16/07/2025
তালেবান কিভাবে আফগানিস্তানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করলো?
🔹১. তালেবান কী? এর উৎপত্তি কোথা থেকে?
“তালেবান” শব্দটি এসেছে "তালিব" (طلبة) থেকে, অর্থাৎ ইসলামি জ্ঞানচর্চাকারী ছাত্র।
তালেবান গঠিত হয় ১৯৯৪ সালে, কান্দাহার অঞ্চলে মাওলানা মোল্লা ওমর (رحمه الله) এর নেতৃত্বে।
সোভিয়েত পতনের পর আফগানিস্তানে বিভিন্ন যুদ্ধবাজ দল (ওয়ারলর্ড) বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়। তখন ইসলামি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাই ছিল তালেবানের মূল উদ্দেশ্য।
🔹 ২. প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসা (১৯৯৬–২০০১)
১৯৯6 সালে তালেবান কাবুল দখল করে আফগানিস্তানের ৯০% এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনে।
তারা "ইসলামি আমিরাত আফগানিস্তান" নামে শাসনব্যবস্থা চালু করে।
শরিয়াহ আইন অনুযায়ী বিচারব্যবস্থা, নারীদের পর্দা, হাদ শাস্তি ও দাওয়াহ প্রতিষ্ঠা করে।
🔸 তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি—শুধু পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বীকৃতি দিয়েছিল।
🔹 ৩. তালেবান পতন (২০০১): আমেরিকান আগ্রাসন
১১ সেপ্টেম্বর ২০০১: নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলা ঘটে। আমেরিকা এর জন্য ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদাকে দায়ী করে।
তালেবান ওসামাকে আশ্রয় দেওয়ায় আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করে।
তালেবান ক্ষমতা হারায়, এবং পার্বত্য এলাকায় চলে যায়।
🔹 ৪. দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনরুত্থান (২০০2–2021)
তালেবান ২০ বছর ধরে গেরিলা যুদ্ধ, দাওয়াহ, শিক্ষা ও রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে চলে।
তারা আমেরিকা সমর্থিত করাপ্ট সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে।
স্থানীয় জনসমর্থন, মাদ্রাসাভিত্তিক নেটওয়ার্ক, ও কুরআন-হাদীসভিত্তিক বিচারব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করে।
🔹 ৫. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি (২০২০, দোহা চুক্তি)
২০২০ সালে তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে দোহা চুক্তি হয় (কাতারে)।
এতে আমেরিকা সম্মত হয়, যে তারা ধাপে ধাপে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেবে এবং তালেবানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।
🔹 ৬. তালেবান পূর্ণ বিজয় (আগস্ট ২০২১)
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কোনো রক্তপাত ছাড়াই কাবুল দখল করে।
প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালিয়ে যান।
তালেবান পুনরায় ঘোষণা করে:
“Islamic Emirate of Afghanistan” (ইসলামী আমিরাত আফগানিস্তান)
তারা নতুন শুরা গঠন, মন্ত্রণালয় পুনর্বিন্যাস ও শরীয়াহভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা চালু করে।
কুরআন-হাদীস ভিত্তিক তাদের মূলনীতি:
وَلَن يَجْعَلَ ٱللَّهُ لِلْكَـٰفِرِينَ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًۭا
“আল্লাহ কখনো কাফেরদের জন্য মুমিনদের উপর কর্তৃত্ব রাখবেন না।”
📚 (সূরা নিসা: ১৪১)
الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ
“ইমাম (শাসক) ঢালের মতো; তার পেছনে যুদ্ধ করা হয় এবং তার মাধ্যমেই নিরাপত্তা পাওয়া যায়।”
📚 (সহীহ বুখারী)
✅ তালেবানের শক্তির কারণ:
ইসলামী আকীদায় অটল থাকা
সুসংগঠিত নেতৃত্ব ও আজম
দাওয়াহ ও সামাজিক সেবামূলক কাজ
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
আমেরিকার দীর্ঘ যুদ্ধ ক্লান্তি ও অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা
❗ চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনাও আছে:
নারী শিক্ষা ও অধিকারের প্রশ্ন
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া
অর্থনৈতিক অবরোধ
কিছু কঠোর নীতিমালার কারণে মানবিক সংকট
তবে তালেবান বলছে:
"আমরা ধাপে ধাপে ইসলাম বাস্তবায়ন করব — সহিংসতা নয়, ধৈর্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে।"
Likhboi Protidin