23/08/2025
একবার আমাদের চারপাশের পৃথিবীর দিকে তাকাই। বিলবোর্ড, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিড—সবাই আমাদের একটাই বার্তা দিচ্ছে: তোমার যা আছে, তা যথেষ্ট নয়।
সুখ পেতে হলে তোমার চাই নতুন মডেলের ফোন, আরও দামী পোশাক, আরও বড় বাড়ি, আরও বিলাসবহুল ছুটি। আমরা এই মরীচিকার পেছনে দৌড়াচ্ছি, একটা পাওয়ার পর আরেকটার পেছনে। কিন্তু এই দৌড় কি আমাদের আসলেই সুখী করছে, নাকি আরও বেশি ক্লান্ত আর অতৃপ্ত করে তুলছে?
এই অন্তহীন চাহিদার দৌড়ের বিপরীতে ইসলাম আমাদের এক অসাধারণ জীবনদর্শনের কথা বলে। তা হলো ‘যুহদ’—অর্থাৎ, সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর জীবন।
যুহদ মানে ফকিরি বা দারিদ্র্য নয়। যুহদ মানে দুনিয়াকে বর্জন করাও নয়। যুহদ হলো এমন এক জীবনব্যবস্থা, যেখানে দুনিয়া আপনার হাতে থাকবে, কিন্তু অন্তরে প্রবেশ করবে না। আপনার সুখ, আপনার প্রশান্তি কোনো বস্তু বা জাগতিক অর্জনের উপর নির্ভরশীল থাকবে না। এই জীবনদর্শনের সেরা উদাহরণ হলেন আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)।
তিনি ছিলেন সমগ্র আরবের নেতা, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তিনি চাইলেই পাহাড়কে সোনায় রূপান্তরিত করে নিতে পারতেন। কিন্তু তাঁর জীবন কেমন ছিল? তাঁর ঘরে এমনও দিন যেত যখন চুলায় আগুন জ্বালানোর মতো কিছুই থাকত না। তাঁর বিছানা ছিল একটি খেজুর পাতার চাটাই, যার দাগ তাঁর পিঠে বসে যেত।
একদিন উমর (রা.) তাঁর ঘরে এসে এই অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, পারস্য ও রোমের সম্রাটরা ভোগ-বিলাসে ডুবে আছে, আর আপনি আল্লাহর নবী হয়েও এই সাধারণ জীবন যাপন করছেন!”
উত্তরে নবীজি (ﷺ) বলেছিলেন, “হে উমর, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তাদের জন্য থাকুক দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখিরাত?” [১]
এই একটি বাক্যই সাদাসিধে জীবনের পুরো দর্শনকে তুলে ধরে। যার দৃষ্টি আখিরাতের দিকে নিবদ্ধ, দুনিয়ার চাকচিক্য তাকে আর আকৃষ্ট করতে পারে না। সে বোঝে যে, এই জীবনটা একটা মুসাফিরখানা মাত্র। এখানে এত বাহুল্য আর বোঝা বাড়িয়ে লাভ কী?
একটি সাদাসিধে জীবন আধুনিক মনস্তত্ত্বের দিক থেকেও প্রশান্তিদায়ক। যখন আপনার চাহিদা কম, তখন আপনার মানসিক চাপও কম। অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করার মতো বিষাক্ত প্রতিযোগিতা থেকে আপনি মুক্ত। আপনার যা আছে, তা নিয়ে আপনি যখন কৃতজ্ঞ (শুকরিয়া আদায়কারী) হতে পারবেন, তখন দেখবেন, আপনার চেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ নেই।
নবীজি (ﷺ) বলেছেন, “সফলকাম সেই ব্যক্তি, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিযিক দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তাতে তুষ্ট রেখেছেন।” [২]
আজকের এই ছুটির সকালে হয়তো আমাদের মন নতুন কিছু কেনার জন্য বা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য আকুল হচ্ছে। কিন্তু তার আগে কি আমরা একবার নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি—আমার অন্তরের প্রশান্তির জন্য কি আসলেই এই জিনিসটা প্রয়োজন? নাকি আমার যা আছে, তাতেই শুকরিয়া আদায় করার মধ্যে আসল শান্তি লুকিয়ে আছে?
আসুন, জীবন থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস আর অন্তহীন চাহিদার বোঝাগুলো একটু একটু করে কমাতে শুরু করি। দেখবেন, জীবন যত হালকা হবে, আপনার অন্তরও তত বেশি প্রশান্তিতে ভরে উঠবে, ইন শা আল্লাহ।
রেফারেন্স:
[১] সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ৪৯১৩ (ভাবানুবাদ)
[২] সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১০৫৪
সুকুন পাবলিশিং
শব্দে আঁকা স্বপ্ন…