহু আনহু):
তিনি শবে কদরের রাত কাটাতেন অব্যাহত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও ইস্তিগফারে।
২. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু):
তিনি বলতেন, "যে ব্যক্তি শবে কদরের রাত ইবাদতে কাটাবে, সে যেন তাহাজ্জুদ ও অধিক পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করে।"
৩. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা):
তিনি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করেন, "হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি শবে কদর পাই, তাহলে কী দোয়া পড়বো?"
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি"
অর্থ:
"হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।" (তিরমিজি: ৩৫১৩)
৪. ওমর ইবনে খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু):
তিনি এই রাতে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কাঁদতেন এবং বলতেন—
"হে আল্লাহ! তুমি আমাদের গুনাহ ক্ষমা করো এবং আমাদের নেক আমল কবুল করো।"
---
শবে কদরের আমল
✅ নফল নামাজ:
রাসূল ﷺ বলেন—
"যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে শবে কদরে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।" (সহিহ বুখারি: ২০১৪, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)
✅ বিশেষ দোয়া:
"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন..." দোয়া পড়া
নিজের ও উম্মাহর জন্য বেশি বেশি দোয়া করা
✅ কুরআন তিলাওয়াত:
এই রাতে বেশি পরিমাণে কুরআন পড়া এবং অর্থ ও তাফসির বোঝার চেষ্টা করা।
✅ ইস্তিগফার ও তওবা:
নিজের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য খাঁটি অন্তরে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
✅ দরুদ শরীফ:
নবী ﷺ-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা এক মহামূল্যবান আমল।
✅ দান-সদকা:
শবে কদরের রাতের দান ৭০ গুণ বেশি সওয়াবের কারণ হয়!
---
উপসংহার: আজকের রাত কি শবে কদর?
যদি আজকের রাত ২৭ রমজানের রাত হয়, তাহলে এটি শবে কদর হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রাত। যদিও নির্দিষ্ট রাত সম্পর্কে নিশ্চিত বলা যায় না, তবে নবী ﷺ-এর ইঙ্গিত, সাহাবীদের মতামত এবং ইমামদের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে ২৭তম রাতের গুরুত্ব বেশি।
সুতরাং, আজকের রাতকে শবে কদর ধরে নিয়ে সর্বোচ্চ ইবাদত করা উচিত।
আমাদের করণীয়:
🔹 রাতের শুরু থেকেই নফল নামাজ ও ইবাদতে মগ্ন হওয়া
🔹 নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
🔹 বেশি বেশি দোয়া করা, বিশেষত "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন..." দোয়াটি পড়া
🔹 সম্ভব হলে কিছু দান-সদকা করা
🔹 কুরআন তিলাওয়াত ও দরুদ শরীফ পাঠে সময় ব্যয় করা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বরকতময় রাতে সর্বোচ্চ ইবাদত করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের গুনাহ মাফ করে জান্নাতের উপযুক্ত বানান। আমীন।