![ঈমান থাকা সত্ত্বেও যে কারণে জাহান্নামীআশরাফুল ইসলাম [দক্ষিণ শালিকা, মেহেরপুর]ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেনন...](https://img3.medioq.com/900/290/1326677529002900.jpg)
02/07/2025
ঈমান থাকা সত্ত্বেও যে কারণে জাহান্নামী
আশরাফুল ইসলাম [দক্ষিণ শালিকা, মেহেরপুর]
ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। বরং তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। মানুষের উপর আবশ্যকীয় বিধানগুলি তারা ফরয ও ওয়াজিব হিসাবে পালন করবে এবং সুন্নাত-নফল ইবাদতগুলি মীযানের পাল্লায় ফরযের সম্পূরক হিসাবে গণ্য হবে। তথাপি কেউ আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি ঈমান বিধ্বংসী কোন পাপে জড়িয়ে পড়লে তার সমস্ত সৎআমল বরবাদ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় একনিষ্ঠ তওবা ব্যতীত তার মৃত্যু হলে পরকালীন জীবনে আদি নিবাস জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামই তার হবে ঠিকানা। আলোচ্য প্রবন্ধে এমন কিছু পাপের কথা উল্লেখ করা হ’ল, যার কারণে ঈমান থাকা সত্ত্বেও মানুষকে জাহান্নামে যেতে হবে।
১.আল্লাহর সাথে শিরক করা : দুনিয়াতে যত পাপ আছে তন্মধ্যে বড় পাপ শিরক। শিরক হ’ল আল্লাহর সাথে যে কোন প্রকার কথা বা কাজের মাধ্যমে অংশী স্থাপন করা। আল্লাহ বলেছেন, لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ ‘আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না। নিশ্চয়ই শিরক মহাপাপ’ (লোকমান ৩১/১৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيْمًا ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করল, সে মহাপাপের মিথ্যা রটনা করল’ (নিসা ৪/৪৮)।
শিরকের পাপ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,الْكَبَائِرُالْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، أَوْ قَالَ: الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ ‘সবচেয়ে বড় পাপ হ’ল (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) পিতা-মাতার অবাধ্যতা (৩) মিথ্যা শপথ করা’।[1]
শিরককারীর সমস্ত আমলকে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের মাঠে ধ্বংস করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা ১৮জন রাসূলের নাম উল্লেখ করার পর বলেছেন,وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ- ‘যদি তারা শিরক করত, তাহ’লে তাদের সব সৎকর্ম বিফলে যেত’ (আন‘আম ৬/৮৮)। সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলেছেন,وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ- ‘অথচ (হে নবী!) নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী (নবীদের) প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছিল, যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে অবশ্যই তোমার সমস্ত আমল বিফলে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)।
অতঃপর শিরক মানুষের সৎআমলকে বিনষ্ট করে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ- ‘বস্ত্তত যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদা ৫/৭২)।
তথাপি আল্লাহ সব পাপকে ক্ষমা করলেও শিরকের পাপকে ক্ষমা করেন না। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না, এছাড়া অন্যান্য পাপ তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন’ (নিসা ৪/৪৮)। হাদীছে কুদসীতে এসেছে,قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে শিরক না করে থাক, তাহ’লে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব’।[2]
শিরকের পরিণাম সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল’।[3]
এজন্যই রাসূল (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়মেনে পাঠানোর সময় ১০টি উপদেশ দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে প্রথমটিই হ’ল,لا تُشْرِكْ بالله شيْئاً وَإنْ قُتِلْتَ وحُرِّقْتَ- ‘তোমাকে হত্যা করলে বা আগুনে পুড়িয়ে ফেললেও আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক করবেনা’।[4]
প্রিয় পাঠক! একটু ভাবুন, শিরক কত কঠিন ও ভয়াবহ গুনাহ, যে রাসূল (ছাঃ)-এর অমীয় নির্দেশে বললেন, মরে যাও তবুও শিরক করোনা, জ্বলে পুড়ে যাও তবুও শিরক করোনা।
