28/05/2025
ডা. তাসনিম জারার ট্রাকে করে চট্টগ্রাম যাওয়ার ভিডিও আমাকে গতকাল থেকেই ভাবাচ্ছে। এই তাসনিম জারাকে নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, বট এবং প্রোপাগাণ্ডা পেইজ গুলা এহেন নোংরা কনটেন্ট নাই যে বানায় নাই, এহেন অশ্লীল এবং অসম্মানজনক কমেন্ট নাই যে করে নাই। কিন্তু জারা আসলে কি ডিজার্ভ করেন? একটু ভাবি!
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে (MBBS) ডিগ্রি অর্জন করে পড়তে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এভিডেন্স-বেইজড হেলথ কেয়ার বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (MSc) অর্জন করেন, যেখানে তিনি ডিস্টিংকশনসহ উত্তীর্ণ হন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (RCOG) থেকে জারা DRCOG ডিগ্রি অর্জন করেন, যা প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যায় বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রদান করা হয়। এরপর যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস থেকে MRCP (Member of the Royal College of Physicians) ডিগ্রি অর্জন করেন, যুক্তরাজ্যের হায়ার এডুকেশন একাডেমির অ্যাসোসিয়েট ফেলো (AFHEA) হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
ডা. তাসনিম জারা বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও, তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজার হিসেবে ৫ম এবং ৬ষ্ট বর্ষের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়ান, প্রশিক্ষন দেন।
আমরা জারাকে তার ইউটিউব আর ফেইসবুকের ভিডিগুলা থেকে বেশি চিনেছি। খুবই সহজ সরল সাবলীল বাংলায় জারা অনেক কনটেন্ট বানিয়েছেন, যেগুলো বাংলাদেশের শিক্ষিত, সল্পশিক্ষিত সবধরনের মানুষ কানেক্ট করতে পারে। এছাড়া উনি "সহায় হেলথ" নামক একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কো ফাউন্ডার, যা বাংলাভাষী জনগণের জন্য প্রমাণভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা তথ্য প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কোভিড আউটব্রেকের শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস নিয়ে সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়ে এসেছেন জারা। ২০২১ এর ২ জুন জি-৭ গ্লোবাল ভ্যাক্সিন কনফিডেন্স সামিটে তাকে ‘ভ্যাক্সিন লুমিনারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বৃটিশ সরকার।
জারা যখন রাজনীতিতে আসলেন তখন দেশে একটা হাইপ চলতেছিল, সবাই তখন একটা করে রাজনৈতিক দল খুলে বসবে এমন একটা উত্তেজনা! এক জুলাই গিয়ে আরেক জুলাই আসার আগেই অধিকাংশ মানুষই সেই "আই হেইট পলিটিক্স" মেন্টালিটিতে ফেরত চলে গেছে। স্বাভাবিক। রাজনীতি সবার জন্য না।
জারা কিন্তু এখনো লেগে আছেন। তাসনিম জারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদটি দলের শীর্ষ নির্বাহী পদগুলোর একটি, যা তিনি ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পালন করছেন। এনসিপি গঠনের পূর্বে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর তিনি সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০২৫ এর মার্চ মাসে তাসনিম জারা দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে, সবাই আমরা হাসাহাসি করছিলাম। বলছিলাম, এদের কি দলের গ্রুপ চ্যাট নাই! কিন্তু এই স্ট্যাটাস নিজ দলের মানুষের রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে ব্যক্তি পর্যায়ে জারার জোরালো অবস্থান।
একবার আবার ভাবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, দেশের সবচেয়ে মেধাবীরা যেখানে চান্স পায় বলে আমরা জানি। অক্সফোর্ড, বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবীরা যেখানে চান্স পায় বলে আমরা মানি। সেই ব্যাকগ্রাউন্ডের মেয়ে এই তাসনিম জারা। আজকে এনসিপির অন্যতম প্রভাবশালী ও নীতিনির্ধারক নেত্রী। বিদেশে পড়াশোনা করে যে দেশে ফিরে আসছে মানুষের জন্য কাজ করবে বলে।
জারা আসলে এখন পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জন করছেন। ইউকেতে জারার খুবই গোছানো একটা জীবন ছিল। এমন জীবন আমাদের দেশের পলিটিকাল নেতারা কালো টাকা দিয়ে বানানোর চেষ্টা করে আসছে সারাজীবন। কিন্তু জারা বাংলাদেশে ফেরত আসছেন, দেশের মানুষকে কাছে আসছেন। আমি চাই তিনি যেন সফল হন। তার ভিশন সফল হোক। আমি চাই আমার জীবদ্দশায় যেন আমাকে দেখতে না হয় এই তাসনিম জারা দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছে, ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছে।
ডা. তাসনিম জারা, আপনার নামে এই সত্য প্রশংসাটুকু করে আমার হালকা লাগতেছে! আপনি অনেক সম্মান এবং ভালোবাসা ডিজারভ করেন।