28/07/2025
গরুর ঘানি: বাংলার ঐতিহ্যের ঘূর্ণায়মান চাকা
গ্রামের প্রান্তরে ধুলোমাখা পথের পাশে এক সময় প্রতিটি পাড়ায়-পাড়ায় দেখা যেত একটি পরিচিত দৃশ্য—গরুর ঘানি। ঘানি ঘোরে, ঘূর্ণায়মান সেই চক্রে তৈরি হয় খাঁটি সরিষার তেল। বাংলার গ্রামীণ জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই গরুর ঘানি, যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে আধুনিক যন্ত্রের চাপে।
কী এই গরুর ঘানি?
গরুর ঘানি হলো এক ধরনের প্রাচীন যান্ত্রিক পদ্ধতি, যেখানে একটি গরু কাঠের বা লোহার তৈরি একটি বড় চাকার চারপাশে ঘুরে ঘুরে ঘানি চালায়। এই ঘানিতে মূলত তেলবীজ—যেমন সরিষা, তিল, কিংবা সূর্যমুখী—চেপে তেল বের করা হয়। ধীরে ধীরে এবং চাপের ভারে ঘানি থেকে যে তেল বের হয়, তা হয় একেবারে খাঁটি ও প্রাকৃতিক।
বিশুদ্ধতার প্রতীক
গরুর ঘানির তেলে থাকে না কোনো কেমিক্যাল, হিট প্রসেস বা সংরক্ষণ উপাদান। এতে প্রাকৃতিক ঘ্রাণ, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। সরিষার তেলের ক্ষেত্রে, গরুর ঘানিতে ভাঙা তেল হার্টের জন্য ভালো, ত্বকের যত্নে কার্যকর এবং রান্নার স্বাদেও অনন্য।
পরিশ্রম আর ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি
একটা ঘানি ঘোরাতে সময় লাগে। গরু ধীরে ধীরে ঘুরে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই ছন্দে ঘুরে চলে। এই পরিশ্রম আর ধৈর্য যেন বাংলার কৃষকের জীবনেরই প্রতিফলন। প্রতিটি ফোঁটা তেলে মিশে থাকে গরু ও ঘানিওয়ালার পরিশ্রমের গল্প।
আধুনিকতার ছাপ ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য
বর্তমানে মেশিনের জোয়ারে এই ঘানির ব্যবহার খুব কমে গেছে। যান্ত্রিক ভাঙাই এখন সর্বত্র। কিন্তু সেই খাঁটি স্বাদ, বিশুদ্ধতা আর ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই যারা এখনও গরুর ঘানি চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা শুধু তেল নয়, বরং আমাদের ইতিহাস আর সংস্কৃতির একটা বড় অংশকেই টিকিয়ে রেখেছেন।
শেষ কথা
গরুর ঘানি শুধু একটি পদ্ধতি নয়, এটি আমাদের অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ। আসুন, আমরা সবাই এই প্রাচীন কৌশল ও এর বিশুদ্ধ পণ্যকে মূল্য দেই, সংরক্ষণ করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দেই একটি খাঁটি বাংলাদেশের গল্প।