আল্লাহ আমাদের সম্পর্কে বলেছেন,وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ- ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে। অথচ তারা শিরক করে’ (ইউসুফ ১২/১০৬)। এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘যেসব মুসলিম ঈমান সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রকার শির্কে লিপ্ত রয়েছে তারাও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য যেসব বিষয়ের আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে সবচাইতে বিপজ্জনক হচ্ছে ছোট শিরক। ছাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ‘রিয়া’ (লোক দেখানো ইবাদত) হ’ল ছোট শিরক’।[5] অন্য হাদীছে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করাকেও শিরক বলা হয়েছে’।[6] আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মানত করা এবং যবেহ্ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে বর্তমান সমাজের মানুষ নানাভাবে বিভিন্ন শিরকের সাথে জড়িত। আল্লাহ আমাদের শিরক থেকে বাঁচার তাওফীক দিন।
২. বিদ‘আত করা : শিরকের ন্যায় বিদ‘আতও একটি ভয়াবহ অপরাধ। যা বান্দার আমলসমূহ বিনষ্ট করে দেয়, যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়। ইসলামী শরী‘আতে ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে নতুনভাবে সৃষ্ট সকল কিছুই বিদ‘আত। আর বিদ‘আত হ’ল ভ্রষ্টতা, যা জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي خُطْبَتِه، وَشَرَّ الْأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلَّ ضَلَالَةٍ فِيْ النَّارْ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ভাষণ দিতেন তখন তিনি বলতেন, দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। আর প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[7]
আমাদের সমাজে বিদ‘আত নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকে বিদ‘আত নিয়ে হাসি-তামাশা পর্যন্ত করেন। তারা বলেন, যার কোন দাঁত নেই সেটিই হ’ল বিদ‘আত। অথচ রাসূল (ছাঃ) জীবনের প্রতিটি খুৎবাতে বিদ‘আত হ’তে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তাহ’লে এটি কত ভয়ংকর পাপ।
সমস্যা হ’ল আমাদের সমাজের মাওলানারা বিদ‘আত কাকে বলে সেটাই জানেনা। তারা বিদ‘আতের শাব্দিক অর্থ ‘নতুন কিছু সৃষ্টি করা’ নিয়েই হাসি-তামাশা করে। কিন্তু বিদ‘আতের একটি পারিভাষিক অর্থ আছে। ইমাম শাত্বেবী (রহঃ) বলেন, اَلْبِدْعَةُ طَرِيْقَةٌ فِيْ الدِّيْنِ مُخْتَرَعَةٌ، تُضَاهِيْ الشَّرْعِيَّةِ বিদ‘আত হ’ল দ্বীনের মধ্যে নবআবিষ্কৃত একটি পথ, যা দেখতে শরীআতের মতই’।[8] অথচ তা শরীআত নয়।
ইবনু রজব (রহঃ) বলেন,وَالْمُرَادُ بِالْبِدْعَةِ مَا أُحْدِثَ مِمَّا لَا أَصْلَ لَهُ فِيْ الشَّرِيْعَةِ يَدُلُّ عَلَيْهِ- বিদ‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল, এমন কোন কিছু আবিষ্কার করা যে বিষয়ে শরীআতে এমন কোন ভিত্তি নেই যা সেটিকে সাব্যস্ত করে।[9] ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,أَنَّ الْبِدْعَةَ فِيْ الدِّيْنِ هِيَ مَا لَمْ يَشْرَعُهُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَهُوَ مَا لَمْ يَأْمُرْ بِهِ أَمْرٌ إِيْجَابٌ وَلَا اِسْتِحْبَابٌ ‘দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত হ’ল আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাঃ) যা বৈধ করেননি। আর যে বিষয়ে আদেশ করেননি তা ওয়াজিব বা মুস্তাহাব কোনটিই নয়’।[10]
বিদ‘আত মূলত রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধিতা করা এবং তাঁর আনীত শরীআতকে অবজ্ঞা করার নামান্তর। কেননা বিদ‘আতী দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে বোঝাতে চায়, এটি কল্যাণকর। অথচ তা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম জানতেন না। যেমনটি ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন বিদ‘আত আবিষ্কার করল এবং সেটিকে ভাল কিছু মনে করল। তাহ’লে সে ধারণা করল মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর রিসালাত পুরোপুরি আমাদের নিকটে পৌঁছাননি। বরং খেয়ানত করেছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে যা দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিলনা, আজকেও তা দ্বীন হিসাবে গণ্য হবেনা’।[11]
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,اِتَّبِعُوْا وَلاَ تَبْتَدِعُوْا فَقَدْ كُفِيْتُمْ كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ- ‘তোমরা আনুগত্য করো, বিদ‘আত করোনা। এটিই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। জেনে রাখো প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[12]
বিদ‘আতের ক্ষতিকর দিকসমূহের মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হ’ল - (১) বিদ‘আতী আমল আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তার পিছনে যতই পরিশ্রম করা হউক না কেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهْوَ رَدٌّ- ‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান হবে)’।[13] (২) বিদ‘আত একটি ভয়াবহ পাপ। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,الْبِدْعَةُ أَحَبُّ إلَى إبْلِيسَ مِنْ الْمَعْصِيَةِ؛ فَإِنَّ الْمَعْصِيَةَ يُتَابُ مِنْهَا وَالْبِدْعَةَ لَا يُتَابُ مِنْهَا ‘ইবলীসের কাছে অন্যান্য পাপের চেয়ে বিদ‘আত বেশি প্রিয়। কারণ মানুষ অন্যান্য সকল পাপ থেকে তওবা করলেও (নেকীর কাজ মনে করে) বিদ‘আত থেকে তওবা করেনা’।[14] (৩) বিদ‘আতীর তওবা কবুল হবেনা, যতক্ষণ না সে তার বিদ‘আত ছেড়ে দিবে’।[15] (৪) বিদ‘আতী হাউযে কাওছারের পানি পান করতে পারবে না।[16] ইত্যাদি।
৩. উপকার করে খোঁটা দেওয়া : মুসলিম ভাইয়ের উপকার করা নেকীর কাজ এতে কোন সন্দেহ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।[17]
উপরের সকল কর্মই শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকালের জন্যই হ’তে হবে। অথচ আমরা কারো উপকার করলে সেটা মনে রাখি এবং ভাবনাটা এমন থাকে, সে আমার কাছে ঋণী। আর সেজন্য যখন উক্ত ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে সাড়া না দেয়, তখন আমরা খোঁটা দিয়ে বসি। আমি তোমাকে অমুক অমুক উপকার করেছি। অথচ তুমি আমার ডাকে সাড়া দিলেনা! আর এমনটা করতেই হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে। দুনিয়াতে অসংখ্য মানুষ আছে যারা উক্ত পাপে নিমজ্জিত। অথচ এই পাপ মানুষকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করে। আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ- ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী আর পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[18] সুতরাং উপকার একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হ’তে হবে।
৩.অহংকার করা : মানুষ অতি দুর্বল প্রাণী। আল্লাহ বলেন,يُرِيْدُ اللهُ أَنْ يُخَفِّفَ عَنْكُمْ وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيْفًا- ‘আল্লাহ তোমাদের উপর বিধান লঘু করতে চান। (কেননা) মানুষ দুর্বল রূপে সৃষ্ট হয়েছে’ (নিসা ৪/২৮)।
মানুষ তার প্রত্যেকটি বিষয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী। জীবনের প্রথম গোসল এবং শেষ গোসল সে নিজে করতে পারেনা। দেহের প্রতিটা অঙ্গই একটি আরেকটির মুখাপেক্ষী। যে কিনা সামান্য অসুস্থ হলেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আর চলতে ফিরতে পারেনা, উঠে দাঁড়াতে পারেনা। এই মানুষই পৃথিবীতে এসেছে রিক্ত হস্তে এবং যাবেও রিক্ত হস্তে। তাহ’লে কিভাবে সে অহংকার করতে পারে? অহংকার তো কেবল সৃষ্টিকর্তারই সাজে। আল্লাহ বলেন,وَلَهُ الْكِبْرِيَاء فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ- ‘আর তাঁরই জন্য সকল বড়ত্ব নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে। আর তিনিই মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (জাছিয়াহ ৪৫/৩৭)।
আর এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অহংকারের পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[19] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ ‘আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত করব না? তারা হ’ল বিবাদকারী, বদ মেজাযী ও অহংকারী’।[20]
হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে, قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ- ‘মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার হ’ল আমার চাদর এবং মহত্ব হ’ল আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’।[21]
(ক্রমশঃ)